কর্মক্ষেত্রে নারীরা যৌন হয়রানি প্রতিরোধে যেভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন
নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল জনগণের অধিকার সুরক্ষায় বাংলাদেশ সংবিধানের প্রায় সকল অনুচ্ছেদেই জনগণের সমান অধিকার ভোগের নিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশের সড়কে, ফুটপাথে কিংবা জনসমাগম হয় এমন স্থানগুলোতে দৈনন্দিন প্রয়োজনে চলা ফেরার সময় প্রায় প্রতিদিন যৌন হেনস্থার শিকার হন মহিলারা। যানবাহনে কিংবা নির্জন রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময় এ ধরনের অপ্রীতিকর অভিজ্ঞতার খবর প্রায়শই শোনা যায়।
বাংলাদেশে বিভিন্ন জায়গায় যৌন হয়রানি ঘটেই যাচ্ছে। সম্প্রতি এক পাইলটের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি এবং অপেশাদারমূলক আচরণের অভিযোগ করেন ফ্লাইট সার্ভিস উপ-বিভাগে এক কেবিন ক্রু। ফ্লাইটের মাঝামাঝি সময় তারা ওই নারী কেবিন ক্রুকে ককপিটে ডাকেন। কুশলবিনিময়ের একপর্যায়ে পাইলট তার সঙ্গে অপেশাদারমূলক (ব্যক্তিগত) কথাবার্তা বলেন। পরবর্তীসময়ে ককপিটের দরজার সামনে তাকে একা পেয়ে জোরপূর্বক হ্যান্ডশেকও করতে চান।
যৌন হয়রানি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এক গবেষণায় দেখা যায়, গণপরিবহনে যাতায়াতের সময় ৯৪ শতাংশ নারী কোনো না কোনো ভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। আর হেনস্থাকারীদের অধিকাংশই মধ্যবয়সী বা বয়স্ক পুরুষ। জরিপের তথ্য অনুযায়ী ৪১ থেকে ৬০ বছর বয়সী পুরুষদের দ্বারা নীতি শিক্ষার অভাবে এ ধরনের যৌন হয়রানি বেশি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও এর কুফল সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। যৌন হয়রানির সময় তীব্র প্রতিবাদ করার জন্য মানসিক জোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। জেনে নিন যৌন হয়রানি রোধে নারীরা আত্মরক্ষার্থে যেভাবে নিজেকে রক্ষা করবেন-
দিনে-রাতের যেকোনো সময় যখন একা কোথাও যাবেন তখন সতর্ক থাকুন। চলার সময় চারপাশের মানুষ সম্পর্কে অন্যমনস্ক থাকবেন না। সব জায়গায় সতর্ক দৃষ্টি রাখুন।
ব্যবহৃত মোবাইলফোনের স্পিড ডায়াল লিস্টে সব সময় স্থানীয় পুলিশ, পরিবারের লোকজন কিংবা বন্ধুদের নাম্বর রাখুন। যাতে যেকোনো বিপদে তাদের মেসেজটি দিতে পারেন।
আমরা নারীরা বেশিরভাগ সময়ই অফিসে, স্কুল-কলেজে, বিশ্ববিদ্যালয়ে কিংবা দৈনন্দিন চলাফেরার সময় বখাটেদের কটু কথা শুনেও চুপ করে চলে যাই। ফলে এসব বখাটেরা আরও সাহসী হয়ে ওঠে। তাদের কুরুচিপূর্ণ মনোভাব উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে। তাই প্রতিবাদ করুন। মনে রাখবেন সমাজের আর দশটা মানুষ আপনার পক্ষে আছে। কখনো কখনো কৌশলে প্রতিবাদ করেও আপনি হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে পারেন।
আপনি আত্মবিশ্বাসী হোন। চলাফেরার সময় আত্মবিশ্বাসী দৃষ্টি এবং সুদৃঢ় পদক্ষেপই আপনার থেকে দূরে রাখবে বখাটেদের। পথে চলতে এরকম কাউকে সন্দেহ হলে আপনি সরাসরি তার চোখের দিকে তাকান। আপনার দৃষ্টি এবং আত্মবিশ্বাসই পারে বখাটেকে প্রতিহত করতে।
