দৃষ্টিশক্তি বাড়ায় সুপারফুড গাজর, ক্যানসার ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৪৬
অ- অ+

সুপার ফুডগাজর অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু সবজি, যা প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। কাচাঁ ও রান্না দুভাবেই খাওয়া যায় গাজর, তাই গাজরকে সবজি এবং ফল দুটাই বলা যায়। নানা প্রকার খাদ্য তৈরিতে গাজর ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে তরকারি, ভাঁজি, হালুয়া ও সালাদ হিসেবে গাজর অত্যন্ত জনপ্রিয়। তবে সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণের লাভের জন্য কাচা গাজর খাওয়াই সর্বোত্তম। তাই কাঁচা গাজর অথবা গাজরের জুস বানিয়ে খেলেই গাজরের সর্বোচ্চ পুষ্টি উপাদান পাবেন।

গাজরের বৈজ্ঞানিক নাম ডাউকাস কেরোটা যা একপ্রকার মূল জাতীয় সবজি। গাজরের আদি নিবাস দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপ। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক গাজরই চীন দেশে উৎপাদিত হয়।

গাজর নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। প্রতি ১০০ গ্রাম গাজরে রয়েছে –খাদ্যশক্তি ৪১ কিলোক্যালরি, আমিষ ০.৯৩ গ্রাম, শর্করা ৯.৫৮ গ্রাম, ফাইবার ২.৮ গ্রাম, চর্বি ০.২৪ গ্রাম, ভিটামিন এ ১৬৭০৬ আইইউ, বিটা ক্যারোটিন ৮২৮৫ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ৫.৯ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩২০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৬৯ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম ১২ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৩৫ মিলিগ্রাম, কোলেস্টেরল ০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৩ মিলিগ্রাম ও জিংক ০.২৪ মিলিগ্রাম।

গাজরে প্রচুর পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ, মিনারেলস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট আছে। গাজরের ভিটামিন ও মিনারেলস দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, এটি স্বাস্থ্যসুরক্ষা ও সৌন্দর্যচর্চায় বহুদিন থেকে সমাদৃত, তবে এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে উপকারটি হলো দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি পাওয়া। চোখ ভাল রাখা থেকে ক্যানসার প্রতিরোধ— পটাশিয়াম, ক্যালশিয়াম-সমৃদ্ধ গাজরের কিন্তু গুণের শেষ নেই। ছোট থেকে বড় সব বয়সিদের রোজের ডায়েটে এই সব্জি রাখার কথা বলেন পুষ্টিবিদেরা। জেনে নিন, কেন রোজের ডায়েটে গাজর রাখা জরুরি।

দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়

গাজরের জুসে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ। এই ভিটামিন সরাসরি দৃষ্টিশক্তি বাড়ানোর কাজে সাহায্য করে। এমনকি চোখের ম্যাকুলার ডিজেনারেশন আটকানোর কাজেও এই পানীয়ের জুড়ি মেলা ভার। সেই কারণেই গাজরের জুস খেলে বয়সজনিত চোখের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। এছাড়া এই পানীয়ে উপস্থিত লিউটিন ও জিয়াজ্যান্থিন ক্ষতিকর আলোর প্রভাব থেকে চোখকে রক্ষা করতে পারে। তাই যারা সারাক্ষণ কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন, তারা নিয়মিত গাজরের জুস খেতেই পারেন। এতেই উপকার পাবেন হাতেনাতে।

ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়

ক্যানসারের মতো অসুখকে প্রতিরোধ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। এক্ষেত্রে ভালো খবর হলো, নিয়মিত গাজরের জুস খেলে দেহে ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি কিছুটা হলেও আটকে দেয়া সম্ভব। একটি টেস্টটিউব গবেষণায় দেখা গেছে যে, লিউকেমিয়া এবং কোলোন ক্যানসারের কোষের বৃদ্ধি আটকে দিতে পারে এই গাজরের জুস। তাই সুস্থ থাকতে এই জুস খাওয়া আবশ্যক।

ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর

ব্লাড সুগারের মতো ঘাতক অসুখকে নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে একাধিক জটিল সমস্যা পিছু নিতে পারে। এই তালিকায় ক্রনিক কিডনি ডিজিজ, স্ট্রোক এবং হার্টের অসুখও রয়েছে। তাই যেভাবেই হোক ব্লাড সুগারকে কন্ট্রোলে রাখতে হবে। এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে গাজরের জুস। তাই সুগার রোগীদের ডায়েটে এই জুস থাকা অত্যন্ত জরুরি বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।

হার্ট সুস্থ রাখে

শারীরিকভাবে কর্মক্ষম থাকা, পর্যাপ্ত ঘুম এবং চাপ মুক্ত থাকলে হার্ট সুস্থ থাকে। গাজর ডায়েটরি ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে পরিপূর্ণ থাকে। এই উপাদানগুলো ধমনির ওপর কোনো কিছুর আস্তরণ জমতে না দিয়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে, হার্টকে সুস্থ রাখে।

ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়

বেশি পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন এবং ভিটামিন সি খেলে ফুসফুসের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায় এবং শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা প্রতিরোধ করে তার পাশাপাশি শ্বাস-প্রশ্বাসের বিভিন্ন সমস্যা যেমন- অ্যাজমা, ব্রংকাইটিস এবং এমফিসেমা প্রতিরোধ করে।

শরীরের ওজন কমায়

পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ গাজরে ক্যালরি এবং সুগারের পরিমাণ খুবই কম থাকে। এটি খেলে পেট ভরা থাকে বলে ক্যালরিবহুল অন্য খাবার খেতে হয়না। এ ছাড়া গাজর চর্বি কমাতে সাহায্য করে বলে ওজন কমে। তাই ওজন কমাতে বেশি বেশি গাজর খান।

কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায়

শরীরের যেসব কোলেস্টেরল রক্তের মধ্যে মিশে রক্তে জমাট বেঁধে যায়, হৃৎপিণ্ড থেকে রক্ত সারা শরীরে পৌঁছাতে বাধা তৈরি করে, সেসব কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় গাজর। আর কিছু কোলেস্টেরল বা চর্বি রয়েছে, যা ত্বকে কোলেস্টেরলের বা লাইপোপ্রোটিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।

উজ্জ্বল ত্বক

গাজরের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ পদার্থ কোষের ক্ষয়রোধ করে। ফলে ত্বক সুন্দর থাকে এবং তরুণ দেখায়। এসব পুষ্টি উপাদান ত্বকের শুষ্কতা রোধ করে, ত্বকের রঙ উন্নত করে এবং ত্বকের ক্ষত ও ত্রুটি দূর করে।

ইমিউনিটি থাকবে চাঙ্গা​

প্রতিদিন মাত্র এক গ্লাস গাজরের জুস করে খেতে পারলেই কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েকগুণ বাড়বে। আসলে এই পানীয়ে উপস্থিত ভিটামিন এ এবং ভিটামিন সি-এর যুগলবন্দিতেই ইমিউনিটি হয় শক্তপোক্ত। সেই কারণেই একাধিক ভাইরাল ডিজিজকে সহজেই কাবু করা সম্ভব হয়।

(ঢাকাটাইমস/১৭ এপ্রিল/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
গণতন্ত্রের সমাজভূমি নির্মিত হলেই শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা পাবে: তারেক রহমান
শেখ পরিবারের ৫ সদস্যের জমি-বাড়ি ক্রোক, রিসিভার নিয়োগের আদেশ
ধাওয়া খেয়ে পিছু হটল ভারতের চার যুদ্ধবিমান
নিজের ওপর চলা নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে বিচার চাইলেন রাশেদ খান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা