চুয়াডাঙ্গায় বাবার বিরুদ্ধে নিজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ

চুয়াডাঙ্গায় নিজের মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এনামুল হক জনি (৪৫) নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার জাফরপুর স্কুলপাড়ার বাসিন্দা।
সোমবার সারাদিন এ ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হলে স্থানীয়রা সন্ধ্যার পর অভিযুক্তের বাড়ির সামনে উত্তেজিত অবস্থায় অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে এবং অভিযুক্তসহ পরিবারের সবাইকে থানা হেফাজতে নেয়।
জানা গেছে, এনামুল হক জনি একজন সাবেক ব্যাংকার। তিনি এর আগে অন্য এক এলাকায় বসবাস করতেন। সেখানে তার চারিত্রিক সমস্যার কারণে সেই এলাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে চুয়াডাঙ্গার জাফরপুর স্কুলপাড়ায় বাড়ি করে স্থায়ীভাবে বসবাস করে আসছেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, এনামুল হক জনির প্রথম স্ত্রী ৬-৭ বছর আগে মারা গেলে তিনি আবার দ্বিতীয় বিয়ে করেন। প্রথম পক্ষের ১৫ বছর বয়সি এক কন্যাসন্তান রয়েছে।
অভিযোগ, জনি বেশ কয়েকদিন ধরে তার সেই মেয়েকে ধর্ষণ করে আসছেন। মেয়েটি এ ঘটনা তার এক বান্ধবীকে প্রথমে জানায়। পরে তার সৎ মাকে জানালে পরিবারে অশান্তির সৃষ্টি হয়।
এ ঘটনায় জনির দ্বিতীয় স্ত্রী রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। সোমবার সকালে বিষয়টি প্রতিবেশীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। সকালে এলাকার কয়েকজন মেয়েটিকে জিজ্ঞাসা করলে সে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করে।
পরে এ ঘটনা অভিযুক্ত এনামুল হক জনি জানতে পেরে তার মেয়েকে অন্যত্র সরিয়ে নেন। এলাকাবাসী বিষয়টি আঁচ করতে পেরে মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে চাপ দেয় জনিকে। দুপুরের পর তিনি মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন।
এক পর্যায়ে স্থানীয়রা মেয়েটিকে সকলের সামনে ধর্ষণের বিষয়ে জানতে চাইলে সে জানায়, ‘আমার পিতা আমার দিকে কুনজরে তাকাতো। এ ঘটনা আমার সৎ মা জানতে পেরে বাড়ি ছেড়ে চলে গেছেন।’
ভুক্তভোগীর এমন দুই রকম বক্তব্য দেওয়ায় অভিযুক্তকে মারধর করতে যায় এলাকাবাসী। এ সময় বাড়ির মধ্যে পালিয়ে রক্ষা পান জনি। সন্ধ্যার পর উত্তেজিত এলাকাবাসী তার বাড়িতে অবস্থান নিয়ে সদর থানা পুলিশকে খবর দেয়। সদর থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ খালেদুর রহমান সন্ধ্যার পর খবর পেয়ে ফোর্স নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন। তিনি উত্তেজিত জনতাকে শান্ত থাকতে বলেন। পরে স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে অভিযুক্তসহ পরিবারের সকলকে থানা হেফাজতে নেন।
এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়ে বলে, অপরাধী যেন নিশ্চিত সাজা পায়।
আছিয়া খাতুন নামে এক নারী বলেন, ‘শুনলাম পিতা নাকি তার আপন মেয়েকে নিয়মিত ধর্ষণ করে। পিতা হলো সন্তানের রক্ষক। সেই রক্ষক যখন ভক্ষক হয় তখন আর কিছু বাকি থাকে না।’
তিনি বলেন, ‘আজ পিতার কাছে তার সন্তান নিরাপদ নয়। সোমবার সকালে ওই মেয়ে আমাদের এলাকার বেশ কয়েকজনের সামনে তার পিতার কুকর্মের কথা জানায়। দুপুরে অভিযুক্ত পিতা এ খবর পেয়ে তার মেয়েকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়। পরে এলাকাবাসীর চাপের কারণে বাধ্য হয়ে মেয়েকে আবার বাড়িতে নিয়ে আসেন। পরে ভয়ে ওই মেয়ে এখন আর স্বীকার করছে না। সে এখন বলছে আমার পিতা আমার দিকে কুনজরে তাকায়। সে কারণে তার সৎ মা নাকি এ সংসার ছেড়ে চলে গেছে।’
চুয়াডাঙ্গা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ খালেদুর রহমান এলাকাবাসীর উদ্দেশে বলেন, ‘আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি অপরাধীকে আমরা সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় নিয়ে আসবো। অতি উৎসাহী হয়ে আপনারা আইন হাতে তুলে নেবেন না।’
এছাড়াও তিনি সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের নারী পুলিশ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ভিকটিমের সাথে কথা বলছেন। ওনাদের মুখ থেকে শুনে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
(ঢাকাটাইমস/১৮মার্চ/এজে)

মন্তব্য করুন