প্রশাসনের সিদ্ধান্তহীনতা ও সেচপাম্প মালিকদের দৌরাত্ম্যে অনিশ্চিত সেচসুবিধা

রেজাউল ইসলাম বাবু, রংপুর
  প্রকাশিত : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৭:৩৫
অ- অ+

স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তহীনতা ব্যক্তিগত সেচপাম্প মালিকের দৌরাত্ম্যে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কৃষকের সেচসুবিধা। সেই সাথে এলজিইডির কর্মকর্তাদের চিঠি চালাচালিতে চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় পঞ্চাশ একর জমি অনাবাদি থাকার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় কৃষকরা এসব অভিযোগ করছেন। তারা বলছেন, রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার বড়বিল ঠাকুরদহ গ্রামে বিএডিসি বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সেচসুবিধা থাকলেও তারা দীর্ঘ দিন ধরে তা থেকে বঞ্চিত ছিলেন। ফলে সেচ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে শতক প্রতি ১০০ টাকা দরে পনি কিনে চাষাবাদ করতে হতো তাদের। এতে তাদের উৎপাদন খরচ অনেক বেড়ে যেত।

বাড়তি খরচের হাত থেকে বাঁচতে সেখানকার কৃষকেরা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সেচ সুবিধা চেয়ে আবেদন করলে তাতে সাড়া দিয়ে কৃষি জমিগুলো সেচসুবিধার আওতায় আনে কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু এর বিরুদ্ধে শুরু হয় নানা ষড়যন্ত্র। সম্প্রসারিত সেচ প্রকল্পের সেচনালা ভাঙচুরসহ দুটি রাইজার চুরি হয়ে যায়। এর পেছনে সেচপাম্প মালিকদের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ। তারা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্থানীয় সরকার বিভাগের (এলজিইডি) পাকা সড়ক খনন বোরিং করে সরকারি গভীর নলকূপের পাইপ স্থাপন করা হয়েছে মর্মে উপজেলা প্রশাসনে অভিযোগ করেন।

অপরদিকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ কৃষি জমিতে সেচ সরবরাহের জন্য গত ২৭ জানুয়ারি গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে ভূগর্ভস্থ পাইপ লাইন রাস্তা পারাপার পূর্বক সংযোগ প্রদানের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। এরপর গংগাচড়া উপজেলার এলজিইডির প্রকৌশলী গত ৩০ জানুয়ারি ইউএনওর কাছে দেওয়া প্রতিবেদনে বলেন, সেচকার্য সম্প্রসারিত করার জন্য তাদের পাকা সড়ক দিয়ে বোরিং করে সরকারি গভীর নলকূপের পাইপ স্থাপনে তাদের কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি।

বড়বিল ঠাকুরদহ গ্রামের কৃষক তোফাজ্জল হোসেন বলেণ, ‘আমরা দীর্ঘ বছর থেকে সরকারি সেচসুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিলাম। আমাদের স্থানীয় সেচ ব্যবসায়ীদের কাজ থেকে শতক প্রতি ১০০ টাকা করে পানি কিনে জমি চাষ করতে হতো। এখন শতক প্রতি চল্লিশ টাকায় বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সেচ সুবিধা পাওয়ায় আমাদের উৎপাদন খরচ কমেছে।’

কৃষক মোত্তাকিন অভিযোগ করেন,আমরা যাতে সরকারি সেচসুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকি এইটাই চান সেচ ব্যবসায়ীরা। তারা হীনস্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে আমাদের সরকারি সেচসুবিধা বাধাগ্রস্ত করছে।’

উপকারভোগী কৃষক মোজাম্মেল হোসেন জানান, সেচ নালার আউটলেট ভেঙে ফেলা রাইজার দুটি চুরি হয়ে যাওয়ায় পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। এ ব্যাপারে থানায় অভিযোগ করার পর বিষয়টি নিষ্পত্তি হলেও আউটলেট নির্মাণ রাইজার স্থাপনে এখনও বাধা দিচ্ছে স্থানীয় সেচ ব্যবসায়ীরা।

এ ব্যাপারে বিএডিসি (সেচ) গংগাচড়া উপজেলার উপ-সহকারী প্রকৌশলী রুবেল ইসলাম জানান, কৃষকেরা সরকারি যেকোনো প্রতিষ্ঠান থেকে সুলভ মূল্যে সেচসুবিধা গ্রহণ করতে পারেন। তিনি জানান, সংশ্লিষ্ট এলাকায় বিএডিসির কোনো সেচ স্কিম নেই।

রংপুর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মুসা বলেন,বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সড়কের তলদেশ দিয়ে সেচ পাইপ লাইন সম্প্রসারণ করলে আমাদের অবগত করা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তারা তা করেনি।’ তবে পাইপ লাইন সম্প্রসারণ করলেও সড়কের কোনো ক্ষতি হয়নি বলে জানান তিনি।

রংপুর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম মশিউর রহমান জানান. সেখানকার কিছু জমিতে সেচসুবিধা না থাকা এবং ইতিপূর্বে কাঁচা নালায় গভীর নলকূপের সেচসুবিধা গ্রহণ করলেও বর্তমানে তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেচবঞ্চিত কৃষকেরা। তাদের স্বল্প খরচে সেচসুবিধা প্রদানের জন্য ৪০০ মিটার সেচনালা বৃদ্ধি করা হয়। সড়কের নিচ দিয়ে পাইপ লাইন পারাপারের জন্য সড়কের কোনো ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা না থাকায় এবং চলতি বোন মৌসুমি সেচ প্রদানে কৃষকের চাহিদার কারণে দ্রুত সেচ নালা নির্মাণ করা হয়েছে।

গংগাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, ‘আমাকে গংগাচড়া এলজিইডির প্রকেীশলী যে চিঠিটা দিয়েছিলেন, সেটা আমি ফরোয়ার্ড করে জেলা প্রশাসক মহাদয়কে দিয়েছি।’

(ঢাকাটাইমস/৯ফেব্রুয়ারি/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
এবি ব্যাংকের ইফতার মাহফিল
ধর্ষণ নিয়ে বক্তব্যের জন্য ডিএমপি কমিশনারের দুঃখ প্রকাশ
ঘাটাইলে আগুনে ৯ দোকান পুড়ে ছাই
বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন ফুটবলার হামজা চৌধুরী
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা