মোহাম্মদপুরে পুলিশকে পিটিয়ে আসামি ছিনতাই

আ.লীগ নেতা মোস্তফা এখনো অধরা, হামলার নেতৃত্বে লিকুর ক্যাশিয়ার সোহাগ 

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ২৩ মার্চ ২০২৫, ২১:৪৫
অ- অ+

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র হত্যাসহ পাঁচটি মামলার আসামি পলাতক আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম মোস্তফাকে (৫৮) গত ১২ মার্চ রাজধানীর মোহাম্মদপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু এরপর তাকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের উপর হামলা করে মোস্তফার সহযোগী একদল দুর্বৃত্ত। এসময় কয়েকজন পুলিশ গুরুতর আহত হন।

এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় সরকারি কাজে বাধা দান ও আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার মামলা হয়েছে। জানা গেছে, এই গোলাম মোস্তফা আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের উপর হামলার নেতৃত্ব দেন আওয়ামী লীগ নেতা ও শেখ হাসিনার এপিএস হাফিজুর রহমান লিকুর ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত আনিসুর রহমান সোহাগ। গোলাম মোস্তফাকে গ্রেপ্তার করা হয় মোহাম্মদপুরের লালমাটিয়ার অ্যাভেরোজ ইন্টারন্যাশনালের সামনে থেকে। আর সোহাগ অ্যাভেরোজের হেড অব স্কুল।

ঘটনার সময় মোবাইলে ধারণ করা একটি ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হামলার সামনে ছিল অ্যাভেরোজ ইন্টারন্যাশনালের পোশাকধারী নিরাপত্তা-প্রহরীরা। এসময় নিরাপত্তা-প্রহরীদের সঙ্গে আরও অন্তত ১০ জন অংশ নেয়। তারা ছিল বহিরাগত ও স্কুলটির স্টাফ। অ্যাভেরোজ ইন্টারন্যাশনালের প্রশাসনিক ভবনের সামনে ঘটে ওই হামলার ঘটনা।

সূত্র বলছে, গোলাম মোস্তফা অ্যাভেরোজ ইন্টারন্যাশনালের তিনজন মালিকের একজন। তাকে গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে শিক্ষক এবং স্টাফদের নিয়ে প্রশাসনিক ভবনের দুই তলা থেকে দ্রুত নিচে নামেন অ্যাভরোজের হেড অব স্কুল আনিসুর রহমান সোহাগ। নিচে নেমেই নিরাপত্তা প্রহরী ও তার সঙ্গে থাকা স্টাফদের গোলাম মোস্তফাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

এসময় অতর্কিত ভাবে পুলিশের উপর হামলা করা হয়। প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকের বাইরে যখন হামলার ঘটনা ঘটে, তখন ফটকের ভেতরে ছিলেন সোহাগ। সোহাগের শ্যালক সৈয়দ মামুন পুলিশের এক সদস্যের কানে সজোরে থাপ্পড় দিলে আসামির হাত ছেড়ে দেন ওই পুলিশ সদস্য।

সূত্র বলছে, অ্যাভেরোজ স্কুলের নিচতলার সিসিটিভি ক্যামেরায় ওই সময়কার সকল ভিডিও চিত্র ধারণ করা আছে। কিন্তু পুলিশ এখনো সেই ভিডিও ফুটেজ নিতে পারেনি।

মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার হাসান বলেন, ‘আসামির সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি।’ অনুসন্ধানে জানা গেছে, আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার হোতা আনিসুর রহমান সোহাগও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের একাধিক হত্যা মামলার আসামি। গত বছরের ১৬ ডিসেম্বর রাতে পল্টন থানার একটি হত্যা মামলায় এজহারভুক্ত সোহাগকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে জামিন পান তিনি। বিভিন্ন সময় এই সোহাগের বিরুদ্ধে জাল সার্টিফিকেট দিয়ে চাকরি করার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হয়।

এদিকে মব সৃষ্টি করে আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রচারের পর চাপে পড়ে পুলিশ। ১২ মার্চ দিবাগত রাত দেড়টায় সরকারি কাজে বাধা ও সরকারি কর্মচারীদের মারধরের অভিযোগে মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সহিদুল ওসমান মাসুম বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় ছিনতাই প্রতিরোধ ও মাদকদ্রব্য উদ্ধার এবং ওয়ারেন্ট তামিল ডিউটি করছিল। ১২ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গোপন সূত্রে জানতে পারে, মোহাম্মদপুর থানার একটি মামলার এজাহারনামীয় ৩৯ নম্বর আসামি লালমাটিয়া এলাকার অ্যাভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে অবস্থান করছে।

বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানালে তাদের নির্দেশে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সঙ্গীয় অফিসার ফোর্সসহ অ্যাভেরোজ ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের সামনে থেকে আসামি আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য গোলাম মোস্তফাকে হেফাজতে নেওয়া হয়। এই সময়ে আসামির ডাক চিৎকারে মুহূর্তের মধ্যেই স্কুলটির নিরাপত্তাকর্মী ও কর্মকর্তারা পুলিশকে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে ‘মব’ তৈরি করে। তারা পুলিশের ওপর চড়াও হয়ে সরকারি কাজে বাধা প্রদান করে। পাশাপাশি পুলিশকে টানা হেঁচড়া করে এলোপাথাড়ি কিল ঘুষি মারতে থাকে।

এ সময়ে পুলিশের হেফাজত থেকে আসামি পালিয়ে যেতে থাকলে মামলার বাদীসহ সঙ্গীয় অফিসার ফোর্স তাকে আটক করার চেষ্টা করলে সে-সহ অন্যরা কিল-ঘুষি মারতে থাকে। আসামিদের মারপিটের সময়ে গোলাম মোস্তফাকে ছিনিয়ে নিয়ে কৌশলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যেতে সাহায্য করে। আসামিদের মারপিটে পুলিশের এক সদস্য আহত হলে তাকে উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ঘটনার পর থেকে আসামি গোলাম মোস্তফা পলাতক রয়েছে। তাকে খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। ফলে পুলিশের সক্ষমতা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে।

পলাতক গোলাম মোস্তফার বিরুদ্ধে ক্যান্টনমেন্ট থানা (মামলা নং-১৬), রামপুরা থানা (মামলা নং- ১৮/১৯৩), বাড্ডা থানা (মামলা নং- ১৬), মোহাম্মদপুর থানা (মামলা নং- ৬৯(১)২৫), চকবাজার থানা (মামলা নং- ৫৬/২৫), পল্লবী থানায় (মামলা নং- ১৪৬) হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলা রয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/এসএস/এজে)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ভারতের ৭৭টি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি পাকিস্তানের
আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে শাহবাগ মোড়ে ছাত্র-জনতার অবস্থান, যান চলাচল বন্ধ
নোয়াখালীতে আ. লীগের দুই নেতাসহ গ্রেপ্তার ১৫
বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ ইতালি আনকোনা শাখার নতুন কমিটি গঠন 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা