প্রচণ্ড গরমে শরীর সুস্থ ও ঠান্ডা রাখে দই

ফিচার ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:০১

প্রকৃতিতে এখন তীব্র তাপদাহ। ছাতি ফাটা রোদে প্রাণ ওষ্ঠাগত প্রায়। হিটওয়েভের কারণে বাড়ছে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়াসহ নানা ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে হৃদরোগে আক্রান্ত, ওজন বেশি রয়েছে এমন ব্যক্তি, প্রেশারের ও ডায়াবেটিসের রোগী, বয়ষ্ক মানুষ, শিশু, গর্ভবতী, খেলোয়াড় এবং যারা বাইরে কায়িক পরিশ্রমের পেশার সাথে জড়িত তারা সবচাইতে বেশি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকেন তাপপ্রবাহের সময়। গরমের সময় শরীর আর্দ্র ও ঠাণ্ডা রাখা প্রয়োজন। প্রচণ্ড গরমে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়ে। সেই অবস্থায় শরীরকে ঠিক রাখতে অন্যতম খাবার হতে পারে টক দই কিংবা মিষ্টি দই। শরীর থেকে টক্সিন দূর করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে দই।

স্বাস্থ্যসম্মত খাবারের মধ্যে দইয়ের বিকল্প নেই। দই হল এক ধরনের দুগ্ধজাত খাদ্য যা দুধের ব্যাক্টেরিয়া গাঁজন হতে প্রস্তুত করা হয়। ল্যাক্টোজের গাঁজনের মাধ্যমে ল্যাক্টিক এসিড তৈরি করা হয়, যা দুধের প্রোটিনের ওপর কাজ করে দইয়ের স্বাদ ও এর বৈশিষ্ট্যপূর্ণ গন্ধ প্রদান করে। মানুষ ৪৫০০ বছর ধরে দই প্রস্তুত করছে এবং তা খেয়ে আসছে। সারা পৃথিবীতেই এটি পরিচিত।

পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাদ্য হিসেবে এর সুনাম আছে। গরমে দই খেলে শরীর ঠান্ডা থাকে। দইয়ে রয়েছে প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, রাইবোফ্ল্যাভিন, ভিটামিন ডি, ভিটামিন বি-৬ এবং ভিটামিন বি-১২, জিংক, ফসফরাস। এ অত্যন্ত সমৃদ্ধ।

গরমে শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে দইয়ের জবাব নেই। এতে রয়েছে নানা উপকারী গুণাগুণ। এটি হজমে সাহায্য করে। দইয়ে থাকা ব্যাকটেরিয়া আমাদের ইমিউন সিস্টেমকে ভালো রাখে, পেপটিক আলসার নিরাময়ে সাহায্য করে, কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।

বিজ্ঞানীরা বলেন, দই খেলে মানব দেহে পাকস্থলীর উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বা প্রোবায়োটিক্স-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়, যার ফলে বিষাক্ত রাসায়নিকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে শরীর সুরক্ষিত থাকবে। দই খেলে আমাদের ইমিউনিটি সিস্টেম কে শক্তিশালী বানায়, হজম শক্তি বৃদ্ধি করে, শরীরের ওজন কমায়, হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি কর। দইতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে যা আমাদের হাড় আর দাঁতকে মজবুত করে তোলে। শুধু তাই নয় বিষন্নতাকে দূর করে ও চাপ মুক্ত করে, আলসারের সম্ভাবনা কমায় এবং কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে।

দইয়ের মধ্যে রয়েছে একধরনের ব্যাকটেরিয়া, যা হজমে সাহায্য করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। দই শরীরে বাজে কোলেস্টেরল হওয়া প্রতিরোধ করে হৃৎপিণ্ডকে ভালো রাখে। এটি রক্তচাপকেও ঠিকঠাক রাখতে সাহায্য করে।

দুধ খেতে ভালো না লাগলে দই খেতে পারেন। এতে দুধের মতোই পুষ্টি থাকে। হাড় ও দাঁতকে ভালো রাখে দই। এটি হাড়ে অসুখ অস্টিওআর্থ্রাইটিস ও অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধে কাজ করে। গরমের সময় ডিসেনটির সমস্যা অনেকের হয়। এক কাপ দই খাওয়া ডিসেনটির সমস্যা উপশমে অনেকটাই কাজ করবে।

দইয়ের সঙ্গে বাদাম বা ফল মিশিয়ে খেলে এর গুণ বেড়ে যায় কয়েকগুণ। গরমে শরীর সুস্থ ও শীতল রাখে টক দই। এর সঙ্গে নিজের পছন্দসই ফল দিয়ে বানিয়ে ফেলতে পারেন স্মুদি। যা অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর খাবার। ওয়ার্ক আউটের পর এই স্মুদি পান করতে পারেন।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, বাইরে থেকে কেনা দইয়ের থেকে ঘরে পাতা দইয়ের গুণ বহুগুণ বেশি। দোকানের কেনা ফুল ক্রিম মিল্ক টক দই ওজন বৃদ্ধি করে।

ঘরে যেভাবে দই বানাবেন

দেড় লিটার দুধ, আধা কাপ গুড়া দুধ ও চার টেবিল চামচ টক দই নিয়ে নিন। প্রথমে দুধ চুলায় দিয়ে জ্বালাতে হবে। কিছুটা কমে এলে একটা কাপে অল্প গরম দুধ নিয়ে গুড়া দুধ তার সাথে মিশিয়ে বাকি দুধের সাথে মিশিয়ে দিন। জ্বালিয়ে দুধ অর্ধেক করে নিন, তারপর চুলা থেকে নামিয়ে ফেলুন।

এবার দুধ চামচ দিয়ে নেড়ে নেড়ে একটু ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। খেয়াল রাখবেন যেন পুরোপুরি ঠান্ডা না হয়ে যায়। দুধটা হালকা গরম বা কুসুম গরম রাখতে হবে। আবার খেয়াল রাখতে হবে দই মেশানোর সময় দুধ যেন বেশি গরম না থাকে। তাহলে কিন্তু দই জমবে না। দুধে যেন কোনো সর না থাকে। এ জন্য ছেকে নিতে হবে। সর থাকলে দই ভালো জমবে না।

এরপর একটা বাটিতে আগের টাটকা টক দইটা নিয়ে নরমাল এগ বিটার বা চামচ দিয়ে সামান্য ফেটে নিয়ে কুসুম গরম দুধের সাথে চামচের সাহায্যে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। প্রয়োজনে পরিমাণমতো চিনি দিতে পারেন। এই দইটা কিন্তু অবশ্যই টাটকা হতে হবে আর এতে পানি থাকা যাবে না। পানি থাকলে বানানো দইও পানি ছাড়বে।

দই মেশানোর সময় দুধ এমন গরম থাকবে যেন দই মেশানোর পরেও দুধ হালকা গরম থাকে। এখন যে পাত্রে দই বসাবেন সেটাতে দই মেশানো দুধটা ঢেলে ভালোভাবে ঢেকে রান্না ঘরে একটা গরম জায়গায় রেখে দিন।

বাসায় ওভেন থাকলে সেটি অফ করে ভেতরে দইয়ের পাত্র রেখে ওভেনের দরজা বন্ধ করে রেখে দিতে পারেন। নাড়াচাড়া করবেন না। ৮-৯ ঘন্টা পরে দেখবেন দই জমে গেছে। তখনই খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হবেন না, দইটা ঠান্ডা হয়ে সেট হওয়ার জন্য নরমাল ফ্রিজে রেখে দিন ৩-৪ ঘণ্টা।

(ঢাকাটাইমস/২৭ এপ্রিল/আরজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফিচার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :