কর্তৃত্ববাদ ও মব জাস্টিসের মাধ্যমে নয়, অবদানের মাধ্যমে মন জয় করা সম্ভব

ড. আনোয়ার হোসেন
  প্রকাশিত : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:০০| আপডেট : ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩০
অ- অ+

অতীত জীবনের ভালো কাজকে পরবর্তী জীবনের ঘটনাগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত করাকেই অবদান বলা হয়। বাংলাদেশের একটা বড় সমস্যা হলো আমাদের একের প্রতি অপরের অবদান খুব কমই থাকে। বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম বন্ধুপ্রবণ দেশ। এখানে অপ্রয়োজনে মানুষ একে অপরের সঙ্গে খোশগল্পে মেতে উঠে। অন্যদিকে অপরের প্রতি অবদান রাখার সুযোগ সৃষ্টি হলে কেটে পড়ে। একে অপরকে কিভাবে মুরগি বানাবে এই ফন্দি-ফিকির আঁটতে থাকে। অথচ একজন বাবাও তার ঔরসজাত সন্তানের প্রতি অবদান না রাখলে সন্তান বলে আপনাকে বাবা হিসেবে মানি না। কেবলমাত্র আইন করে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা যায় না। শুধু একটা চুক্তির মাধ্যমে সম্পর্ক স্থায়ী করা যায় না। যেমনÑ একটি নিকাহ্নামা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক তৈরি হয়। কিন্তু স্ত্রীর প্রতি স্বামীর যথাযথ অবদান না থাকলে এক পর্যায়ে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য হয়। তদ্রুপ কোনো ধরনের পূর্বেকার অবদান রাখার প্রমাণ না থাকলে কোনো ব্যক্তি-গোষ্ঠীর কিছু আইন-বিধি শক্তি প্রয়োগ করে নিজেকে রাষ্ট্রের কর্তা ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত করতে উদ্যত হলে জনগণ শাসককে মেনে নেয় না বরং দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করে, যা গাঁয়ে মানে না আপনি মোড়ল। জনগণ তার বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে। পৃথিবীর ইতিহাস হলো পরকে আপন করে নেওয়ায় সংস্কৃতি। কাজেই ফাকা বুলি না আওড়িয়ে জনগণের মন জয় করতে হলে তাদের প্রতি পূর্বেকার কি অবদান রয়েছে তার প্রমাণ দিতে হবে। ভোগে সুখ নেই, ত্যাগেই প্রকৃত সুখ। কথাটি সত্য হলেও আমাদের অধিকাংশ কর্তাব্যক্তি ভোগের মাধ্যমে সুখ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করেন। আমাদেরকে রেখে যেতে হবে পদচারণার ছাপ, এটাই অবদান। আমার নিকট খুব হাস্যকর বিষয় হলো, আমাদের একশ্রেণির রাজনীতিবিদ ক্ষমতা গ্রহণ করে জনগণকে ভালোবাসতে চায়, অর্থাৎ তারা ভালোবাসার পরীক্ষা না দিয়ে জোর করে ভালোবাসতে চায়। আমি মনে করি জনগণকে ভালোবাসতে ক্ষমতার প্রয়োজন হয় না। বিষয়টি এমন যে, এক লোক এক মেয়েকে বলছে আমি আপনাকে ভালোবাসি, মেয়েটা বলছে ভালোবাসার প্রমাণ দেন, লোক বলছে বিয়ের পর প্রমাণ দিব। মেয়েটি বলল তাহলে আপনি অসত্য কথা বললেন কেন? অর্থাৎ বিয়ে করে আপনাকে ভালোবাসার পরীক্ষা নিতে হবে? বিয়ের পর যদি প্রমাণ হয় আপনি প্রতারক, তবে ডিভোর্স দেওয়া কঠিন বটে, কাজেই সময় থাকতে রাস্তা মাপেন। বিষয়টি ডিম আগে না মুরগি আগে বিতর্কের মতো হয়ে গেল। বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এই ধরনের সন্দেহ আবর্তে ঘুরছে। ভালোবাসা কাকে বলে? আমার দৃষ্টিতে কারো প্রতি অবদানই ভালোবাসা, এই অবদানটা যদি সে অনুরোধ করার পূর্বেই হয় তবে এটাই প্রেম। ভালোবাসা প্রেম শব্দ দুটিকে আমরা নাউন বানিয়ে ফেলছি, ভার্ব বানাতে পারলেই পৃথিবীটা অনেক সুন্দর হয়ে যেত। এক ভদ্রলোক ১৩ বছর অপেক্ষায় থেকে তার প্রেয়সীকে চিঠি দিলেন I want to love you, অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চেয়েছেন ইতিপূর্বে আপনার প্রতি আমার কোনো অবদান নেই, অবদান রাখার পরে তিনি বলবেন আই লাভ ইউ। অর্থাৎ অবদানটাই ভালোবাসার প্রমাণ।

