হকার উচ্ছেদ: পথচারীদের স্বাচ্ছন্দ্য চলাচল

এম গোলাম মোস্তফা, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ১১:২৫ | প্রকাশিত : ১৯ জানুয়ারি ২০১৭, ০৮:০৬

বায়তুল মোকাররমের সামনের রাস্তায় বুধবার বেলা ১১টায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শামছুল আলম ফুটপাত ধরে হেঁটে যাচ্ছিলেন। তিনি মতিঝিল থেকে যাচ্ছেন পল্টন মোড়ে অফিসিয়াল কাজে। এই ফাঁকা ফুটপাতে হাঁটতে হাঁটতে বলতে থাকেন, ‘আহ! কত সুন্দর ফুটপাত। নাই কোনো মানাষের চাপ, নাই কোনো হকার। কত সাচ্ছন্দ্যে ফুটপাতে চলাচল করা যাচ্ছে।’

এভাবে একা একাই কথা বলে যাচ্ছিলেন শামছুল আলম। এই সময় ঢাকাটাইমসের প্রতিবেদকও যাচ্ছিলেন তার পাশ দিয়ে। কথা প্রসঙ্গে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘ভাই কী যে শান্তি লাগছে। যেখানে মতিঝিল থেকে ১০ মিনিট হাঁটলেই পল্টন আসা যায় সেখানে হকারগো উৎপাতে ফুটপাতে চলার কোনো অবস্থা থাকে না। কোনো কোনো সময় ৩০ মিনিট বা ৪০ মিনিটেও পল্টনে যাওয়া যায় না।’

এই পথচারী বলেন, ‘মেয়র হকার উচ্ছেদ করে, রাজধানীর ফুটপাত হকারমুক্ত করে আমাদের পথচলার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়ায় আমরা স্বস্তিতেই আছি।’ এভাবে ফুটপাত যেন সবসময় হকারমুক্ত থাকে সে দাবি জানান এই পথচারী।

ফুটপাতগুলো রাজধানীবাসীর চলাচলের উপযোগী করার ঘোষণা দিয়েই উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। গত রবিবার থেকে ফুটপাত থেকে হকার উচ্ছেদ শুরু হয়। এদিন মতিঝিল থেকে পল্টন পরর্যন্ত রাস্তা হকারমুক্ত করা হয়। এরপর দিন থেকে গুলিস্তানে হকার উচ্ছেদ শুরু হয়।

বুধবার গুলিস্তানে চতুর্থ দিনের মতো হকার উচ্ছেদ হয়। এদিন ফুটপাতে হকার তেমন না থাকলেও তাদের রেখে যাওয়া অল্প কিছু চৌকি ও বক্স ভেঙে ফেলা হয় বুলডোজার দিয়ে। সেই সাথে রাস্তায় হকারদের অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করা হয়।

বুধবার দুপুর থেকে সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মোহাম্মদ নাজমুস সোয়েব, মুমুন সরদারের নেতৃত্বে এ উচ্ছেদ অভিযান চলে। এ সময় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল। এছাড়াও গুলিস্তানের মোড়ে মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়।

গত ১১ জানুয়ারি নগর ভবনে এক বৈঠক শেষে মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দেন, সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছাড়া মতিঝিল, পল্টন, গুলিস্তান ও এর আশপাশের এলাকায় দিনের বেলা হকাররা বসতে পারবে না। তবে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার পর তারা এসব এলাকায় বসতে পারবে। এ ছাড়া ছুটির দিনে তাদের জন্য কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

এরই ধারাবাহিকতায় রাজধানীর গুলিস্তান, পল্টন, দৈনিক বাংলা, বায়তুল মোকাররমসহ এর আশপাশের এলাকায় ফুটপাতে হকার উচ্ছেদ অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। তবে এর মধ্যেও কিছু কিছু স্থানে ফুটপাতে বিচ্ছিন্নভাবে হকারদের পণ্য নিয়ে বসতে দেখা গেছে। পুলিশ বা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের আসতে দেখলে হকাররা মালামাল নিয়ে সরে যাচ্ছেন, পরে আবার এসে বসছেন। হকার আর সিটি করপোরেশনের মধ্যে এই ‘ইদুর-বেড়াল’ খেলা চলছে প্রতিদিনই।

প্রভাব পড়েছে যানজটেও

গত চার দিনে মতিঝিল পল্টন গুলিস্তান ঘুরে দেখা যায়, কর্মদিবসে সন্ধ্যার আগে তেমন হকার বসেনি। এর প্রভাব লক্ষ্যণীয়ভাবে পড়েছে রাস্তায়। ওই এলাকায় যানবাহনের চাপ আগের মতোই আছে। তবে যানজটের চিত্র আর আগের মতো নেই। রাস্তার গাড়িগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবেই যাচ্ছে, সিগনালে ৪/৫ মিনিট দাঁড়াতে হচ্ছে। তবে গাড়িগুলো অসহনীয় যানজটে পড়তে হচ্ছে না।

অন্যদিকে দিলকুশা ও মতিঝিল এলাকায় রাস্তার ওপর বরাবরের মতো ব্যক্তিগত গাড়ি পার্কিং করা অবস্থায় দেখা গেছে। এতে দিলকুশার ভেতরের রাস্তায় (বঙ্গভবন সংলগ্ন) যানজট এবং পথচারীদের চলাচলে ব্যাঘাত সৃষ্টি হতে দেখা গেছে।

গত দুই দিন ধরে মতিঝিল পল্টন ও গুলিস্তান এলাকায় তেমন বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে না জানিয়ে মতিঝিলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ইমরুল কবির ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মতিঝিল থেকে পল্টন পর্যন্ত কোনো যানজট নেই। রাস্তা একেবারে ফাঁকা থাকায় গাড়ি একটানে শাপলা চত্বর থেকে দৈনিক বাংলায় চলে আসছে। ফুটপাতেও কোনো হকার দেখা যাচ্ছে না। ফলে হাঁটাচলায় অনেক সুবিধা হচ্ছে।’

ফকিরাপুলের প্রিন্টিং প্রেসের কর্মী আমির উদ্দিনের সঙ্গে কথা হয় পল্টনে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘দৈনিক বাংলা পল্টন এলাকায় এখন তেমন কোনো যানজট নেই। অথচ গত সপ্তাহেও এই এলাকার সমগ্র রাস্তাজুড়েই ছিল তীব্র যানজট। আর ফুটপাতের ওপর বিভিন্ন ধরনের দোকান বসানোয় ফুটপাত দিয়ে হাঁটাই যেত না। হকারদের উচ্ছেদ মেয়রের একটা ভালো উদ্যোগ। এর ফলে দেখেন কী স্বস্তিতে রাস্তা চলাচল করা যাচ্ছে।’

হকার উচ্ছেদের বিষয়ে কথা হয় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মো. কামরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘রাজধানীতে জনগণের চলাচল নির্বিঘ্ন করতেই মেয়রের নির্দেশে এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। যেখানেই মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা হবে, সেখাই উচ্ছেদ কার্যক্রম চলবে। মানুষ যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করতে পারে এই জন্য আমাদের অভিযান চলমান থাকবে।’

এদিকে মতিঝিল-গুলিস্তান-পল্টন এলাকা থেকে হকার উচ্ছেদের প্রতিবাদে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় অভিমুখে মিছিল ও স্মারকলিপি প্রদানসহ নয় দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ হকার্স ইউনিয়ন। বুধবার পল্টনের মুক্তি ভবনে ‘পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদ চলবে না’ দাবিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। হকারদের জন্য পুনর্বাসন নীতিমালা তৈরিসহ ১০ দফা দাবি তুলে ধরা হয় সংবাদ সম্মেলনে।

ডিএসসিসির নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মো. নাজমুস শোয়েবের সঙ্গে হকার উচ্ছেদ নিয়ে কথা বললে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘হকারমুক্ত ফুটপাতের বিষয়ে মেয়রের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হচ্ছে। এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনায় সাধারণ মানুষই বেশি উপকৃত হচ্ছেন।’ এই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়নি বলেও জানান এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।

(ঢাকাটাইমস/১৯জানুয়ারি/জিএম/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজধানী বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজধানী এর সর্বশেষ

২০৫০ সালের মধ্যে ঢাকার কার্বন নিঃসরণ কমানো হবে ৭০ ভাগ

দাবি না মানলে আমরণ অনশন: হুঁশিয়ারি শিক্ষক-কর্মচারী পরিষদের

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শিশুদের মাঝে ১০ হাজার গাছ বিতরণ বাবুল্যান্ড ইনডোর প্লে-গ্রাউন্ডের

বন্যহাতির পায়ে পিষ্টে মৃত বাংলাদেশিদের ক্ষতিপূরণের দাবি

নয়াপল্টনে ককটেল বিস্ফোরণ

রাজধানীতে দুই ঘণ্টায় ৮৭ মিলিমিটার বৃষ্টি, সড়কে ভোগান্তি

রাজধানীর সুষ্ঠু ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় ডিএমপি কমিশনারের বিশেষ উদ্যোগ

পরশুরাম সমিতি ঢাকার উদ্যোগে আলাউদ্দিন নাসিমকে সংবর্ধনা

উত্তরায় বিআরটি প্রকল্পের প্রকৌশলীকে পিটিয়ে হত্যা: বাসের হেলপার গ্রেপ্তার 

পুরোনো রূপে ফিরছে লালকুঠি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :