গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে যেসব পানীয়

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৪
অ- অ+

প্রকৃতিতে চলছে সূর্যের চোখ রাঙানি। কাঠফাটা রোদে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। দীর্ঘ সময় রোদে থাকলে হিটস্ট্রোক হয়ে অসুস্থ হয়ে যেতে পারে লোকজন। শিশু ও বয়স্কদের জন্য এই ঝুঁকি আরো বেশি। প্রচণ্ড গরম আবহাওয়ায় শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে শরীরের তাপমাত্রা ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট ছাড়িয়ে গেলে তাকে হিট স্ট্রোক বলে। হিট স্ট্রোকের লক্ষণ হিসেবে মাথা ঝিমঝিম, বমি, চোখে ঝাপসা দেখা, অবসাদ ও দুর্বলতা, মাথাব্যথা, মাংসপেশির খিঁচুনি দেখা দেয়। এছাড়াও হিট স্ট্রোক হলে চামড়া খসখসে ও লাল হয়ে যাওয়া, হৃৎস্পন্দন বৃদ্ধি, শ্বাসকষ্ট, দৃষ্টিবিভ্রম বা হ্যালুসিনেশন হতে পারে।

প্রচণ্ড গরমে শরীরে পানিশূন্যতা এবং বিভিন্ন ওষুধের প্রভাবেও হিট স্ট্রোক হয়। হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে এই গরমে দেহে পানি কমে গিয়ে যেন ডিহাইড্রেশন না হয় তা নিশ্চিত করা। এছাড়াও রোদে যারা দীর্ঘক্ষণ পরিশ্রম করেন, তাদের হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।

রোদ থেকে ঘেমে শরীরে এসি-ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলে ক্ষণিকের জন্য স্বস্তি পাওয়া যায় ঠিকই। কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয়। মাথা ধরে থাকা, নাক দিয়ে পানি পড়ে, গলা খুশখুশ, কাশি এসব কিন্তু লেগেই থাকে। যাদের সাইনাস বা মাইগ্রেনের সমস্যা রয়েছে এই রোদ থেকে তাদের কষ্ট হয় সবচেয়ে বেশি। আর তাই সরাসরি রোদ থেকে ফিরলে কিন্তু ঠান্ডা পানি খাবেন না। কিছুক্ষণ বসে তবেই পানি খান।

হিট স্ট্রোক এবং সাইনাসের ব্যথা এড়াতে এবং শরীর ঠান্ডা রাখতে কিছু পানীয় বেশ কার্যকর। এতে শরীরের একাধিক সমস্যা কিন্তু দূর হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে বাড়বে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আর শরীর থাকবে ঠান্ডা। বিশেষ করে ইফতারিতে এ সময় সবাই ঠান্ডাজাতীয় খাবার ও পানীয় রাখেন খাদ্য তালিকায়। কেউ কেউ গরম থেকে তাৎক্ষণিক মুক্তি পেতে কোল্ড ড্রিংকসও রাখেন। কিন্তু এই পানীয়তে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তাই এ সময় বাসায় তৈরি বিভিন্ন ড্রিংকের ভরসা রাখা উচিত।

সাইনাসের সমস্যা থাকলে আদা, রসুন, আনারস, কাঁচামরিচ, নারিকেল তেল এবং হলুদ কিন্তু দারুণভাবে উপকারী। প্রতিদিন ডায়েটে বা ইফতারিতে এই সব খাবার রাখতে পারলে খুবই ভাল। এছাড়া যে সব ড্রিংক বানিয়ে নেবেন বাড়িতেই।

হাইপোথ্যালামাস গ্রন্থি আমাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। যখন আমরা খুব গরম অনুভব করি, তখন হাইপোথ্যালামাস গ্ল্যান্ড ঘর্মগ্রন্থিকে সংকেত পাঠায় এবং ঘাম নিঃসৃত হয়। ঘামের মাধ্যমে শরীর শীতল হয়, সেই সঙ্গে ঘামের ফলে শরীর থেকে লবণ ও পানি বের হয়ে যায়। আর এই লবণ ও পানি শূন্যতা কমাতে এবং শরীর শীতল রাখতে যেসব পানীয় ও খাবার সাহায্য করতে পারে—

লেবুর শরবত

লেবুর শরবত হলো গরমের সময়ে অন্যতম পরিচিত প্রাকৃতিক পানীয়। ১০০ গ্রাম লেমনেডে ২৯ ক্যালোরি, ১.১ গ্রাম প্রোটিন, ২.৫ গ্রাম চিনি, ২.৮ গ্রাম ফাইবার এবং ৯.৩ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট রয়েছে। প্রচণ্ড গরমে লেবুর শরবত পান করলে শরীর সতেজ এবং আরো বেশি কর্মদ্যোমী হয়ে উঠে। এক গ্লাস লেবুর শরবত গরমে শরীরের পানি স্বল্পতা দূর করে আমাদের এনে দেবে প্রশান্তি। লেবুতে থাকা ভিটামিন ‘সি’ এপিনেফ্রিন হরমোনকে উদ্দীপ্ত করে, যা নার্ভ স্টিমুলেশনে সাহায্য করে।

টক দইয়ের শরবত

গরমে টক দইয়ের শরবত শরীরের জন্য বেশ উপকারি। টক দই যে কোনো খাবার হজম করতে সাহয্যে করে। তাই গরমে প্রশান্তি পেতে খেতে পারেন টকদইয়ের শরবত। টক দইকে সুপারফুডও বলা হয়ে থাকে। দইতে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, প্রোটিন এবং আরও অনেক ভিটামিন রয়েছে যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুব উপকারী। টক দই পাঁচ কাপ, পুদিনা পাতা সাত/আটটি, কাঁচামরিচ কুচি দুটি, ঠান্ডা পানি পরিমাণমতো, চিনি দুই টেবিল চামচ, বরফ কুচি প্রয়োজনমতো এবং স্বাদমতো লবণ দিয়ে টক দইয়ের শবরত বানিয়ে ফেলুন।

বেলের শরবত

অতিরিক্ত ঘামের সঙ্গে বেরিয়ে যাওয়া লবণ শরীরকে আরও ক্লান্ত করে দেয়। এই সময় কিন্তু বেলের শরবত কাজে আসতে পারে। কারণ, বেলের মধ্যে রয়েছে রাইবোফ্ল্যাবিন এবং ভিটামিন বি, যা ঘামলেও শরীরে শক্তির অভাব হতে দেয় না। এ ছাড়াও এর মধ্যে রয়েছে আয়রন, সোডিয়াম, পটাশিয়ামের যৌগ যা হজম শক্তিকে উন্নত করে এবং প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।

ডাবের পানি

গরমের সময়ে ডাবের পানি হতে পারে আপনার জন্য উপযুক্ত পানীয়। এক কাপ ডাবের পানিতে থাকে ৬০ ক্যালোরি, ১৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৮ গ্রাম চিনি এবং পর্যাপ্ত পটাসিয়াম। ডাবের পানিতে ৯৪% পানি থাকে। ডাবের পানি মিনারেলের ভালো উৎস। ঘামের মাধ্যমে শরীরে যে পানিশূন্যতা তৈরি হয়, তা রোধ করে শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। ডাবের পানি উচ্চ পটাসিয়ামযুক্ত হওয়ায় প্রেসার কমাতে সাহায্য করে। ডায়াবেটিক রোগীরা নিশ্চিন্তে ডাবের পানি পান করতে পারেন। কারণ ডাবের পানি ব্লাড সুগার বাড়ায় না।

আঙুরের রসের শরবত

আঙুরের রসের সাথে মধু আর বরফ মিশিয়ে খেলেও গরমে আরাম পাবেন। পাবেন শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি। আবার শরীরকে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা দূর করতেও এই পানীয়ের জুড়ি মেলা ভার।

তেঁতুল-গুড়ের শরবত

তেঁতুলে উচ্চ পটাসিয়াম থাকে, যা শরীরে পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। সেই সঙ্গে ম্যাগনেসিয়াম ও আয়রনের বেশ ভালো উৎস। ম্যাগনেসিয়াম নার্ভ সিমুলেশনে সাহায্য করে এবং গুড় আয়রনের ঘাটতি পূরণ করে।