যত্রতত্র যাতায়াতের ক্ষেত্রে সাধারণত গণপরিবহন (পাবলিক ট্রান্সপের্ট) ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখবেন একা রিকশা, সিএনজি কিংবা ট্যাক্সিতে চলাফেরা করলে ওই চালাকদের কাছ থেকেও আপনি যৌন হয়রানির শিকার হতে পারেন। এমনকি স্কুলে কিংবা কলেজে যাওয়ার সময়ও একা না গিয়ে কয়েকজন মিলে চলাফেরা করুন। এক্ষেত্রে মনে রাখা প্রয়োজন যে, নিরিবিলি এলাকা এবং একা চললে এ ধরনের হয়রানি বেশি হয়।
আপনার পরিবেশ, সংস্কৃতি এবং চারপাশের অবস্থা অনুযায়ী পোশাক পছন্দ করুন। আর সেই ধরনের পোশাক পরেই বাইরে যান। এমন পোশাক পরবেন না যাতে অন্যের দৃষ্টি অযথাই আপনাকে অনুসরণ করে। মার্জিত এবং রুচিশীল পোশাকই পারে অপনার ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তুলতে।
প্রকৃত পক্ষে সমাজের গুটিকয়েক মানুষ বখাটে। এটা তাদের মানসিক সমস্যাও বটে। তাই তাদের ভয়ে গুটিয়ে না থেকে আপনার আত্মবিশ্বাস এবং প্রতিবাদই পারে চলার পথকে সুগম করতে। আধুনিক নারী হিসেবে আপনার শক্ত অবস্থান এবং ব্যক্তিত্বই পারে সাফল্যের স্বর্ণ শিখরে পৌঁছে দিতে।
চিৎকার দেওয়া ও প্রতিবাদ করা। ঘটনাস্থলের লোকজনকে সম্পৃক্ত করা। দ্রুত নিকটস্থ থানায় যাওয়া। সম্ভব হলে প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে সঙ্গে নিয়ে থানায় যাওয়া। সম্ভব হলে ছবি তুলে বা ভিডিও করে তা পুলিশকে দেওয়া।
নির্জন স্থানে হেনস্থার শিকার হলে নিজের নিরাপত্তাকে সবার আগে গুরুত্ব দেওয়া। নিজের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করুন কেউ আক্রমণ করলে তাকে শক্তভাবে প্রতিহত করবেন।
শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্ত-সামর্থ্য হওয়ার চেষ্টা করবেন। পরিবারকে তাদের কন্যা সন্তানদের শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করা।
কেউ কেউ এখন বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করলেও নানা ঝক্কি-ঝামেলার ভয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগের সংখ্যা খুব বেশি হয়না।
পুলিশ ও আইনজীবীর পরামর্শ নিতে পারেন। যৌন হয়রানির সময় চিৎকার দেয়া ও প্রতিবাদ করতে হবে। ঘটনাস্থলের লোকজনকে সম্পৃক্ত করা দরকার। দ্রুত নিকটস্থ থানায় গিয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়ে ডায়েরি করবেন। সম্ভব হলে প্রত্যক্ষদর্শী কাউকে সাথে নিয়ে থানায় যাওয়া। সম্ভব হলে ছবি তুলে বা ভিডিও করে তা পুলিশকে দেয়া। নির্জন স্থানে হেনস্থার শিকার হলে নিজের নিরাপত্তাকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব দেয়া। নিজের বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করতে হবে। কেউ আক্রমণ করলে তাকে শক্তভাবে প্রতিহত করতে হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবে শক্ত-সামর্থ্য হওয়ার চেষ্টা করা। পরিবারকে তাদের কন্যাদের শারীরিকভাবে শক্তিশালী হতে সাহায্য করা।
অফিসে যৌন হয়রানি রোধে হ্যান্ডবুক তৈরি জরুরি, সেই সঙ্গে এর সঠিক প্রয়োগও জরুরি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। তাতে যৌন হয়রানি বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করে দেয়া দরকার। নারী কর্মীদের কাছ থেকে যৌন হয়রানির কোনো ঘটনা হচ্ছে কিনা, তা জেনে নেয়া উচিত। প্রতিষ্ঠানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কীভাবে যৌন হয়রানির ঘটনাগুলো পর্যবেক্ষণ করবেন ও সমস্যার সমাধান করবেন, সে ব্যাপারেও তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া উচিত।
(ঢাকাটাইমস/৩ ডিসেম্বর/আরজেড)
মন্তব্য করুন