বাড়িওয়ালা কেন বের করে দিলেন জ্যোতিকা জ্যোতিকে?

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের পতনের পর একের পর এক সমস্যায় অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি। প্রথমে হারান শিল্পকলার চাকরি, তারপর সিনেমা থেকে বাদ। দাওয়াত পাননি ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। সবশেষ তাকে বের করে দিয়েছেন বাড়িওয়ালাও। কিন্তু কেন?
এ সম্পর্কে জ্যোতিকা জ্যোতির ভাষ্য, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, হয়তো এটাই আমার অপরাধ।’ এর বেশিকিছু বলেননি অভিনেত্রী।
এর আগে সম্প্রতি ফেসবুকে দেওয়া একটি পোস্টে সেসব দুর্ঘটনার কথা জানান জ্যোতি, ৫ আগস্টের পর থেকে একে একে যা তার সঙ্গে ঘটেছে।
অভিনেত্রী লেখেন, ‘চাকরি থেকে ছাড়ানো হলো, আফসোস নাই । কিন্তু— এক সিনেমায় কাস্টিং করল, পরিচালক বাসায় এসে গল্প শোনালেন, জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে শুটিং। চরিত্র নিয়ে ভাবনা শুরু হলো, অনেকদিন পর শুটিং করব, ভালোলাগা শুরু হলো। অফিসিয়াল ফরমালিটিস কমপ্লিট করতে হবে এমন কথা হলো, তার ৩ দিন পরই পত্রিকায় দেখলাম এক বিদেশি অভিনেত্রীকে কাস্টিং করা হয়েছে আমার জায়গায়!’
‘ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল হবে, সেখানে কোনো না কোনো দায়িত্বে থাকার কথা ছিল। আগেও ছিলাম। পরে শুনলাম দায়িত্ব তো দূরের কথা, ফেস্টিভ্যালে আমি না গেলেই নাকি ভালো! এক আপার মেয়ের বিয়ে। গায়ে হলুদ, রং খেলা, বিয়ে, বউভাত। কতশত প্ল্যান! আরেক আমন্ত্রিত অভিনেত্রী গেস্ট বললেন জ্যোতিকা জ্যোতি এলে তিনি আসবেন না।’
বাসস্থান নিয়ে সমস্যার কথা উল্লেখ করে জ্যোতি লেখেন, ‘এপ্রিলে এক নতুন বাসায় শিফট করলাম। আমার কুকুর আছে বলে নিলাম। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করলেন কোনো সমস্যা নেই। বরং আমার পরিচয় তার বাসার ভাড়াটিয়া হিসেবে তাকে আরও গর্বিত করবে বলে জানালেন। জুলাইয়ে যখন দেশে তুমুল গণ্ডগোল তখন বাড়িওয়ালা বললেন আমার নিরাপত্তার দায়িত্ব তার। আগস্টের ৬ তারিখ জানালেন, আমাকে নিয়ে সমস্যা হচ্ছে তাই আমি যেন কুকুর নিয়ে বাসার নিচে না যাই। তবে তার কথায় মনে হলো বাসা ছেড়ে দিলেই ভালো।’
‘১৬ আগস্ট আমাকে ফোন করে বললেন আমি যেন আগামীকালই বাসা ছেড়ে দিই। তিনি কিছুতেই আমাকে সময় দিতে রাজি না। এক দিনের মধ্যে ওই বাসায় মালপত্র রেখে আমি আমার কুকুর নিয়ে একটি গেস্ট হাউজে প্রায় ১৩ দিন থেকে নতুন বাসা নিলাম। আমার এক বন্ধুকে পাঠিয়ে মালপত্র সরালাম দিন দশেক পর। কিন্তু তিনি আমার ২ মাসের অ্যাডভান্স ফেরত দিলেন না।’
জ্যোতির প্রশ্ন, ‘এগুলো আসলে কী? ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না! এসব পোহাতে হবে কতদিন??? নাকি দেশ ছেড়ে চলে যেতে হবে?’
জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিপক্ষে ছিলেন জ্যোতিকা জ্যোতি। যুক্ত ছিলেন ‘আলো আসবেই’ নামে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। যেখান থেকে আন্দোলন দমাতে নানা ফিকির-ফন্দি করেছেন জ্যোতিসহ আওয়ামী লীগ-ঘনিষ্ঠ আরও বেশ কয়েকজন তারকা।
৫ আগস্টের পর সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের কথোপকথনের কিছু স্ক্রিনশট ফাঁস হয়ে যায়। তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন জ্যোতিকা জ্যোতিরা। তারই মাঝে শিল্পকলায় গিয়ে হেনস্তা হন তিনি। শিল্পকলার গবেষণা ও প্রকাশনা বিভাগের পরিচালকের পদে ছিলেন এই অভিনেত্রী।
কিন্তু সরকার পতনের পর প্রথমবার অফিস করতে গিয়ে বসতেই পারেননি জ্যোতি। সহকর্মীদের তোপের মুখে তাকে বের হয়ে আসতে হয়। এরপরই তাকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সবশেষে ছাড়তে হয় বাড়ি। আরও কী কী তাকে ছাড়তে হবে, সেই প্রশ্ন এখন জ্যোতির মনে।
(ঢাকাটাইমস/২২ডিসেম্বর/এজে)

মন্তব্য করুন