বাংলাদেশে মানুষের একজনের প্রতি অপরের অবদান খুবই কম অথবা নেই বললেই চলে। যাতে করে আমাদের সামাজিক কলহ সহজে দূর করা যাচ্ছে না। যেমনÑ মানুষ যখন মেজাজ হারিয়ে ফেলে তখন এলোমেলো কাজ করতে থাকে। তখন তাকে শান্ত বা নিবৃত্ত করাটা অতীব জরুরি। অবস্থায় তাকে শান্ত করতে হলে এমন একজন ব্যক্তির প্রয়োজন, তার প্রতি যার অবদান রয়েছে। অবস্থায় যত বড় ক্ষমতাশালী ব্যক্তিই হোক না কেন মেজাজ হারানো ব্যক্তির নিকট তার ক্ষমতা কোনো কাজে আসবে না। ক্ষমতাশালী ব্যক্তি যদি মেজাজ হারানো ব্যক্তির হাত ধরে অথবা মাথায় হাত বুলিয়ে নিবৃত্ত করতে অনুরোধ করে, মেজাজ হারানো ব্যক্তি তার কথা শুনবে না বরং হাত ধরা মাথায় হাত দেওয়ার জন্য তাকে অপরাধী সাব্যস্ত করবে। অন্যদিকে কোনো ব্যক্তির প্রতি অপর ব্যক্তির যদি অনেক অবদান থাকে এবং প্রতিটি অবদানই নিঃস্বার্থ হয়ে থাকে, তবে অবদানকারী ব্যক্তি তার সামনে এসে দাঁড়ালে অথবা হাত দেখালেও সে শান্ত হতে বাধ্য। বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় জীবনেও কর্তা ব্যক্তিদের অবদান একেবারেই নেই অথবা কিঞ্চিত রয়েছে। বাংলাদেশের জনগণের নির্বাচিত কোনো সরকার পাঁচ বছর উত্তীর্ণ হওয়ার পর অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার সৎ সাহস দেখাতে পারেনি। নির্বাচিত হওয়ার তিন বছর না পেরোতেই জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকছে। যাতে করে শুরু হয় জনগণের সংগে সংঘাত। ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার হয়ে উঠে ফ্যাসিস্ট বা কর্তৃত্ববাদী। এরপর সরকারের পেটোয়া বাহিনী দিয়ে চলে মব জাস্টিজ বা মব ভায়োলেন্স। সাম্প্রতিক সময়ে মব জাস্টিজ শব্দ দুটি খুব বেশি চর্চিত হচ্ছে। মব জাস্টিজ অর্থ হলো উচ্ছৃঙ্খল জনতার বিচার। জনতা নিজ হাতে আইন তুলে নেওয়ার নামই মব জাস্টিজ। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে আইন ভঙ্গ করার প্রতিযোগিতা যেন থামছেই না। বিষয়টি এমন হয়েছে যে, তুলনামূলকভাবে যে ব্যক্তি আইন ভঙ্গ করে না বা কম আইন ভঙ্গ করে সে বলে আমি তো মাত্র দুইটা আইন ভঙ্গ করেছি, অন্যরা তো একশটা আইন ভঙ্গ করছে। আমার কথা হলো আমি একটা আইনই বা ভঙ্গ করবো কেন? আইন ভঙ্গ করার মধ্যে কোনো বীরত্ব নেই। তুমি অধম তাই বলে আমি উত্তম হবো না কেন? সদ্য সাবেক পতিত সরকারের সময় আদালত প্রাঙ্গণে বা আদালত হতে জেলখানায় আনা-নেওয়ার সময় কয়েক ব্যক্তি মব ভায়োলেন্সের শিকার হয়েছে। বিভিন্ন পক্ষ হতে পতিত সরকারকে বারবার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বলা হলেও তারা কর্ণপাত করেনি। জনগণ তাদেরকে শিক্ষাটাও দিয়েছে একেবারে হাতে হাতে। গত তিন মাসে বাংলাদেশের জেলা জজ কোর্ট মেট্রোপলিটন আদালতসমূহে আসামিকে আনা-নেওয়ার সময় রেকর্ড পরিমাণ মব ভায়োলেন্সের বা জনতার সহিংসতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। এমনকি নারী আসামিও বাদ যাননি।

