ফ্রিল্যান্স মার্কেটপ্লেসে স্ক্যাম থেকে নিরাপদ থাকবেন যেভাবে
সারা বিশ্বে ডিজিটাল-প্রযুক্তি ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে। এই প্রযুক্তি সম্প্রসারণের কারণে মানুষের জীবনযাত্রায়ও যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মাত্রা। আর এই সুযোগে অনলাইনে প্রতারণা বা স্ক্যামের পরিমাণও বাড়ছে। প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ প্রতারিত হচ্ছে। প্রতারণার মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম, ডেটিং, ফেসবুকসসহ বিভিন্ন অ্যাপস।
‘স্ক্যামার’ আভিধানিক অর্থে প্রতারক। আমাদের সমাজে যারা প্রতারণা করে, জানাজানি হওয়ার পর তাদের কপালে জোটে ভর্ৎসনা। মজার বিষয় হলো, নেট দুনিয়ার এ স্ক্যামারদের অর্জন রাতপ্রতি লাখ লাখ টাকা। অল্পদিনেই লাখ থেকে কোটি টাকার মালিক বনে যায় তারা।
প্রতারকরা হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। ডিজিটাইজেশনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে অনলাইন বাণিজ্য বা ই-কমার্সের পরিধি। মানুষ এখন ঘরে বসেই কেনাকাটা করছে, নানা রকম সেবা পাচ্ছে।
অনলাইনে আয়ের প্রলোভন দেখিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে প্রতারকচক্র। তাদের টোপ গিলে বিভিন্ন অঙ্কের অর্থ খুইয়েছে ব্যবসায়ী, তরুণ, শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন পেশার লোকজন।
তথ্য-প্রযুক্তি আজ নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। দেশে-বিদেশে যোগাযোগ সহজ হয়ে গেছে। পাশাপাশি বহু তরুণ-তরুণীর আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। ফ্রিল্যান্সিংয়ের মাধ্যমে তারা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে।
ই-কমার্সের সুবিধা ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। দেশ তথ্য-প্রযুক্তিতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষ ঘরে বসেই ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে। এত বিপুল সুবিধার পাশাপাশি কিছু সমস্যাও তৈরি হচ্ছে। ক্রমেই সাইবার ক্রাইম বা তথ্য-প্রযুক্তিনির্ভর অপরাধ বেড়ে চলেছে। সাধারণ মানুষ নানাভাবে হয়রানির শিকার হচ্ছে। অনলাইন প্ল্যাটফরমে চাকরি দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাসে প্রতারণা, ঋণ দেওয়া, প্রতারণামূলক অ্যাপ ব্যবহারের মতো নতুন সাইবার অপরাধ বেড়েছে।
বর্তমানে সময়ে স্ক্যামের সাথে যারা জড়িত তাদের মূল ও প্রধান লক্ষ্য হলো তারকা, উদ্যোক্তা ও মুক্ত পেশাজীবী, ইনফ্লুয়েন্সার ও অল্প বয়সী মেয়েদের ক্ষতি করা বা তাদের তথ্য চুরি করা। এমনকি বর্তমান সময়ে এআইয়ের মাধ্যমে ও অনেক ধরনের স্ক্যাম করা হচ্ছে যা সম্পূর্ণ অনৈতিক কাজ। কৃত্রিমভাবে এ কাজটি করা হয়ে থাকে যেখানে যে মানুষটাকে নিয়ে করা হচ্ছে তার কোন অস্তিত্বই থাকে না।
সম্প্রতি স্ক্যামাররা মুম্বাইয়ের এক ২৬ বছরের তরুণীর ঘটনা। অভিযোগে জানা গেছে, ভিডিও কলে তাকে জোর করে পোশাক খুলতে বাধ্য করে প্রতারক এবং তার থেকে প্রায় ২ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
স্ক্যামাররা আমেরিকান মডেল, এসকর্টদের নগ্ন ছবি, ভিডিওসহ নানা তথ্য তারা বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে চুরি করে বা কিনে নেন। এরপর তারা আমেরিকান কিছু ডেটিং সাইটে আইপি হাইড করে প্রবেশ করেন। ওইসব সাইটে আমেরিকান মডেল, এসকর্টদের ছবি-তথ্য দিয়ে তারা পোস্ট করেন এবং একটি ভার্চুয়াল আমেরিকান নম্বর সার্ভিস থেকে নম্বর নিয়ে পোস্টে জুড়ে দেন। ওইসব নম্বরে যাদের এসকর্ট সার্ভিস দরকার তারা নক করেন। যারা এসকর্ট সার্ভিসের জন্য নক দেয়, তাদের স্ক্যামাররা ‘ট্রাফিক’ বলে। ওইসব ট্রাফিককে প্রলুব্ধ করে তাদের কাছ থেকে অ্যাডভান্স অর্থ নেওয়া হয়। এরপর চলতে থাকে বিলম্ব ও অ্যাডভান্সের অঙ্ক বাড়ানোর আরও ফন্দিফিকির। ওই ট্রাফিকরা কয়েকবার করে ডলার পাঠায়। এরপর তারা বাধ্য হয়ে একসময় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এই সুযোগে অবৈধ সুবিধা লুফে নেয় স্ক্যামার। ট্রাফিকভেদে ৫ ডলার থেকে শুরু করে হাজার ডলার পর্যন্ত স্ক্যাম হয়।
সাবধানে থাকা যে কাজগুলো করণীয়
অনলাইনের চাকরি বা ফ্রিল্যান্সিয়ের লাখ লাখ টাকার কাজ দেওয়ার নাম করে কাজের পারিশ্রমিক না দিয়ে বিপরীতে অতিরিক্ত ফি নিয়ে স্ক্যামাররা সাধারণ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে। এসব জায়গায় সতর্ক থাকা জরুরি।
প্রথমত ফোনে যথাযথ সর্তকতা দিয়ে রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রত্যেকটা অ্যাপ এ অ্যাপ লক দিয়ে রাখতে হবে।
প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট কারো সাথে শেয়ার করা যাবে না যদি কখনো দরকারও হয় সেই ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে এবং মানুষটি বিশ্বস্ত কিনা সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
গণ ওয়াইফাই ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে।
জরুরি যেকোনো তথ্য বা ডেটার ব্যাকআপ রাখতে হবে।
ভালো মানের অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করতে হবে ও তা নিয়মিত হালনাগাদ করতে হবে।
ভিপিএন ব্যবহার করতে হয় এমন সমস্ত অ্যাপ ব্যবহার থেকে বিরত থাকতে হবে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্ট ও ব্যবহৃত অন্যান্য অ্যাকাউন্টসমূহে দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা সচল রাখতে হবে
বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে রিকভারি ই-মেইল ও সচল ফোন নম্বর যুক্ত করে রাখতে হবে।
যেকোনো লিংক বা কোনো বিজ্ঞাপনে যাচাই-বাছাই ছাড়া ক্লিক করা যাবে না।
ব্যক্তিগত একাউন্টে বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক থাকুন। এছাড়াও ব্যক্তিগত একাউন্ট কিংবা ফেসবুক পেইজে সন্দেহ ভজন কিছু দেখলে তাকে সাথে সাথে ব্লক করে দিন।
কখনো কখনো প্রতারকেরা ক্লায়েন্ট সেজে কাজ চূড়ান্ত হওয়ার আগে অ্যাপ্লিকেশন ফি, সফটওয়্যার কেনা বা প্রশিক্ষণের জন্য অর্থ দাবি করে। চূড়ান্ত বিল পরিশোধের সময় এ ধরনের ফি ফেরত দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়। এ ধরনের প্রস্তাব বা অর্থ দাবি করলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে, প্রথম এবং সর্বাগ্রে যা করতে হবে তা হল অপরিচিত নম্বর থেকে ভিডিও কলগুলি গ্রহণ না করা৷ ব্যবহারকারীরা তাদের গোপনীয়তা সেটিংস পরিবর্তন করতে এবং যতটা সম্ভব জালরোধী জিনিস রাখতে পারেন। আপনার ফোন নম্বর বা অন্যান্য অ্যাকাউন্ট আইডি, এমনকি পরিচিতির তালিকাও যেকোনো অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অজানা লোকেদের কাছে দৃশ্যমান না হওয়া উচিত।
স্ক্যাম বা সাইবার অপরাধের শিকার হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করুন।
(ঢাকাটাইমস/২ ডিসেম্বর/আরজেড)
মন্তব্য করুন