অঙ্কুরোদগম হয়নি সরবরাহ করা পেঁয়াজ বীজ, রাজবাড়ীতে ক্ষতিগ্রস্ত কয়েক হাজার কৃষক
দেশে পেঁয়াজ উৎপাদনে অন্যতম রাজবাড়ী জেলায় এবার বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বিনামূল্যে সরবরাহ করা বীজে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কয়েক হাজার কৃষক। বীজ অঙ্কুরোদগম না হওয়ায় অন্তত আট হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় কৃষকরা ক্ষতিপূরণ বা হালি পেঁয়াজ কিনে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
পেঁয়াজ উৎপাদনে সারা দেশে তৃতীয় জেলা রাজবাড়ী। এখানকার প্রধান অর্থকরী ফসল পেঁয়াজ। জেলার কৃষকরা দেশের মোট চাহিদার ১২ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদন করে বাজার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন।
জানা গেছে, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে জেলার সদর, গোয়ালন্দ, পাংশা, বালিয়াকান্দি ও কালুখালী উপজেলার চার হাজার কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে পেঁয়াজের বীজ বিতরণ করে বিএডিসি। বীজতলায় ২০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর বীজ অঙ্কুরোদগম হয়নি। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই ৪ হাজার পেঁয়াজ চাষি। জেলায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সোমবার রাজবাড়ীর জেলা প্রশাসকের অফিসে জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সভায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ বা নতুন করে অথবা হালি কিনে দেওয়ার দাবি উঠলেও কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই ওই সভা শেষ হয়। ফলে নষ্ট বীজের কারণে এ বছর ৭ থেকে ৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ কম হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বলছেন, বীজতলা তৈরির সময় অতিবাহিত হওয়ায় এসব জমিতে এ বছর আর পেঁয়াজ রোপণ সম্ভব নয়। বাজার থেকে উচ্চমূল্যে পেঁয়াজ বীজ ক্রয় করতেও তারা সক্ষম নন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এই মৌসুমে বারি ফোর, তাহেরপুরি ও বারি এক জাতের বীজের জন্য কৃষি বিভাগ বিএডিসিকে এক কোটি ৮ লাখ টাকা পরিশোধ করে। পরে সদর উপজেলায় ৮০০, পাংশায় এক হাজার, কালুখালীতে ৮০০, বালিয়াকান্দিতে এক হাজার ও গোয়ালন্দ উপজেলায় ৪০০ কৃষকের মাঝে বীজ বিতরণ করা হয়। বিনামূল্যে বিতরণ করা এসব বীজ থেকে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ সম্ভব ছিল।
সরজমিনে জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার সদর ইউনিয়নের গজারগারা মাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষি বিভাগ থেকে বিনামূল্যে বিতরণ করা বীজতলায় বীজের অঙ্কুরোদগম হয়নি। সদর ইউনিয়নে ১০ থেকে ১৫ জন কৃষকের বীজতলায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জেলার সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠে গিয়েও দেখা গেছে বিনামূল্যে বিতরণ করা এসব বীজের অঙ্কুরোদগম হয়নি।
বালিয়াকান্দির অন্তত ১০ জন কৃষক জানান, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বালিয়াকান্দির কৃষি অফিস থেকে বিনামূল্যে এক হাজার কৃষককে পেঁয়াজের বীজ দেওয়া হয়। সাধারণত বোপণের এক সপ্তাহের মধ্যে পেঁয়াজ বীজের অঙ্কুরোদগম হয়ে থাকে। ২০ দিন অতিবাহিত হলেও এসব বীজের অঙ্কুরোদগম হয়নি। যারা সরকারি বীজ পেয়েছেন সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এক কেজি বীজ থেকে ভালো চারা জন্ম নিলে ৫০ শতাংশ জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করা যায়।
জামালপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. রফিক শেখ বলেন, আমাদের ইউনিয়নে যারা সরকারিভাবে পেঁয়াজের বীজ পেয়েছেন সবারই ক্ষতি হয়েছে। এই বীজ পরীক্ষা না করেই কৃষকদের দেওয়া হয়েছে।
রাজবাড়ীর বীজ বিপণন বিভাগের সিনিয়র সহকারী পরিচালক নৃপেন কুমার নন্দী বলেন, ‘আমরা পরীক্ষা করেই কৃষকদের মধ্যে বীজ বিতরণ করেছিলাম। বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম হয়নি এটা সঠিক। কত কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সেই সংখ্যাটা বলা সম্ভব হয়। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে।’
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপপরিচালক মো. হোসেন শহীদ সরোওয়ার্দী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘চলতি মৌসুমে ৪ হাজার কৃষকের মধ্যে বিনামূল্যে বিএডিসি থেকে সরবরাহ করা পেঁয়াজের বীজ বিতরণ করা হয়। বীজের অঙ্কুরোদগম হয়নি। পেঁয়াজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কৃষিবিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।’
(ঢাকা টাইমস/০৩ডিসেম্বর/এসএ)
মন্তব্য করুন