আমাদের একশ্রেণির রাজনীতিবিদ, তথা কথিত সমাজসেবক সুশীল ব্যক্তি উপরোক্ত উদাহরণের মতো চালাক-চতুর। দেশের মানুষের প্রতি তাদের কোনো ধরনের অবদান না থাকলেও গাপটি মেরে থেকে একটু গ্যাপ পেলেই ক্ষমতা দখল করে জনগণের ওপর ছড়ি ঘুরাতে উদ্যত হয়।

এখন আমি বাংলাদেশের উপরোক্ত সমস্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কিছু দৃশ্যমান সাধারণ সমস্যা সবিনয় তুলে ধরব। . এই লোকজন চালাক প্রকৃতির হয়। . এই লোকজন অস্বীকারকারী হয়। . এই লোকজন সহজ সরল হয় না। ছলে-বলে কৌশলে নিজের হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য হেন কাজ নেই তারা করে না। নিজের উদ্দেশ্য সাধন করতে অন্যের ক্ষতি করার প্রচেষ্টাকে চালাকি বলা হয়। অন্যদিকে সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রদত্ত আকেল বা মগজ, বুদ্ধি, জান, মাল সময় নিজের এবং অপরের কল্যাণে ব্যয় করাকে বুদ্ধিমান বলা হয়। একজন ভালো মানুষ কখনো চালাক হতে পারে না। মানুষের স্বাভাবিক বৈশিষ্ট্য হওয়ার কথা বুদ্ধিদীপ্ত বা বুদ্ধিমান হওয়া।

আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি যে কোনো কিছু অস্বীকার করার মাধ্যমে কোনো মানুষের ক্রাইম শুরু হয়। যে কোনো ঘটনা স্বীকার করার মাধ্যমে ৯০% সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ঘটনাটি স্বীকার করায় বাকি ১০ শতাংশ আলোচনার সাপেক্ষে সমাধান করা সম্ভব। অস্বীকারকারীকে রিমান্ডে নিলেও স্বীকার করে না। আমি বাল্যকাল থেকে অনেক অভিভাবক তার সন্তানকে আক্ষেপের সঙ্গে বলতে শুনেছি, অমুকের ছেলেমেয়ে কত চালাক-চতুর, আর আমার ছেলেমেয়ে এত সহজ-সরল কেন? এসব প্র্যাকটিস করতে করতে আমরা বাংলাদেশিরা যেন এখন চালাক প্রজন্ম তৈরি করে ফেলছি। এখন মনে হচ্ছে চালাক হওয়ার চেয়ে সহজ বিষয় বাংলাদেশে আর কিছু নেই। কয়েকদিন পর হয়তো এই দেশে সহজ-সরল মানুষ খুঁজে পাওয়া মানে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য হবে। আমার নিকট একজন সহজ-সরল মানুষ মানে মহামূল্যবান, যা আমি দীর্ঘদিন হতে খুঁজে বেড়াচ্ছি।

এই লেখনীর মধ্যেই আমার মনে পড়ে গেল লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সদ্য সাবেক সহকারী কমিশনার (সাময়িক বরখাস্তকৃত) তাপসী তাবাচ্ছুম ঊর্মির বিষয়টি। তার বিরুদ্ধে মানহানি এবং রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা হয়েছে। চলতি মাসের ২৮ তারিখ ঢাকা মেট্রোপলিটন আদালত তাকে উপস্থিত হওয়ার জন্য সমন জারি করেছে। আমাদের দেশে মুক্তমনাদের চলাফেরা, কথা বলা পোশাক-আশাকে একটু ভিন্নতা থাকে। ঊর্মির বেলায় বিষয়টি একেবারেই ব্যতিক্রম যেমনÑ তার মাথা, কাঁধ মুখমণ্ডলের বড় একটি অংশ আমার দেখা মতো সব ছবিতে ঢাকা ছিল। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশের নারী সমাজ যা অনুকরণ করতে পারে। এমন একজন নবীন নারী কর্মকর্তা আদালতের কাঠগড়ায় উপস্থিত হবেন। এমতাবস্থায় আদালত প্রাঙ্গণে চলমান মব ভায়োলেন্স যেন ২৮ নভেম্বর সংঘটিত না হয়, বিষয়ে সরকারের সতর্ক দৃষ্টি রাখা অতীব জরুরি। অর্থাৎ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির উদ্ভব হলে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেও এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। আমাদের মনে রাখতে হবে ভুল মানুষই করে। শয়তান এসব বিষয়ে ভুল করে না। আমাদের ব্যক্তি, সমাজ, পরিবার রাষ্ট্রের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান কম বেশি ভুল করে। কেউবা অনবরত শুধু ভুল নয়, অন্যায় করলেও এক সংগে দুটি প্রমোশন পায়। যাদের খুঁটির জোর শক্তিশালী এবং দালালি চাটুকারিতাই বড় যোগ্যতা।

আমরা যারা আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করি তাদের জন্য বাংলাদেশের এসব অসংগতি খুবই বিব্রতকর। অন্যরা যেখানে বাবা-মায়ের সংগে ঈদুল ফিতর ঈদুল আজহাসহ বিভিন্ন উৎসব পার্বণে একত্রে দেশে থেকেই উদযাপন করতে পারে, যা আমাদের ভাগ্যে কমই জোটে। আমরা বছরের অধিকাংশ সময় বাংলাদেশের কার্যক্রম করলেও বিভিন্ন সময়ে কয়েকটি কর্মসূচি নিয়ে বিভিন্ন দেশে আমাদের গমন করতে হয়। প্রতি ঈদে আমার বৃদ্ধ বাবা-মা আশায় বুক বেঁধে থাকে এবং প্রস্তুতিও নিয়ে থাকে এই ঈদে বুঝি আমার সন্তান এক সঙ্গেই ঈদ উদযাপন করবে। ঈদ পূর্ববর্তী সময়ে আমার অধীনস্তদের সংগে প্রায় প্রতিদিনই ঈদের কেনাকাটাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়। ঈদের দিনই বিদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বা একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকবিরোধী কর্মসূচি থাকে। অনেক সময় দেখা যায় ইমিগ্রেশন পার হওয়ার পর মাকে ফোন করে বলি আমি এত নম্বর ফ্লাইটে যাচ্ছি। বেশিরভাগ ঈদেই এমনটি হয়, সর্বশেষ ঈদুল আজহায় আমাকে ব্যাংকক পাড়ি জমাতে হয়েছে। সেখানে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি ছিল। না হয় সানন্দে মেনেই নিলাম, কারণ নাচতে নেমে ভেংচি কাটাকে ভয় করলে হয় না। দেশের মায়া সাংগো করে বিদেশে গিয়ে কোনো না কোনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার বক্তব্য শেষ হতেই প্রশ্ন বাণে জর্জরিত হতে হয়। যেখানে ঈদের কারণে মন পড়ে আছে নিজ দেশে, সেখানে ধরনের অবমাননাকর প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এসব অনাচারের কারণে বাংলাদেশের পাসপোর্টের ভ্যালু কত নিচে নেমে গেছে যা ভাবতেও অবাক লাগে। এয়ারপোর্টগুলোতে দেখি সংশ্লিষ্ট দেশের ভিসা থাকলেও বাংলাদেশিদেরকে অনেক সময় প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না।

হৃদয়ে রক্তক্ষরণ কি জিনিস আমি জানি না। তবে আমার মনে হয় হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, কারণ আমার সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা অসাধারণ চালাকির মাধ্যমে আমাকে বোকা বানিয়ে ফেলেছে কি না? আমি বোকা হয়ে ধোঁকা খেয়ে এখন ভেবে কূল পাচ্ছি না কিসের বিপ্লব? গোপনে একান্ত সংগোপনে বিপ্লব হতে পূর্বে কখনো শুনিনি। তবে নীরব বিপ্লব হতে শুনেছি। তো নীরব বিপ্লব নয়, জ্বালাও-পোড়াও হতে স্বচক্ষে দেখেছি। সদ্য সাবেক সরকার এবং তাদের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশব্যাপী সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ওপর নির্মম জুলুম নির্যাতনের খড়গ চালিয়েছে, নিজেকে অবস্থা দেখে স্বাভাবিক রাখতে পারিনি। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য। সবার রক্তই লাল। সবাই কোনো না কোনো মায়ের সন্তান। কথাটি হৃদয়ে ধারণ করে অশ্রুসজল চোখে বারবার টিস্যু পেপার দিয়ে চোখ মুছে শক্ত হাতে কলম যোদ্ধা হয়েছি। অনেকে সংবাদপত্রে আমার লেখা পড়ে আমাকে পিছনে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশে মেধাবী তরুণদের এবং সৎ অভিজ্ঞ বয়োজ্যেষ্ঠদের সমন্বয়ে একটা সরকার যেন দেখতে পাই, আশা আমার দীর্ঘদিনের ছিল। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হয়েও জুলাই-আগস্ট সংঘাতের কে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আর কে রাজাকারের সন্তান, এসব চিন্তা করার ফুসরত ছিল না। কেবল সবার বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে, ভাবনাটা আমার জন্য যথেষ্ট ছিল। কাজেই আমি অন্তর্বর্তী সরকারকে অনুরোধ করব, কোনো ধরনের ধর্ম-বর্ণ, জাত-গোত্র এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ চিহ্নিত না করে সবার জন্য অবদান রাখুন। কোনো ধরনের জটিলতা, কুটিলতা সৃষ্টি না করে সরলতার পথে আসুন। তবেই দেশের মানুষ আপনাদেরকে আপন করে নিবে। কোমলমতি উপদেষ্টা এবং বৈষম্যবিরোধী সমন্বয়কদের বলব আপনাদের কোমল বৈশিষ্ট্যটি ধরে রাখুন। মাস্টার মাইন্ড-আন্ডার মাইন্ড তত্ত্ব জাতিকে দেখাতে যাবেন না। কারণ আপনাদের এসব মাস্টার মাইন্ড-আন্ডার মাইন্ড নামক আজগুবি তত্ত্ব দেখে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জুলাই-আগস্ট সহযোগিতা করিনি। তবেই মানুষ আপনাদের মতো কোমলমতিদের মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে আশীর্বাদ করে বলবে বাবা বেঁচে থাক দীর্ঘদিন। পরিশেষে বলা যায় এমন জীবন তুমি করিবে গঠন, মরিলে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।

লেখক: আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী সংগঠন ফ্রিডম ইন্টারন্যাশনাল এন্টি এ্যালকোহলের প্রেসিডেন্ট

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
যড়যন্ত্র মোকাবিলায় আমরা সজাগ আছি, ঐক্যবদ্ধ আছি: প্রধান উপদেষ্টা
ক্যানসারে আক্রান্ত বৃদ্ধের পাশে অভিনেত্রী মুক্তি
বৃহস্পতিবার থেকে স্বাভাবিক নিয়মে সাজেক ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা
সংবিধান সংস্কার কমিশনের কাছে ১৮ প্রস্তাব ইনসানিয়াত বিপ্লব বাংলাদেশের 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা