‘বাংলাদেশকে যারা নতজানু দেখতে চায় তারা শিক্ষা পেয়েছে’

বাংলাদেশকে যারা নিচু করে দেখতে চায় তারা শিক্ষা পেয়ে গেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশটাকে যে আর অবহেলা করা যায় না, যারা বাঙালিকে নতজানু করতে চায় তারা সে শিক্ষাটা পেয়ে গেছে। তারা মাথা নিচু করিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র করতে পারবে না।’
জাতীয় ক্ষেত্রে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ১৫ জন ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা দেয়া হয়।
এবার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন গ্রুপ ক্যাপ্টেন (অব.) শামসুল আলম বীর উত্তম, ফয়জুর রহমান আহমেদ (মরণোত্তর) আশরাফুল আলম, শহীদ মো. নজমুল হক, মরহুম সৈয়দ মহসিন আলী, শহীদ এন এম নাজমুল আহসান ও প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ বিমানবাহিনী।
এছাড়া চিকিৎসাবিদ্যায় অধ্যাপক এ এইচ এম তৌহিদুল আনোয়ার চৌধুরী, সাহিত্যে রাবেয়া খাতুন ও মরহুম গোলাম সামদানী কোরায়শী। সংস্কৃতিতে অধ্যাপক এনামুল হক ও ওস্তাদ বজলুর রহমান বাদল। সমাজসেবায় খলিল কাজী ওবিই, গবেষণা ও প্রশিক্ষণে শামসুজ্জামান খান ও অধ্যাপক ললিত মোহন নাথ (প্রয়াত)এবং জনপ্রশাসনে অধ্যাপক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান পুরস্কার পেয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের পর একটি বিধ্বস্ত দেশ এখন ঘুরে দাঁড়িয়ে পৃথিবীর শক্তিশালী অর্থনীতির একটিতে পরিণত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির ৯০ ভাগই আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে হয়। আমরা নিজেরাই কাজ করার ক্ষমতা অর্জন করেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে বিশ্ব ব্যাংক একটি প্রম্ন তুলে ছিল। অভিযোগ সম্পূর্নু মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে কানাডার আদালতে। তখনই ঘোষণা দিয়ে ছিলাম পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করব। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু করেছি। এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ যাত্রা শুরু করেছিল। জাতির পিতা এমন একটি ভুখণ্ড পেয়েছিলেন যা বিট্রিশ দুইশ বছর শোষণ করেছে। এরপর ২৩ বছর পাকিস্তান শোষণ করেছে এবং নয় মাসের ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে। তার ওপর দাড়িযে শূন্য থেকে দেশ গড়ার কাজ শুরু করেছিলেন জাতির পিতা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর শুরু হয় সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পালা। তখন স্বাভাবিকভাবেই দেশের আর্থ সামাজিক অগ্রযাত্রা বন্ধ হয়ে যায়। সম্পূর্ণ এক ভিন্ন ধারায় বাংলাদেশকে নিয়ে যায়। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করা হয়। বিজয়ের ইতিহাস থেকে জাতিকে বঞ্চিত করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এরপর আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করি দেশকে এগিয়ে নিতে। …আমাদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফলে ৯৬ থেকে ২০০১ সালে দেশ খাদ্যে সয়ংসম্পূন্ন হয়। আর্থ সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এগিয়ে যায়। সামাজিক কার্যক্রমের ফলে দারিদ্র্য অনেকাংশে হ্রাস পায়।’
২০০১ সালে ক্ষমতায় না আসায় আবার বাংলাদেশ পেছনে চলে যায় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০০৯ সালে আবার ক্ষমতায় এসে বাংলাদেশকে বিশ্বে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করতে পেরেছে সরকার। আজকে বাংলাদেমের প্রবৃদ্ধি ৭.১ ভাগে উনীত হয়েছে। মাথা পিছু আয় ১৪৬৬ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। পাঁচ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমা থেকে উঠে এসেছে। হতদরিদ্রের হার ১২ ভাগে নেমে এসেছে, আরও কমিয়ে আনব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সামাজিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করেছি, বিনামূল্যে বই বিতরণ করছি, বৃত্তি দেয়া হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদেরকে। বিশেষায়িত বিভিন্ন ধরণের বিশ্ববিদ্যালয় করেছি। প্রতিটি জেলায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ট্রেনিং ইনস্টিটিউট করে কারিগরি শিক্ষা দিচ্ছি। একটি দেশকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য যা যা করণীয় তাই করে যাচ্ছি।’
২০২১ সালে দেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করব মাথা উঁচু করে, মর্যাদা নিয়ে। …আমাদের আর পরমুখোপেক্ষী হতে হবে না।’
(ঢাকাটাইমস/২৩মার্চ/জিএম/ডব্লিউবি)

মন্তব্য করুন