মালিকানা দ্বন্দ্বে অনাহারে আটশ শিল্প শ্রমিক

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১২:৫৭| আপডেট : ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১৩:০৪
অ- অ+

সাভারের আশুলিয়ায় একটি ট্রান্সফরমার প্রস্তুতকারক কারখানার দুই মালিকের অন্তর্কোন্দলে চার মাস ধরে কারখানাটিতে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। বেতন না পেয়ে করুণ দশায় দিন পার করছেন কারখানাটির প্রায় আটশ শ্রমিক। শ্রমিক পল্লী থেকেও তাদেরকে উচ্ছেদের চেষ্টাও চলছে বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা।

গত শুক্রবার আশুলিয়া থানা এলাকায় গেলে সেখানেও সাদা পোশাকে পুলিশ তাদের পিটিয়ে আহত করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন শ্রমিকরা।

আশুলিয়ার নতুননগর এলাকার টেকনো ভ্যানচার নামে ওই কারখানার শেয়ারিং সেকশনের এস ওয়ার্কার পদে কাজ করতেন দেলোয়ার হোসেন। ঢাকাটাইমসকে তিনি জানান, গত বছরের নভেম্বর মাসে সবশেষ বেতন পেয়েছিলেন তারা। বকেয়া বেতনের জন্য অনেকবার মালিকপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেও তারা ব্যর্থ হয়েছেন।

কারখানাটিতে এস ওয়ার্কার পদে কাজ করতেন রাশিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘চাইর মাস বেতন না পায়া আমাগো সব বন্ধ হয়া গেছে। কই যামু, কী করমু, কিছুই বুঝতে পারতাছি না। ছেলে-মেয়েগো পড়ালেখাও বন্ধ হওয়ার দশা।’

রাশিদুল জানান, গত শুক্রবার তারা আশুলিয়া থানা এলাকায় গিয়ে পুলিশের সাহায্যে চান। এসময় টি সার্ট পরা এক জন (ওসি মহসিনুল কাদির) উত্তেজিত শ্রমিকদের ধাক্কায় পড়ে যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে কয়েক জন সাদা পোশাক পরা পুলিশ তাদেরকে পেটাতে থাকেন। এতে তিনি, দেলোয়ার ও আমিরসহ পাঁচ শ্রমিক আহত হন। পরে তাদেরকে হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

তবে শ্রমিকদের থানা প্রাঙ্গণে মারধরের ব্যাপারটি অস্বীকার করেছেন আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মহসিনুল কাদির।

ট্যাংক সেকশনের আমির আলী খান নামে অপর এক শ্রমিক ঢাকাটাইমসকে জানান, থানায় পুলিশের হাতে লাঞ্চিত হয়ে শ্রমিকরা বাইপাইলস্থ আশুলিয়া প্রেস ক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকেন। একই সময় নতুন নগর এলাকায় তাদের শ্রমিক পল্লীতে হানা দেয় কারখানা মালিক মাহতাব হোসেনের লোকজন। এসময় শ্রমিক পল্লী ছাড়তে মারধর করে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা।

শ্রমিক পল্লীতে ভাড়াটে সন্ত্রাসের হামলার সংবাদে সেখানে গেলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি দেখা যায়। এসময় শ্রমিক পল্লীর শ্রমিক ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে এতে কেউ আহত হয়নি।

শ্রমিক পল্লীর শ্রমিকদের অভিযোগ, বকেয়া বেতন না দিয়েই তাদেরকে বের করে দিতে ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা নানা অত্যাচার করছে। পুরুষরা অন্য কাজের সন্ধানে বাইরে গেলেই সন্ত্রাসীরা পল্লীতে ঢুকে নারীদের লাঞ্ছিত করার চেষ্টা করে।

শ্রমিক পল্লীতে নিরাপত্তার দায়িত্বরত আশুলিয়ার থানার উপপরিদর্শক মো. শহিদ ঢাকাটাইমসকে জানান, ‘শ্রমিক পল্লীতে শ্রমিক ও মালিকপক্ষের ভাড়াটে লোকজনের মধ্যে সামান্য উত্তেজনা বিরাজ করলে ঐ সময় পুলিশের উপস্থিতি পরিস্থিতি শান্ত হয়। কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা সেখানে ঘটেনি।’

এদিকে শ্রমিকদের বকেয়া বেতন পরিশোধের ব্যাপারে টেকনো ভ্যানচার কারখানার মালিক এরফান আহম্মেদ ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ করতে আমার কোন আপত্তি নেই। কিন্তু আমার ব্যবসায়িক অংশীদার মাহতাব হোসেন অন্যায়ভাবে পুরো কারখানার মালিকানা নিজের করে নিতে চাইছেন। এমনকি শ্রমিকদের বেতন পরিশোধেও বাগড়া দিচ্ছেন তিনি। এছাড়াও মালিকানা অর্ধেকে বন্টনের জন্য আদালতে মামলা হয়েছে। রায়ের পর সব কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

অপরদিকে একই ব্যাপারে কারখানাটির অপর স্বত্ত্বাধিকারী মাহতাব হোসেনের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এতগুলো শ্রমিকের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ব্যাপারে করণীয় কি এব্যাপারে শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘শ্রমিকরা যাতে নিজেদের পাওনা বুঝে পায় সে জন্য মালিকপক্ষের সাথে আলোচনা চলছে। আর যে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কারখানা ও শ্রমিক পল্লীর সামনে থানা পুলিশ ও শিল্প পুলিশ সদস্যরা যৌথ ভাবে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে।’

(ঢাকাটাইমস/১৮ফেব্রুয়ারি/প্রতিনিধি/ডব্লিউবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
৫ আগস্ট ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান দিবস’, সাধারণ ছুটি ঘোষণা
সংগীতশিল্পী জীনাত রেহানা আর নেই
আমাজনে কাজ করছে ১০ লাখ রোবট, মানবকর্মীদের চাকরি হারানোর শঙ্কা
গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য নির্বাচন ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই: দুদু
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা