রাজধানীতে সাপের শুঁটকি ও শেয়ালের বিরিয়ানি (ভিডিও)

জহির রায়হান, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৪ মার্চ ২০১৭, ১৬:১৫ | প্রকাশিত : ২৪ মার্চ ২০১৭, ১৩:১৩

‘বাবা সাপ ধরতে ভয় পেলে কিভাবে তুমি কমান্ডো হবে? ধরে দেখনা! তোমার চাচ্চু ধরছে!’ এভাবেই সন্তানকে সাহস দিচ্ছেন মিরপুর থেকে সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে আসা সালমা রহমান। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সমরাস্ত্র প্রদর্শনী হচ্ছে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে (তেজগাঁও, পুরনো বিমানবন্দর)। বিশাল এলাকাজুড়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর সম্মিলিত এই প্রদর্শনী চলবে ২৯ মার্চ পর্যন্ত।

অনেক প্রদর্শনীর মধ্যে সেনাবাহিনীর সারভাইভ্যাল ভিলেজের প্রদর্শনীও চলছে। প্রবেশ পথ দিয়ে এগোলেই চোখে পড়বে এটি। এখানে কথা হলো সালমা রহমানের সঙ্গে।

ঢাকাটাইমসকে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে সেনাবাহিনীর কমান্ডো হতে চায়। তাই কমান্ডোদের সম্পর্কে জানতে এই প্রদর্শনীতে নিয়ে আসলাম। এতে করে ওর মধ্যে কমান্ডো হওয়ার ইচ্ছে আরো গাঢ় হবে।’

শুধু সালমা রহমানই নয়, সব বয়সী সাধারণ নাগরিকের জন্য প্রদর্শনী উন্মুক্ত। আর সে কারণেই প্রদর্শনীতে মানুষের সমাগম অনেক বেশি।

প্রদর্শনীর সামনেই ব্যানারে লেখা সারভাইভ্যালের মূলনীতি চোখে পড়ে। সেখানে বিশেষ কোনো পরিস্থিতিতে কমান্ডো দলের খাদ্য না থাকলে প্রকৃতি থেকে খাদ্য সংগ্রহের উপায়ের কথা লেখা আছে। বিশেষ করে জঙ্গলে ছড়ানো ছিটানো গাছপালা থেকে খাদ্য সংগ্রহ করে কিভাবে বেঁচে থাকতে হবে সেটাই দেখানো হচ্ছে এখানে। একজন কমান্ডোকে জানতে হবে কি করে প্রকৃতির সহায়তায় বাচঁতে হয়।

সারভাইভ্যাল ভিলেজে ভাইয়ের সঙ্গে এসেছে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র হাসিব। এখানে কৃত্রিমভাবে বানানো পাহাড়ি ঝর্ণা ও বাঁশের সাকো ঘুরে ঘুরে দেখছে সে। এখান আরও রয়েছে খাঁচার ভেতরে মেছো বাঘ, আটকানো রয়েছে বড় সাপ, বুনো পাখি।

দেখা মেলে বাঁশের খোলের ভেতরে বিভিন্ন ধরনের রাখা খাবার। কোন পাত্রে খরগোশের মাসালা, কোনোটায় শেয়ালের বিরিয়ানি, সাপের স্যুপ, ব্যাঙের স্যুপ আর রোস্ট, সাপের শুটকি ভূনা, বন বিড়ালের কালাভুনা ইত্যাদি। উৎসুক দর্শনার্থীরা অবাক হয়ে দেখছেন কমান্ডোদের উদ্ভট অদ্ভুত এসব খাবার। স্বাদ পরখ করার জন্য দর্শকদের কেউ কেউ শখ করে খেয়েও দেখেন এসব খাবার।

তাদের দেখানোর জন্যই কাঠের মাঁচার ওপরে দেখা যায় রান্না ছাড়া দাড়াইস সাপের শুটকি, সাপের চামড়া, কাঁচা কলা, বিভিন্ন লতাপাতা। প্রতিকূল অবস্থায় পড়লে কমান্ডোরা কী খেয়ে জীবন বাঁচান, দর্শকদের বিষয়টি বোঝানোর জন্যই এমন আয়োজন।

প্যারেড স্কয়ারে আরও প্রদর্শিত হচ্ছে ভাসমান ডক সুন্দরবন, বাংলাদেশের সমুদ্রজয়, লাইফ ক্রাফট-২৫ বিমান, এসওয়াই-১ মিসাইল এবং সাবমেরিন। বন্দুক চালানোরও অভিজ্ঞতা নেয়া যাবে প্রদর্শনীতে। সেনাবাহিনীর সদস্যরা পাশে দাঁড়িয়ে এটা চালানো শেখান। অবশ্য আসল গুলির বদলে বিশেষ ধরনের রাবারের গুলি ভরে রাখা হয়েছে বন্দুকে। এর বাইরে প্যারাস্যুটে নামার দু:সাহসিক অনুভূতিও নেওয়া যাবে এখানে। বিশেষ ক্রেনের সাহায্যে প্যারাস্যুটে নামার অনুভূতি দিতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে।

এখানো আরও রয়েছে হেলিকপ্টার, রাডার, বিমানবন্দর টাওয়ার এবং আবহাওয়া সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি। মুক্তিযুদ্ধ স্টলে আরও আছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের বিমানের আলোকচিত্র ও মুক্তযুদ্ধে সেনাবাহিনীর অংশগ্রহণের গৌরবগাঁথা।

প্রদর্শনীর আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হলো অস্ত্রবিহীন যুদ্ধ (আন আর্মড কম্ব্যাট)। সকাল সাড়ে ১০টা, ৩টা ও সাড়ে চারটায় অস্ত্রবিহীন যুদ্ধ দেখানো হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে দেখানো হয় সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের বিভিন্ন কৌশল।

বানৌজা বঙ্গবন্ধু জাহাজের আদলে তৈরী রেপ্লিকা জাহাজ। জাহাজের ভেতরে প্রবেশ করাও যাবে। পানিতে ভাসমান জাহাজটি দেখলে বোঝাই যায় না এটি আসল জাহাজ নয়। জাহাজের ওপরে রয়েছে একটি হেলিকপ্টার। সামনে ভাসমান সাবমেরিনের রেপ্লিকা।

২২মার্চ এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সমরাস্ত্র প্রদর্শনীর তথ্য কেন্দ্র থেকে জানা যায়, প্রদর্শনীটি ২৩, ২৬, ২৭ ও ২৯ মার্চ সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এবং ২৪ মার্চ সকাল সাড়ে নয়টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

২৮ মার্চ সকাল সাড়ে নয়টা থেকে বিকাল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত শুধু সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের এবং সামরিক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।

ঢাকাটাইমস/২৪মার্চ/জেআর/কেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

জাতীয় এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :