মানুষের মুখ

এই শহরের বেদানা

শেখ সাইফ
  প্রকাশিত : ২৬ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:২২| আপডেট : ২৬ নভেম্বর ২০১৬, ১৩:২৮
অ- অ+

বেদানা বেগম। বয়স প্রায় ৬৫। ২৫ বছর ধরে রাস্তায় আছেন। তার স্বামী পথেই মারা গেছেন। সড়ক দূর্ঘটনায় নয়। যক্ষ্মা রোগে। তা প্রায় ৩০ বছর হলো। রাস্তায় রাস্তায় লাড্ডু বিক্রি করে বেড়াতেন। বেদানা বেগম কিন্তু লাড্ডু বিক্রি করেন না। তিনি রিকশা আর রিকশা-ভ্যানের তেল বেচেন। ছোট্ট এক পটের দাম পাঁচ টাকা।

বেদানা তেল নিয়ে বসেন রাজধানী ঢাকার ইস্কাটন গার্ডেনের ফুটপাতে। হলি ফ্যামিলি মেডিকেল কলেজের ঠিক উল্টোপাশে। মবিল বিক্রির পাশাপাশি তিনি রিকশা, রিকশা-ভ্যান মেরামত করার কিছু যন্ত্রপাতিও কিনে রেখেছেন। সেগুলো দিয়ে রিকশাওয়ালারা নিজেরাই টুকিটাকি মেরামত করে তাকে দুই-চার ট্যাকা দেন।

কথা হয় বেদানা বেগমের সঙ্গে। তার মনে অনেক বেদনা। বলছিলেন সেই কথা, ‘বাবা দুঃখের কথা কইয়া আর কি হইবো? আমার মনে দুঃখের এক সাগর আছে। ওই যে শেখ সাহেব যেবার ভোটে খাড়াইছিল তখন আমার প্রথম পোলাডা হয়। হের নাম আলমগীর। হ্যারে ড্রাইভারি শিখাইছি। সরকারি লোকের চাকরি করে। বিয়া দিছি। নাতি-নাতনিও হইছে। আল্লা হেগোরে সুখে রাখছে। আমি চাই হেরা আরও সুখে থাকুক।’

- ছেলে আপনাকে দেখে না?

‘বাবারে, আমার গায়ে-গতরে অনেক মোটাসোটা। মাঝে মাঝে আমার কাছে আসে, দেখা হয়। পোলা আমার কথা জিগাইবার আগে, নিজেই কয় মা, আমার শরীরডা ভালা না। আমি কই আয় তরে ডাক্তারের কাছে লইয়া যাই। আমার কতা শুনলে তার পয়সা খরচা হইবো, হের লাইগ্যা হে তার কথা আগে কয়।’

-ছেলের বাসায় যান না?

‘পোলার বাসায় গেলে বউ মুখ কালা কইরা থাহে। দূরে থাকলেই ভালা থাকোন যায়। এই কাম করতে করতে অসুখ-বিসুখ হইতে হইতে একদিন মইরা যামু। আপনারা গাড়িতে কইরা লাশ নিয়া কবর দিয়েন। এইডাই আমার চাওয়া। সবাই সুখে আছে। শেষ বয়সে নাতি-নাতনি নিয়ে কাটাইতাম। শুধু আমার পোড়া কপাল, স্বামীরে হারাইয়া। হ্যায় থাকলে আমার সব সুখ থাকতো।’

-আর কে কে আছে?

‘আমার আরও তিন মাইয়া আছে, তাঁদের বিয়া দিয়া দিছি। মাইজা মাইয়াডা ছাড়া আর হগগোলে খুব সুখে আছে। মাইয়াডার স্বামী মইরা গেছে। তার এক পোলা, এক মাইয়া। খুব কষ্ট কইরা মাইয়াডারে বিদেশ পাঠাইছিলাম। ওমানে ৪ বছর থ্যাইকা ধরা খাইয়া চলে আইছে দ্যাশে।’

-সেখানে রোজগার হয় নাই?

‘মাইয়াডার কষ্টের টাকা সব শেষ কইরা দিছে নাতিন জামাই। তার অভাব মিডাইতে মিডাইতে সব শেষ। আমি অহন প্রতি মাসে আমার মাইজা মাইয়াডারে বিকাশ কইরা এক হাজার, দুই হাজার করে ট্যাকা পাঠাই। আমি মাঝে মধ্যেই বাড়িত যাইয়া দেইখাও আসি। মাইয়া থাকে বিক্রমপুরে, বাড়িতে।’

-ছেলেমেয়ের কাছে কিছু চান না?

‘আমি ভিক্ষা করুম, কিন্তুক আমার পোলা মাইয়াগো জ্বালাইতাম না। হেরা সুখে থাহুক। আমি সারাদিন এইহানে থাকি। রাইতে থাহি মগবাজারে, টিনের একখান ঘরে। তিন হাজার টাকা ভাড়া। সাথে আরো দুইডা মানুষ রাখছি ট্যাকা বাঁচানোর লাইগা।’

-বেচাবিক্রি কী প্রতিদিন হয়?

‘সবদিন সমান অয় না। যেদিন ব্যাচা বিক্রি থাহে না, সেদিন লোকের কাছে চাইয়া খাই।’

পাশের একটা বাড়ী দেখিয়ে বেদানা বললেন, ‘ওই বাড়ির থ্যাইক্যা মাঝে মাঝে খাইয়া আসি।’

এবার একটা পোটলা দেখিয়ে বললেন, ‘এই যে সকালে চারডা পরোডা আর ডাল কিনছি। দুইডা খাইছি আর দুইডা দুপুরে খামু। আমি শুধু মবিল আর কেরোসিন বিক্রি করি। আজ ট্যাকা আছিলো না। এক রিকশাওয়ালার কাছ থেকে টাকা ধার কইরা দুই লিটার মবিল কিনছি ১৭০ ট্যাকা দিয়া।’

ঢাকাটাইমস/২৫নভেম্বর/এসএস/টিএমএইচ

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
মানিকগঞ্জের সাবেক এমপি মমতাজ গ্রেপ্তার
কুষ্টিয়া-মেহেরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে অনিয়মের প্রমাণ পেল দুদক
কোতয়ালী এলাকায় বিশেষ অভিযান, মাদক কারবারিসহ গ্রেপ্তার ১৫
ফরিদপুরে মাদক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা