বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ইসকন নিষিদ্ধ ও আইনজীবী হত্যার বিচার দাবি

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
  প্রকাশিত : ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৪
অ- অ+

ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর কৃষ্ণ কনশাননেস বা ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন আখ্যা দিয়ে নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। হয়েছে বিক্ষোভ মিছিল। চাওয়া হয়েছে চট্টগ্রামে আদালত চত্বরে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ হত্যার কঠোর শাস্তি।

এই দাবিতে মঙ্গলবার রাত ৯টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জোহা চত্বরে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। তারা ইসকনকে বাংলাদেশ থেকে নিষিদ্ধের দাবি জানান এবং আইনজীবী আলিফ হত্যার বিচার দাবি করেন। প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী এ বিক্ষোভ মিছিলে উপস্থিত ছিলেন।

এসময় ‘জঙ্গি জঙ্গি, ইসকন জঙ্গি’, ‘এক দুই তিন চার, ইসকন তুই দেশ ছাড়’, ‘অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’,‘আমার সোনার বাংলায়, উগ্রবাদের ঠাই নাই’, ‘ভারতের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘মোদির দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ইসকনের কবর দে’- এমন সব স্লোগান দিতে দেখা যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীদের জোহা চত্বরে মিলিত হতে দেখা যায়। সেখানে তারা নিহত আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফের গায়েবানা জানাজা পড়েন।

এসময় উপস্থিত শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে হিন্দু মুসলমানসহ সকল ধর্মের ভেদাভেদ ভুলে আন্দোলন করেছিলেন ছাত্র-জনতা। কিন্তু পতিত সরকারের দোসর ও দিল্লির ষড়যন্ত্রে দেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর ষড়যন্ত্র চলছে। সেই উদ্দেশ্যেই চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে এবং চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহতের ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

মঙ্গলবার দিনগত মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বের হয়ে মূল ফটকে এসে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘দিল্লি না ঢাকা’, ‘চট্টগ্রামে জবাই করে, দিল্লিতে নৃত্য করে’, ‘তুমি কে? আমি কে? সাইফুল সাইফুল’, ‘ইসকন তুই জঙ্গি, আওয়ামী লীগের সঙ্গী’, ‘ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও, রুখে দাও’, ‘ইসকনের আগ্রাসন রুখে দাও, রুখে দাও’, ‘দালালি না রাজপথ, রাজপথ রাজপথ’, ‘উগ্রবাদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, ইসকনকে কবর দে’, ‘সন্ত্রাসীদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না’ স্লোগান দেন।

বিক্ষোভ মিছিল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন বলেন, ‘চট্টগ্রামে আইনজীবী সাইফুল ইসলামকে হত্যা করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টির পায়তারা করছে ইসকন। আমরা প্রশাসনের কাছে এই হত্যার সুষ্ঠু বিচার এবং বাংলাদেশে ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবি করছি।’

ইসকন নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এসময় তারা চট্টগ্রামে ইসকনের হামলায় আইনজীবী সাইফুল ইসলাম আলিফ নিহতের প্রতিবাদও জানান। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় কলেজের কাজী নজরুল ইসলাম হলের সামনে জড়ো হতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাস এলাকার প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এসময় মিছিলে যোগ দেয় শত শত সাধারণ জনতা।

এ সময় বিক্ষোভকারীদের ‘নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবার, শহীদের রক্ত বৃথা যেতে দেব না, ভারতীয় দালালরা-হুঁশিয়ার সাবধান, ইসকন হটাও দেশ বাঁচাও, ইসকনের ঠিকানা এ বাংলায় হবে না, আমার ভাই মরলো কেনো জবাব চাই, জবাব চাই- এসব স্লোগানগুলো উত্তাল হয়ে উঠে ক্যাম্পাস এলাকা।’

মিছিলটি ভিক্টোরিয়া কলেজ রোড দিয়ে ধর্মপুর মোড়ে হয়ে দৌলতপুর চৌমুহনীতে যায়। পুনরায় সেখান থেকে কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের সামনে শেষ হয়। মিছিলটি হল থেকে বের হওয়ার পরপরই আশেপাশের শতশত জনতা মিছিলে যোগ দিলে তা আরও দীর্ঘ হয়।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আজকের এই মিছিল কোনো ধর্ম বিষয়ক নয়। আমরা কখনো উগ্রবাদীদের সমর্থন করি না। আমরা চাই ইসকনকে বাংলাদেশ থেকে নির্মূল করা হোক। আজ চট্টগ্রামে যে আইনজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, আমরা এই হত্যার বিচার চাই। আমাদের সকল দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়বো না।’

চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলাম আলিফকে হত্যার প্রতিবাদে ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন ঘোষণা করে নিষিদ্ধের দাবি জানিয়েছে পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরাও। পাশাপাশি হত্যাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনার আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।

মঙ্গলবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা চত্বরে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে এ দাবি জানান তারা। মিছিল টি এম কেরামত আলী হল হয়ে থানা ব্রিজ দিয়ে জয় বাংলা চত্বরে এসে সমবেত হয়

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ৫ আগস্টের আগ পর্যন্ত আমরা সব ধর্মের মানুষ মিলে দেশ স্বাধীন করেছি। কিন্তু আজকে চট্টগ্রাম কোর্টে প্রকাশ্য দিবালোকে যা হয়েছে (মানুষ হত্যা) তা কোনো ধর্মের ধার্মিক মানুষ করতে পারে না। তারা নিঃসন্দেহে সন্ত্রাসী।

তারা বলেন, ‘যাকে গ্রেপ্তার নিয়ে এই কর্মকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, সেই চিন্ময় কুমার আসলে কে! ৫ তারিখের পর থেকে তার বক্তব্য ছিল আওয়ামী পুনর্বাসনের বক্তব্য। সে তার বক্তব্যে বলেছে হাসিনা এবং শেখ মুজিবের জন্যই ইসকন প্রতিষ্ঠা করেছে। আমরা দাবি জানাচ্ছি ইসকনকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে ঘোষণা দিতে হবে এবং যারা হামলা করেছে তাদেরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আইনের আওতায় আনতে হবে।

বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ‘সারা বাংলায় খবর দে ইসকনের কবর দে, হিন্দুবাদী আগ্রাসন রুখে দাও জনগণ, ভারতীয় আগ্রাসন রুখে দাও জনগণ, বিশ্বের মুসলিম এক হও এক হও, দিল্লি না ঢাকা- ঢাকা ঢাকা,সন্ত্রাসীদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না‘ স্লোগান দিতে থাকেন।

আইনজীবী হত্যার প্রতিবাদ ও ইসকনকে নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (হাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীরাও।

মঙ্গলবার রাত ৯ টা ৪৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় প্রধান ফটকে গিয়ে বিক্ষোভ মিছিলটি শেষ হয়। এতে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দেখা যায়।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘সনাতন-মুসলিম ভাই ভাই, বাংলাদেশে ইসকনের কোনো ঠাঁই নাই, সনাতন-মুসলিম ভাই ভাই হাবিপ্রবিতে ইসকনের ঠাঁই না, অ্যাকশান অ্যাকশান ডাইরেক্ট অ্যাকশান, ইসকনের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন, ইসকনের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না, জঙ্গিবাদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না, সন্ত্রাসীদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না, দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা, ভারতীয় আগ্রাসন ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’ স্লোগান দেন।

বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের আদালত প্রাঙ্গণে ইসকন কর্তৃক আইনজীবী হত্যার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা সনাতন-মুসলিম ভাই ভাই। সনাতন আর ইসকনকে আমরা আলাদা মনে করি। ইসকন মূলত একটি জঙ্গি সংগঠন। বাংলাদেশে ভারতীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে ইসকন। আর ইসকনকে সমর্থন দিয়ে যারাই মাঠে নামবে আমরা তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য সব সময় প্রস্তুত। আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি তারা যেন ইসকন জঙ্গি সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে ।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, ছাত্রশিবির বলেন, ছাত্রদল বলেন, তাবলীগ বলেন এই বিষয়ে আমরা সবাই একতাবদ্ধ। আমাদের দেশের সার্বভৌমত্ব নিয়ে যে বা যারা ষড়যন্ত্র করছে বা করবে, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে সেই ষড়যন্ত্র রুখে দেব।

উগ্রবাদী সংগঠন ইসকনের সন্ত্রাসী হামলায় চট্টগ্রামে অ্যাডভোকেট সাইফুল ইসলামকে হত্যার প্রতিবাদে এবং সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়েও।

মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টায় জিয়া মোড় সংলগ্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ও প্রধান ফটক প্রদক্ষিণ করে পাশের শেখপাড়া এলাকা ঘুরে ক্যাম্পাসে এসে শেষ হয়।

বিক্ষোভকালে শিক্ষার্থীরা ইসকনকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, ইসকন প্রকাশ্যে একজন আইনজীবীকে হত্যা করেছে। এটি স্পষ্টত সন্ত্রাসী কার্যক্রম। তাই ইসকনকে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিষিদ্ধ করতে হবে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লার ভিক্টোরিয়া কলেজ, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা টাইমস প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

(ঢাকাটাইমস/২৭নভেম্বর/এজে)

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
লেবানন থেকে দেশে ফিরলেন আরও ১০৫ বাংলাদেশি
গোপালগঞ্জে প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডোবায়, চালক নিহত
অনূর্ধ্ব-১৯ এশিয়া কাপ: পাকিস্তানকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে বাংলাদেশ
কলকাতায় হাসপাতাল ব্যবসায় ধস
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা