হাঁটলেই কমবে ডায়াবেটিস! জানুন প্রতিদিন কত পা হাঁটলে সুস্থ থাকবেন

হাঁটা সুস্বাস্থ্যের জন্য উৎকৃষ্ট ব্যায়াম। যান্ত্রিক জীবনে জ্যামে অলসভাবে সবার সময় কাটে। এতে করে শরীরে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে। আবার অনেকে শরীরচর্চা করার সময় পান না। ওজন কমানো কিংবা চনমনে থাকা—প্রতিদিন কিছুটা সময়ের জন্য হাঁটা জরুরি। হাঁটলেই শরীর থাকবে সুস্থ। ওজনও থাকবে নিয়ন্ত্রণে। নিয়ম করে যদি একটি নির্দিষ্ট সময়ে হাঁটতে পারেন, তা হলে বেশি সুফল পাবেন। রোজ হাঁটলে শুধু শরীর ভাল থাকে তা নয়, ভাল থাকে মন, আয়ুও বাড়ে। হাঁটাহাঁটি করলে মানসিক চাপ অনেকটাই কমে যায়। মন এবং মস্তিষ্ক দুই-ই ফুরফুরে হয়। চিকিৎসকদের মতে, কয়েক পা হাঁটার মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে সুস্থতার চাবিকাঠি।
সম্প্রতি নতুন এক গবেষণায় জানা গেছে যে খাবার খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটলে রক্তে সুগারের মাত্রা কমে যায়। স্পোর্টস মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় গবেষকরা সাতটি ভিন্ন গবেষণা বিশ্লেষণ করেছেন যে কীভাবে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পরিবর্তে হালকা শারীরিক ক্রিয়াকলাপ, যেমন দাঁড়ানো এবং হাঁটা রক্তে শর্করার মাত্রা সহ হার্টের স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে।
গবেষকরা দেখেছেন যে খাবারের পরে বসার পরিবর্তে কিছুক্ষণ হাঁটা বা দাঁড়ালে পোস্টপ্র্যান্ডিয়াল গ্লুকোজের মাত্রা কমানো যেতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, হালকা হাঁটা খুবই উপকারী প্রমাণিত হতে পারে, এটি খাওয়ার পরে ইনসুলিনের মাত্রাও উন্নত করে। গবেষকরা পরামর্শ দিয়েছেন যে খাবারের পরে হালকা হাঁটা শুধুমাত্র রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় না, ইনসুলিনের মাত্রাও বজায় রাখে।
ডায়াবেটিস গবেষণা জানাচ্ছে, যারা হাঁটার জন্য আলাদা করে সময় পাবেন না, তাঁরা এই কাজগুলো করতে পারেন- দোকান-বাজার হেঁটে করুন। অফিস থেকে ফেরার পথে একটা স্টপেজ আগে বাস থেকে নেমে যান, বাকি রাস্তা হেঁটে ফিরুন। যাতায়তের জন্য গাড়ি ব্যবহার করলে তা একটু দূরে রাখুন, বাকি রাস্তা হেঁটে যান। একটি হাঁটার গ্রুপে জয়েন করতে পারেন। এই কয়েকটি নিয়ম মেনে চললে শরীর সুস্থ থাকবে। সেই সঙ্গে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকতেও বাধ্য় হবে।
দিনে ৩০-৪৫ মিনিট যদি হাঁটা যায়, ডায়াবেটিকরা সত্যিই সুফল পাবেন। কম করে অন্তত ১০ হাজার পা হাঁটলে শুধু ডায়াবিটিস নয়, পাশাপাশি আরও অনেক শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি কমবে। কিন্তু দশ হাজার পা হাঁটা মুখের কথা নয়। তবে পুরোটাই অভ্যাসের ব্যাপার। প্রথম দিন হাঁটতে বেরিয়েই এতটা পথ হেঁটে ফেলা যাবে না। রোজ হাঁটতে গেলে কয়েক দিনের মধ্যে লক্ষ্যে পৌঁছনো যাবে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, প্রথম চেষ্টা করুন ৫ হাজার পা হাঁটা। অনেকেরই মনে হতে পারে, সারা সকাল ধরে যদি হাঁটেন, তা হলে অফিস যাবেন কখন। সকালেই পুরোটা হেঁটে ফেলতে হবে, তার কোনও মানে নেই। দিনে তিনটি সময় ভাগ করে নিন। সকালে ১০ মিনিট হাঁটুন। দুপুরে সময় না পেলে বিকালে আরও ১০ মিনিট হাঁটুন। তার পর রাতে খাওয়াদাওয়ার পর ১৫ মিনিট হাঁটলেই যথেষ্ট।
নিয়ম করে হাঁটার এই অভ্যাসে হাড়ের অনেক সমস্যার ঝুঁকিও কমবে। ওজন বেড়ে যাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। খাওয়াদাওয়ার যদি অনিয়মও হয়ে যায়, তা হলেও খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। হাঁটার গুণেই সু্স্থ এবং রোগমুক্ত থাকবে শরীর।
হাঁটলে শরীরের পেশিতে ইনসুলিনের কার্যকারিতা বাড়ে। ফলে রক্তের গ্লুকোজ কমে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। সম্প্রতি গবেষকদের গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে, আপনি যত বেশি হাঁটবেন, তত আপনার ডায়াবেটিস হবার সম্ভাবনা কম হবে। যিনি সপ্তাহে ৫ দিন প্রতিদিন ১০,০০০ স্টেপ হাঁটেন, তিনি ডায়াবেটিস থেকে তত দূরে থাকেন যিনি প্রতিদিন ৩,০০০ স্টেপ হাঁটেন।
এছাড়াও গবেষকরা বলেন, সারাদিনে কিছুক্ষণ হাঁটাও খুব উপকারী প্রমাণিত হতে পারে। সম্ভব হলে সারাদিন বসে থাকার পরিমাণ কমিয়ে দিন। আপনার কাজ যদি বসেই করতে হয়, তাহলে প্রতি ২০ থেকে ৩০ মিনিট পরপর উঠে একটু হাঁটুন। এর ফলে হাঁটা-চলা আপনার জীবনীশক্তি বাড়াতে সাহায্য করবে। কারণ হাঁটা-চলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে বাড়িয়ে তোলে।
(ঢাকাটাইমস/১৬ এপ্রিল/আরজেড)

মন্তব্য করুন