৯ দিন ধরে নিখোঁজ চবি শিক্ষার্থীসহ চারজন

ডিবি পরিচয়ে এবং দুর্বৃত্তের হাতে অপহৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তারিকুল ইসলাম রণিসহ চারজন নিখোঁজ ৯ দিন ধরে। তারা আদৌ বেঁচে আছেন কি না- এই আশঙ্কা এখন ঘিরে ধরছে পরিবারের সদস্যদের।
গত ২৪ ও ২৫ মার্চ অপহৃত হন ওই চারজনা। চবি শিক্ষার্থী রণিকে উদ্ধারে পুলিশ সাধ্যমতো চেষ্টা করার কথা বলছে। দুই আসামিকে গ্রেপ্তারও করেছে। কিন্তু অন্য তিন অপহৃতের ব্যাপারে পুলিশ কিছুই জানে না বলে দাবি করা হচ্ছে।
তবে পরিবারের সদস্যরা দাবি করছেন, ২৪ মার্চ ডিবি পুলিশ পরিচয়ে বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় পরিবহন ব্যবসায়ী এস এম শফিকুর রহমান এবং তার দুই শ্যালক মো. হাসান তারেক ও মোয়াজ্জেম হোসেন সাথীকে। এরপর থেকে তাদের কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।
রনির বড় ভাই সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘গত ২৫ মার্চ থেকে নিখোঁজ আমার ভাই। এখনো তাকে উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অপহরণের এত দিন পেরিয়ে গেলেও রণির খোঁজ না মেলায় মা-বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমার ভাইকে ফেরত চাই।’
অন্যদিকে গত ৩০ মার্চ সংবাদ সম্মেলনে হাসান তারেকের সন্তানসম্ভবা স্ত্রী ফৌজিয়া আইনুন নাহার রুমি তার স্বামী ও ভাইদের ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। তিনি জানান, ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর নগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের পরিবার। কিন্তু ডিবির পক্ষ থেকে বলা হয় তারা কাউকে তুলে নেয়নি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের এমবিএর শিক্ষার্থী রণিকে গত ২৫ মার্চ নগরীর মুরাদপুর থেকে অপহরণ করে একদল যুবক। এর আগে রণির খোঁজে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেইট এলাকায় একটি কমিউনিটি সেন্টারের পাশে তার বন্ধু নুরুল্লাহকে মারধর করে কয়েক যুবক। রণির বন্ধুদের ধারণা, ওই যুবকরাই পরে মুরাদপুর থেকে রণিকে অপহরণ করে।
এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় রণির এক বন্ধু বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাতপরিচয় ৪-৫ জনকে আসামি করা হয়। রণি অপহরণ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে হাটহাজারী থেকে পিন্টু নামের এক দোকানিকে ও পরে সুখেন কুমার নাথ নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
রনির পরিবারের পক্ষ থেকে জানা যায়, জামালপুর জেলার শাহবাজপুর গ্রামের কৃষক মো. আবুল হোসেনের ছেলে রনি। পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য রণিকে পুলিশ উদ্ধার করতে না পারায় হতাশ হয়ে পড়েছে তার পরিবার। পুলিশ কর্মকর্তারাও দিতে পারছে না কোনো তথ্য।
রনির বড় ভাই আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘কারও সঙ্গে রনির ঝামেলা বা শত্রুতা থাকার কথা নয়। কারণ সে নির্বিরোধ মানুষ। পুলিশকে আমরা অভিযোগ দিয়েছি, কিন্তু পুলিশ শুধু ‘দেখছি’ বলে সান্ত¦না দিচ্ছে। আট দিন পার হয়ে গেলেও এখনো কোনো খোঁজ পাচ্ছি না আমার ভাইয়ের।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা দুজনকে ইতিমধ্যে আটক করেছি। পিন্টু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। সুখেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে। খুব শিগগর রণিকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। রণির পরিবারকেও বিষয়টি জানানো হয়েছে।’
এদিকে, গত ২৪ মার্চ দুপুরে ছয়জন লোক নিজেদের ডিবি পরিচয় দিয়ে চট্টগ্রাম মহানগরীর খুলশী থানাধীন আল ফালাহ গলির বাসা থেকে পরিবহন ব্যবসায়ী এস এম শফিকুর রহমান এবং তার দুই শ্যালক মো. হাসান তারেক ও মোয়াজ্জেম হোসেন সাথীকে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু রবিবার (২ এপ্রিল) পর্যন্ত তাদের কোনো হদিস দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
শফিকুর রহমান ও তার শ্যালকদের তুলে নিযে যাওয়ার ঘটনা বর্ণনা দিতে গিয়ে সুলতানা রাজিয়া টু¤পা বলেন, ‘ছয়জন ব্যক্তি ডিবি পুলিশ পরিচয়ে তাদের বাসায় গিয়ে শফিকুর ও তার দুই শ্যালকের মোট আটটি মোবাইল ফোন জব্দ করে। প্রায় ৩০ মিনিট বাসায় থেকে তারা শফিকুরকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর করতে বলে। স্বাক্ষর করতে অস্বীকৃতি জানালে তারা আমার স্বামী ও ভাই মোয়াজ্জেমকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। তারেক মোটরসাইকেল নিয়ে মাইক্রোবাসের পেছনে পেছনে যেতে থাকলে পাঁচলাইশ থানার সামনে থেকে তাকেও মোটরসাইকেলসহ তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।
শফিকুরের স্ত্রী টুম্পা বলেন, ‘আমার স্বামী ও ভাইদের কোনো অপরাধ থাকলে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় বিচার হোক। কিন্তু কোনো চিহ্নিত অপরাধীকেও তো এভাবে গুম করে ফেলা হয় না।’
(ঢাকাটাইমস/২এপ্রিল/মোআ)

মন্তব্য করুন