‘স্বৈরাচারী কী কাজ করেছি আমি?’

সেনাপ্রধান থাকা অবস্থায় নিজে থেকে ক্ষমতা দখল করেননি দাবি করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। তিনি বলেছেন, তিনি ওই পরিস্থিতিতে ক্ষমতা নিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাকে কেন স্বৈরাচারী বলা হয় তাও জানতে চেয়েছেন এরশাদ।
আগামী ১ জানুয়ারি রাজধানীতে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলশানে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এরশাদ এ কথা বলেন।
১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানকে হত্যার পর প্রেসিডেন্ট সাত্তারের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করেন সে সময়ের সামরিক বাহিনীর প্রধান এরশাদ। তবে তিনি দাবি করেন, তার ওপর ক্ষমতা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। এরশাদ বলেন, ‘আমি ক্ষমতা গ্রহণ করিনি, ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল আমাকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ।’
ক্ষমতা গ্রহণ করতে বাধ্য হওয়ার দাবি করে এরশাদ বলেন, ‘জাতির এক দুর্যোগময় মুহূর্তে রাষ্ট্রপতি সাত্তার সাহেব আমাকে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিলেন। ওনি সামরিক আইন জারি করেছিলেন, আমি করিনি। যেহেতু আমি সামরিক বাহিনীর সর্বজ্যেষ্ঠ ছিলাম এবং সর্বোচ্চ পদে ছিলাম সেজন্য আমাকে এই দায়িত্ব গ্রহণ করতে হয়েছিল। আমার জায়গায় যে কেউ থাকতো, তখন তাকে দায়িত্ব গ্রহণ করতে হতো।’
আমি ব্যারাকে ফিরে যেতে চেয়েছিলাম
এরশাদের দাবি, ক্ষমতার প্রতি তার কখনও মোহ ছিল না। তিনি বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, দেশে শান্তি শৃঙ্খলা ফিরে আসলে আমি ব্যারাকে ফিরে যাবো। আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছিলাম। আমার কোনো দল ছিল না। ১৯৮৪ সালে আমি নির্বাচন দিয়েছিলাম। ইচ্ছা ছিল, নির্বাচনে যারা জয়ী হবে তাদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে আমি ব্যারাকে ফিরে যাবো। কিন্তু কোনো দল নির্বাচনে না আসার কারণে ১৯৮৬ সালের ১ জানুয়ারি আমাকে জাতীয় পার্টি সৃষ্টি করতে হলো।’
এরশাদ বলেন, ‘সেদিন থেকে আমি একটা কথা বলে আসছি, আমি কিন্তু রাজনীতিতে আসতে চাইনি। রাজনীতিতে এনেছেন তারাই যারা নির্বাচন বর্জন করেছিলেন। এই কথাটা মনে রাখতে হবে। আমি কিন্তু নির্বাচন করতে চাইনি।’
‘আমি মানুষ মেরেছি? হত্যা করেছি?’
ক্ষমতা দখল করার ছয় বছরের মধ্যে গণ আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন এরশাদ। তাকে স্বৈরাচারী শাসক আখ্যা দিয়েই আন্দোলনে নামে সে সময়ের রাজনৈতিক দল। সেই থেকে স্বৈরাচারী তকমা এখনও রয়ে গেছে এরশাদের।
তবে ওস্বৈরাচারী শাসক বলায় নাখোশ জাতীয় পার্টি। বলেন, ‘আমাকে বলা হয় স্বৈরাচার। স্বৈরাচারী কী কাজ করেছি আমি? তোমরা বলো, আমি মানুষ মেরেছি? হত্যা করেছি? আমি তো উন্নয়নের কাজ করেছি। এখনও গ্রামেগঞ্জে গেলে মানুষ বলে, আপনি আবার ক্ষমতায় আসেন। কেন বলে মানুষ?’।
নিজের তোলা প্রশ্নের জবাবও দেন এরশাদ। বলেন, ‘আমার সময় সুদিন ছিল। নিরাপত্তা ছিল জীবনের, উন্নয়ন ছিল। মানুষ চায় জাতীয় পার্টি আবার ফিরে আসুক। আমি প্রমাণ করতে চাই জাতীয় পার্টি আবার ফিরে আসার মতো অবস্থায় চলে এসেছে। আমাদের সংগঠন শক্তিশালী হয়েছে। আশার আলো দেখছে জনগণ যে জাতীয় পার্টির মাধ্যমে দেশে পরিবর্তন আসতে পারে।’
জাতীয় পার্টির ওপর আল্লাহর রহমত আছে দাবি করে এরশাদ বলেন, ‘কত অত্যাচার নির্যাতনের মধ্য দিয়ে বেঁচে আছি এখনও। আল্লাহর অশেষ রহমত ও জনগণের ভালোবাসার কারণে জাতীয় পার্টি এখন কেবল বেঁচে নেই, এখন বিরাট ফ্যাক্টর পলিটিক্সের জন্য। এটা আমার দ্বারা হয়নি, আল্লাহ তাআলার সাহায্যে হয়েছে এটা।’
এরশাদের বক্তব্যের জবাবে বিএনপি যা বলছে
বিএনপির রাষ্ট্রপতি সাত্তারের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণের এই দাবির বিষয়ে দলটির ভাইসচেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদুর সঙ্গে যোগাযোগ করে ঢাকাটাইমস। তিনি বলেন, ‘এরশাদ যা বলেছেন, সেটা সত্য নয়। তিনি বৈধ রাষ্ট্রপতিকে উৎখাত করে নিজেই সামরিক শাসক জারি করেছেন। এ জন্যই তিনি অপরাধী।
দুদু বলেন, ‘তিনি (এরশাদ) নির্বাচন দেয়ার কে? পরে ওনি জাতীয় পার্টি গঠন করেছেন বা না করেছেন, তা বিবেচ্য নয়। তার কোনো বক্তব্য সুস্থ ও রাজনৈতিক ধারা বহন করে না। তিনি যে অপরাধ করেছেন, সারা জীবন জেলে থাকলেও তা শোধ হবে না।’
ঢাকাটাইমস/২৯ডিসেম্বর/এএকে/ডব্লিউবি

মন্তব্য করুন