ট্রাম্পের গাজা দখলের পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন: জাতিসংঘ

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১১:৩০
অ- অ+

গাজা দখল করে যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডকে জনশূন্য করার যে প্রস্তাব মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দিয়েছেন, তা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ ও বিশেষজ্ঞরা।

জেনেভা থেকে এএফপি এ খবর জানায়।

গত মঙ্গলবার এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প গাজা দখলের পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। এতে উপস্থিত ছিলেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। তিনি একে ‘গাজা সমস্যার সবচেয়ে ভালো সমাধান’ বলে প্রশংসা করেন।

তবে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার পর ট্রাম্প প্রশাসন কিছুটা নমনীয় অবস্থান নিতে শুরু করে। তবে বৃহস্পতিবার ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরাইল কাৎজ জানান, তিনি গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের ‘স্বেচ্ছায় প্রস্থান’ নিশ্চিত করতে সামরিক বাহিনীকে একটি পরিকল্পনা প্রস্তুত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক আইন কী বলছে?

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক প্রধান ফলকার তুর্ক বুধবার বলেন, আন্তর্জাতিক আইন এ বিষয়ে একদম পরিষ্কার। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনভাবে নিজের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের অধিকার আন্তর্জাতিক আইনের একটি মৌলিক নীতি এবং এটি সব রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে হবে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতও (আইসিজে) সম্প্রতি এ বিষয়ে নতুন করে জোর দিয়েছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দখলকৃত ভূখণ্ড থেকে জোরপূর্বক জনসংখ্যা স্থানান্তর বা তাদের বহিষ্কার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।’

কেন এটি অবৈধ?

বিশেষজ্ঞরা ১৯৪৯ সালের জেনেভা কনভেনশনের ৪৯ নম্বর অনুচ্ছেদকে উদ্ধৃত করেন, যেখানে বলা হয়েছে—

‘দখলকৃত ভূখণ্ড থেকে ব্যক্তিগত বা গণহারে জোরপূর্বক স্থানান্তর কিংবা সুরক্ষিত ব্যক্তিদের (ঢ়ৎড়ঃবপঃবফ ঢ়বৎংড়হং) দখলদার শক্তির ভূখণ্ডে বা অন্য কোনো দেশে পাঠানো নিষিদ্ধ, তা যে কারণেই হোক না কেন।’

যদিও এতে বলা হয়েছে, ‘দখলদার শক্তি জনগণের নিরাপত্তা বা জরুরি সামরিক প্রয়োজনে একটি নির্দিষ্ট এলাকা সম্পূর্ণ বা আংশিক খালি করতে পারে।’ তবে এর জন্য স্পষ্ট সীমাবদ্ধতা রয়েছে—

‘এই ধরনের স্থানান্তর দখলকৃত ভূখণ্ডের সীমানার বাইরে নেওয়া যাবে না, যদি না এর অন্য কোনো বিকল্প বাস্তবে সম্ভব য়।’

এ ছাড়া, ‘যুদ্ধের কার্যক্রম শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এভাবে স্থানান্তরিত ব্যক্তিদের তাদের নিজ বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে হবে।’

ফিলিস্তিনি অধিকৃত অঞ্চলে মানবাধিকারবিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফ্রান্সেস্কা আলবানেজ বলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ পরিকল্পনা ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন’। এটি জোরপূর্বক স্থানান্তরের আহ্বান, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ,’ তিনি বলেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সতর্ক করে বলেন, ট্রাম্পের প্রস্তাব ‘জাতিগত নির্মূল’ উসকে দিতে পারে।

জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, এটি হলো ‘একটি জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীর পরিকল্পিত নীতি, যাতে সহিংস ও আতঙ্কজনক উপায়ে অন্য একটি জাতিগত বা ধর্মীয় গোষ্ঠীকে নির্দিষ্ট ভূখণ্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।’

যদিও আন্তর্জাতিক আইনে জাতিগত নির্মূলকে আলাদা কোনো অপরাধ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি, তবে এর অন্তর্ভুক্ত কার্যক্রম মানবতাবিরোধী অপরাধ ও যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হতে পারে এবং এটি গণহত্যা কনভেনশনের আওতাতেও আসতে পারে।

ট্রাম্পের প্রস্তাবের আইনি দিক নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে জেনেভা গ্র্যাজুয়েট ইনস্টিটিউটের আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ভিনসেন্ট শেতাইল বলেন, ‘এটি শুনলে মনে হয়, হোয়াইট হাউসে কোনো আইনজীবী নেই।’তিনি বলেন, ‘এ ধরনের পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং একেবারে অযৌক্তিক।’

যদি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়, তবে এর সম্ভাব্য আইনি পরিণতি কী হতে পারে—এ বিষয়ে শেতাইল বলেন, ‘জোরপূর্বক স্থানান্তর ও সামরিক দখলের মধ্যে পার্থক্য বোঝা জরুরি।’

তিনি বলেন, ‘জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অনুমোদন ছাড়া সেখানে সেনা মোতায়েন করা হলে, তা আগ্রাসনের অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে, যা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) বিচারযোগ্য।’

অন্যদিকে, জোরপূর্বক স্থানান্তর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন এবং এটি যুদ্ধাপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। শেতাইল বলেন, যদি পুরো জনগোষ্ঠীকে সরিয়ে দেওয়া হয়, তবে এটি মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।

জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী ‘বিশ্বজনীন বিচারব্যবস্থা’ নীতির আওতায়, এই ধরনের অপরাধ বিশ্বের যেকোনো জায়গায় বিচারযোগ্য।

বিশেষজ্ঞরা আরও বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ‘স্বেচ্ছায়’ গাজা ছাড়ার বিষয়টি প্রমাণ করা কঠিন হবে, বিশেষ করে যখন খোদ ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে আন্তর্জাতিক আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। যদি মানুষ গাজা ছেড়ে চলে যায়, তবে তা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জোরপূর্বকই হবে।’

(ঢাকাটাইমস/৭ফেব্রুয়ারি/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বার্সেলোনায় যোগদানের সম্ভাবনা ছিল হামজার, ব্রিটিশ গণমাধ্যম
মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করলো ইলন মাস্কের ‘এক্স’
জামালপুরে মালচিং প্রযুক্তিতে চাষাবাদ, কম খরচে লাভবান কৃষক
‘চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রমাণ পেলে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে’
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা