অনিশ্চয়তায় কড়াইল বস্তির আগুনে সর্বস্বান্ত মানুষগুলো

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৯ এপ্রিল ২০১৭, ০৮:২৬| আপডেট : ০৯ এপ্রিল ২০১৭, ১০:৫৫
অ- অ+

তারা আগুনে ঘর ও ব্যবসা হারিয়েছেন প্রায় ২৪ দিন হলো। এই অবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়াতে কোনো ধরনের সরকারি সহায়তার নিশানা দেখছেন না রাজধানীর কড়াইলের বউবাজারে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্তরা। ফলে অনিশ্চয়তায় কাটছে তাদের জীবন।

এই বস্তিতে মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে অগ্নিদুর্ঘটনায় প্রায় সাড়ে চার হাজার ঘর ভূস্মীভুত হয়। সর্বশেষ ১৬ মার্চ মধ্যরাতে বউবাজার এলাকার মূল বাজার অংশে আগুন লাগে। কোনো হতাহত না হলেওেএতে বাজারের অধিকাংশ দোকান ও বেশ কিছু বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এর আগে গেল ডিসেম্বরের ৬ তারিখে বউবাজারের বেলতলা অংশের প্রায় ৫০০ বসতঘর পুড়ে যায়।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে তখন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সহায়তা করা হয় বেলতলার ক্ষতিগ্রস্তদের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিক আশ্বাস অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যেককে নগদ ১৩ হাজার টাকা এবং বাঁশ বা কাঠের খুঁটি ও সুবজ টিন দিয়ে ঘর তুলে দেয়া হয়।

কিন্তু প্রায় সাড়ে তিন মাস পরও একই এলাকার মূল বাজার অংশে প্রায় সাড়ে চার হাজার পুড়ে যাওয়া ঘরের ব্যাপারে সরকারি সহায়তার ক্ষেত্রে অনেকটাই গা ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে বলে হতাশা প্রকাশ করেন বেশ কয়েকজন ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসী।

বস্তির ভাড়াটে হেলাল সরদার, রাজ্জাক মুসল্লিসহ কয়েকজন ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘আমরা অইলাম বস্তি! কম টাকায় বস্তিতে থাকি বৌ-বাচ্চা নিয়া। কিন্তু যহন এমনে আগুন আইয়া আমাগো সব জ্বালায় শেষ কইরা দেয়, তহন মাইনসের সাহায্য ছাড়া আমগো ভবিষ্যত অন্ধকার। আগুন লাগছে চব্বিশ দিন হইছে। চোখে অন্ধকার দেখতাছি।’ এই অচলাবস্থা থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা আশা করছেন তারা।

বাড়িওয়ালা হারুন মোল্লা, হানিফ, শুক্কুর আলী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ওই বস্তির (বেলতলা) বাড়িওয়ালাগো ডাইকা সবার লিস্ট নিছে। ঘন ঘন খোঁজ নিছে কাউন্সিলররা। নগদ তেরো হাজার টেকাও দিছে। কাঠ আর টিন দিয়া ঘর তুইলা দিছে। কিন্তু আমরা এতগুলা মানুষ সব হারাইয়া কষ্টে আছি, দেখার কেউ নাই।’

সরেজমিনে দেখা যায়, ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে অনেকে নিজের খরচে নতুন ঘর তুলছেন। বাড়িওয়ালা মনির হাসান (ছদ্মনাম) বলেন, ‘আমার ৩৫টা ঘর গেছে। সরকারের এক বান টিনের লাইগা আর কয় দিন অপেক্ষা করমু? ভাড়াটিয়াগো কষ্ট সহ্য অয় না। তাই দেনা কইরা কোনো রকমে বাঁশ, কাঠ আর টিন দিয়া ঘর তুলতাছি। কাউন্সিলরের মুখ তো এহন আর দেখি না, যে জিগামু স্যার আমগো কী করলেন?’

১৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দুই নম্বর ইউনিটের যুগ্ম সম্পাদক ও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার একটি অংশের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেচ্ছাসেবক সোহেল খান ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘মোট সাড়ে চার হাজার ঘর পোড়ছে। আরো হিসাব চলতাছে, সংখ্যা বাড়তে পারে। বিভিন্ন এনজিওর মাধ্যমে আমাদের কাছে যে ত্রাণ আসে, টোকেন অনুযাযী সেগুলো বিতরণ করি। কখনো ৫০০-৬০০ জনের আসে, এগুলা সাড়ে চার হাজাররে কেমনে দেই বলেন? এমনে হুনছি সরকারের পক্ষ থেইকা টিন আর খুঁটি দেয়া অইব। কিন্তু কবে দিব আর কী কী দিব কিছু জানি না।’

কড়াইল বস্তির বউবাজার এলাকার ২০ নম্বর ওয়ার্ডের ঘরগুলোর ক্ষতির পরিমাণ কম হলেও ক্ষতিগ্রস্ত বেশির ভাগই ছিল ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনারের অধীনে।

এই বিষয়ে কথা বলার জন্য ১৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মফিজুর রহমান মফিজ ও ২০ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার নাসিরের সঙ্গে একাধিকভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।

(ঢাকাটাইমস/৯এপ্রিল/এএকে/মোআ)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
ব্রহ্মপুত্র নদে ভেসে উঠল নিখোঁজ ২ ভাইয়ের মরদেহ
তাপপ্রবাহ থেকে সুরক্ষিত থাকতে যেসব নির্দেশনা দিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
ঢাকাসহ ৫৬ জেলার ওপর দিয়ে বইছে তাপপ্রবাহ, আট জেলায় তীব্র
দাবা খেলা নিষিদ্ধ করলো আফগানিস্তান
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা