চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানির ঘটনায় মির্জাপুর থানায় মামলা

চলন্ত বাসে ডাকাতি ও নারী যাত্রীদের শ্লীলতাহানির ঘটনার তিন দিন পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানায় মামলা হয়েছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে এই মামলা করা হয়। মামলায় অজ্ঞাতনামা আট-নয়জন ডাকাতকে আসামি করা হয়।
শুক্রবার (২১ ফেব্রুয়ারি) ভোরে ইউনিক রোড রয়েলস্ পরিবহনের যাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার ব্যবসায়ী মো. ওমর আলী (৫০) বাদী হয়ে মামলাটি করেন।
মির্জাপুর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।
মামলার বিবরণে জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে এগারোটার দিকে ঢাকার গাবতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলস্ পরিবহন (ময়মনসিংহ-ব-১১-০০৬১) নাটোর জেলার বড়াইগ্রামের উদ্দেশে রওনা হয়। সাভারের হেমায়েতপুর থেকে আরো ১০-১২ জন যাত্রী বাসে ওঠে। রাত একটার দিকে বাসটি গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা বাইপাসে চা-পানের বিরতি শেষে অজ্ঞাতনামা আরও ৩-৪ জন যাত্রী বাসে ওঠে।
রাত দেড়টার দিকে বাসটি কালিয়াকৈর উপজেলার হাইটেক সিটি পার্ক সংলগ্ন খাড়াজোড়া ফ্লাইওভার ব্রিজ অতিক্রম করার ৫-৬ মিনিট পর হঠাৎ বাসে ৮-৯ জন যাত্রীবেশী ডাকাত একসঙ্গে দাঁড়িয়ে যায় এবং ধারালো চাকু ও চাপাতি দিয়ে যাত্রীদের ভয় দেখিয়ে চুপ থাকতে বলে। তাদের মধ্যে তিনজন ডাকাত গাড়ির চালকের গলায় ধারালো চাকু ধরে তাকে টেনেহিঁচড়ে কিলঘুষি মেরে আসন থেকে উঠিয়ে নিজেদের একজন চালকের আসনে বসে।
ডাকাতরা বাসটি টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার উপজেলার নাটিয়াপাড়া নাছির গ্লাসের সামনে ইউটার্নে করে ঢাকার দিকে রওনা করে। দুই-আড়াই ঘণ্টা গাজীপুরের কালিয়াকৈর, কোনাবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করে। এই সময়ের মধ্যে ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে যাত্রীদের কাছ থেকে নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার সহ প্রায় পাঁচ লাখ ২৬ হাজার টাকার মালামাল ছিনিয়ে নেয়। এ সময় ২-৩ জন ডাকাত অজ্ঞাতনামা ২-৩ জন মহিলা যাত্রীর স্পর্শকাতর স্থানে স্পর্শ করে শ্লীলতাহানি করে।
রাত আনুমানিক চারটার দিকে আশুলিয়া থানাধীন বাড়ইপাড়া এলাকার নন্দন পার্কের সামনে গাড়িটি টাঙ্গাইল অভিমুখ করে ডাকাতরা চালককে বলে ১০ কিলোমিটারের মধ্যে গাড়িটি থামালে তাকে জানে মেরে ফেলবে। এরপর তারা লুণ্ঠিত মালামালসহ গাড়ি থেকে নেমে চলে যায়।
পরবর্তীতে গাড়ির চালক গাড়ি নিয়ে চন্দ্রা মোড়ে এলে যাত্রীরা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন করে ঘটনার বিষয়ে পুলিশকে জানালে কালিয়াকৈর থানার টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এ সময় যাত্রীরা ডাকাতির ঘটনা জানালে পুলিশ থানায় গিয়ে অভিযোগ করার পরামর্শ দেয়।
পরে বাদীসহ কয়েকজন যাত্রী ও বাসের সুপারভাইজার মির্জাপুর থানায় গিয়ে ডিউটি অফিসারকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানান। এ সময় কয়েকজন যাত্রী অসুস্থতার কথা বললে সেখান থেকে তারা চলে যান। পরে অপর একটি বাসে করে তারা মির্জাপুর থেকে নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানা মোড় যান।
অন্যদিকে ডাকাতির কবলিত গাড়ি নাটোরের বড়াইগ্রাম থানা মোড়ে পৌঁছালে ৩-৪ জন যাত্রী স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় গাড়ির চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে আটকে বড়াইগ্রাম থানার পুলিশে খবর দেন। ডাকাতির ঘটনার সাথে গাড়ির চালক, হেলপার ও সুপাভাইজার জড়িত রয়েছে- যাত্রীদের এমন অভিযোগে বড়াইগ্রাম থানার পুলিশ তাদের আটক করে। পরে তাদের ৫৪ ধারায় আদালতে পাঠালে তারা জামিনে মুক্তি পান।
মির্জাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশারফ হোসেন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, এ বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।
(ঢাকাটাইমস/২১ফেব্রুয়ারি/মোআ)

মন্তব্য করুন