শেখ হাসিনা জনগণকে চাকর-বাকর মনে করতো: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘সারাদেশের মানুষ, ছাত্র-জনতা জেগে উঠেছিলো বলে এতো নির্মম, নিষ্ঠুর স্বৈরাচার হাসিনাকে পরাজিত করা সম্ভব হয়েছে। সে কী করেনি- বাংলাদেশকে মনে করেছে তার বাবার জমিদারি, জনগণকে সে চাকর-বাকর মনে করতো। তাই যারা তার এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করেছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যারা মিছিল সমাবেশ করেছে তাদের সে শান্তিতে থাকতে দেয়নি। কাউকে অদৃশ্য, খুন ও গুম করে দিয়েছে হাসিনা। সারাদেশে মানুষের মধ্যে হাহাকার, কান্না ও আতঙ্ক ছিল। এমন একটি দানবকে জনগণ বাংলাদেশ থেকে বিতাড়িত করেছে।’
মঙ্গলবার বিকালে বেগমগঞ্জ উপজেলা ও চৌমুহনী পৌরসভা বিএনপি অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের আয়োজনে ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। জনসমাবেশের উদ্বোধন করেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু।
রিজভী শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ প্রসঙ্গে বলেন, তারা বলেছিলো ভারতের সঙ্গে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক। তাই শেখ হাসিনা বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়িতে যাওয়ার সময় দেশ থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে গেছে। যারা বলেছিলো বকেয়া পরিশোধ না করলে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিবে, সেই আদানির সঙ্গে বিদ্যুতের অসম চুক্তি করে বাংলাদেশের টাকা লুট করার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রতি ইউনিট ১২টাকা করে নিয়েছেন যা আরও কম ছিল। যারা বিদ্যুৎ ও বাজারসহ বিভিন্ন সেক্টরে সিন্ডিকেট করেছে সেই সিন্ডিকেট থেকে টাকা নিয়ে স্বামীর বাড়িতে পালিয়ে গেছে সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা এটাই জনগণের প্রশ্ন। শ্রমিকের ঘামের টাকা, বিদ্যুতের টাকা, মেট্রোরেলের টাকা, বড় বড় মেঘা প্রজেক্ট ও শেয়ার বাজারের টাকা পাচার করেছে হাসিনা। আর এসব সিন্ডিকেটের খেসারত দিতে হচ্ছে জনগণকে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশ্যে রিজভী বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে আপনারা সরকার হয়েছেন, বিএনপি আপনাদের সমর্থন দিয়েছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্ররা দিয়েছে। বিএনপি এখনও আপনাদের সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। আপনি বলেছেন বর্ডারে শুল্ক কমিয়ে দিবেন, শুনেছি দিয়েছেনও তাহলে আলুর দাম কমছে না কেনো? আলুর কেজি কেনো ৭৫টাকা? আপনি কেনো আলু, পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচ, আটা ও চিনির দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। শুধু শুল্ক কমালে হবে না, সিন্ডিকেটগুলোও ভাঙতে হবে। সিন্ডিকেট ভাঙতে আপনাদের সমস্যা কোথায়? এখানে আপনার দুর্বলতা কোথায় এর রহস্য কী? অন্তর্বর্তীকালীন সকারের কাছে মানুষ এসব আশা করে না।
প্রধান উপদেষ্টাকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি নির্বাচনের কথা বলেন কিন্তু নির্বাচনের ডেডলাইন দিচ্ছেন না কেনো। অন্তর্বর্তী সরকার কী স্কুলের হেডমাস্টার যে সংস্কার করতে হলে প্রথমে পড়াতে হবে, পরে সিলেবাস করবেন তারপর পরীক্ষা নিবেন। তাদের একজন উপদেষ্টা বলেছেন নির্বাচন নির্বাচন করলে হবে, আমি উনার উদ্দেশ্যে বলতে চাচ্ছি আপনি কী প্রধান শিক্ষক। আমরা কী সংস্কার বুঝি না, আপনারা একটা প্রস্তাব দিতে পারেন, তা দিতে আপনাদের কত সময় লাগে। দ্রুত নির্বাচন এখনও সবার দাবি। তাহলে কী আমরা ধরে নিবো ৫ আগস্টের বিপ্লবের সাথে আপনারা তাল মিলিয়ে চলতে পারছেন না, বিপ্লবের চেতনা ধারণ করতে পারছেন না। আপনার এখনও অনেক স্বৈরাচারকে বিভিন্ন স্থানে বসিয়ে রেখেছেন।
নতুন উপদেষ্টা বানানোর প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, নতুন উপদেষ্টা দিতেও কারো সাথে পরামর্শ নেননি। যে মেয়েটি শেখ মুজিবের স্ত্রীর ভূমিকা পালন করেছে। বিতর্কিত মুজিবের ছবিতে অভিনয় করা মেয়েটির স্বামীকে আপনারা উপদেষ্টা করেছেন। বলছেন মেয়েটি ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে। আমিও ৪ আগস্ট পর্যন্ত কারাগারে রিমান্ডে ছিলাম। শামীমা বরকত লাকী আপার ছেলে নির্যাতনের শিকার হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। এখনও সে ঢাকায় চিকিৎসাধীন।
বেগমগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি কামাক্ষ্যা চন্দ্র দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল হকা আবেদ ও চৌমুহনী পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মহসিন আলমের সঞ্চালনায় প্রধান বক্তা ছিলেন, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম।
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির চট্টগ্রাম বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ব্যারিস্টার মীল হেলাল, জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম হায়দার বিএসসি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান, সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুর রহিম, এবিএম জাকারিয়া, শামীমা বরকত লাকীসহ অনেকে।
পরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহযোগিতা করা হয়।
(ঢাকাটাইমস/১২নভেম্বর/এমআর)
মন্তব্য করুন