গাজর বিনস ড্রিংক

ছোট ছোট টুকরো করে গাজর, বিনস, কড়াইশুঁটি, টমেটো, মিষ্টি আলু সিদ্ধ করে নিন। সিদ্ধ করার সময় নুন, গোটা গোলমরিচ সামান্য হলুদ, স্লাইস করে কাটা আদা-রসুন ছাড়া আর কিছুই দেবেন না। এবার এই স্যুপ গরম গরম খতে পারেন না চাইলে তা একটু ঠান্ডা করে ব্লেন্ডারে পিষে নিয়েও খেতে পারেন। তবে চিবিয়ে খেয়ে নিতে পারলে কিন্তু সবথেকে ভাল।

পুদিনা-লেবুর ড্রিংক

পুদিনা পাতার সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে সহজেই তৈরি করা যায় এই উপকরণটি। সঙ্গে বিট লবণ, গোল মরিচ এবং চিনিও মেশানো যেতে পারে। চাইলে কয়েক টুকরো বরফও দিতে পারেন।

কাঁচা আমের শরবত

গরমে শরীর ঠান্ডা রাখে কাঁচা আমের শরবত। ক্যারোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ কাঁচা আমের শরবত গরমে একটি আদর্শ পানীয়। কাঁচা আম দেড় কাপ, ৪ টেবিল চামচ চিনি, পুদিনা পাতাকুচি এক টেবিল চামচ, কাঁচা মরিচ একটি, লেবুর রস দুই টেবিল চামচ, লবণ এক চাচামচ, বিটলবণ হাফ চাচামচ, সামান্য জিরাগুঁড়া এবং সামান্য গোলমরিচের গুঁড়া। সবকিছু একটা ব্লেন্ডারে নিয়ে এক গ্লাস পানি দিয়ে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। ভালোভাবে সব ব্লেন্ড হয়ে গেলে আরও দুই গ্লাস পানি মিশিয়ে কিছুক্ষণ ফ্রিজে রেখা দেওয়া যেতে পারে। তারপর ইফতারে ঠান্ডা ঠান্ডা পরিবেশন করতে হবে।

অ্যালোভেরা ড্রিংক

গরম থেকে বাঁচতে এই প্রাকৃতিক উপাদান দারুণ সাহায্য করে। প্রতিদিন এক গ্লাস অ্যালোভেরা জুস পান করলে শরীর গরম সহ্য করার জন্য তৈরি হয়ে যায়।

খেজুরের লাচ্ছি শরবত

গরমে শরীর সতেজ রাখে সুন্নতি খেজুরের লাচ্ছি শরবত। সুস্বাদু খেজুর শক্তির একটি ভালো উৎস। এতে রয়েছে অনেক অসুখ নিরাময়ের শক্তি। প্রতিদিন খেজুর খাবারের তালিকায় রাখার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। ফ্রুকটোজ ও গ্লাইসেমিক সমৃদ্ধ। খেজুর ফলকে চিনির বিকল্প হিসেবে ধরা হয়ে থাকে। গরমে শরীরের ক্লান্তিভাব দূর করার জন্য প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখতে পারেন খেজুরের লাচ্ছি। ক্যান্সারের মতো মরণঘাতি রোগ দূরে রাখতে নিয়মিত খেজুর খাওয়ার অভ্যাস করুন। তৈরি করতে যা লাগবে: খেজুর- ১০-১৫টি, কাজুবাদাম- কয়েকটি, দই- ১ কাপ, দুধ- আধা কাপ, বরফ কুচি- ১ কাপ, চিনি- স্বাদমতো, পেস্তাবাদাম কুচি- কয়েকটি।

প্রথমে খেজুর ধুয়ে বীজ ফেলে দিন। এবার খেজুরগুলো দুধে ভিজিয়ে রাখুন অন্তত ঘণ্টা চারেক। এরপর খেজুর নরম হয়ে আসবে। তখন দুধসহ খেজুরগুলো ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এবার তাতে মেশান দই, চিনি, কাজু বাদাম ও বরফ। এরপর আরেকবার ব্লেন্ড করে নিলেই তৈরি খেজুরের লাচ্ছি।

(ঢাকাটাইমস/২৭ এপ্রিল/আরজেড)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিভেদের রাজনীতি আমাদের ঐতিহ্য নষ্ট করেছে: মির্জা ফখরুল 
ট্রেন মিস করলেন তাবিথ আউয়াল?
গিয়াস কাদের চৌধুরী ও গোলাম আকবর খোন্দকারকে বিএনপির শোকজ
আগারগাঁওয়ে অপহৃত চার কিশোরকে উদ্ধার করে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিল সেনাবাহিনী
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা