কাদেরের হৃদয়ের ভাষা ভাসে রাস্তায়!

রিমন রহমান, রাজশাহী
  প্রকাশিত : ১১ জুলাই ২০১৭, ০৮:৫২
অ- অ+

কত কঠিন কাদেরের জীবন? পুরোপুরি জানা যায়নি। কেবল ধারণা পাওয়া গেছে। তাতেই বোঝা গেছে, বড় কঠিন তার জীবন। কাদেরের পুরো নাম জানা যায়নি। জানা যায়নি পুরো ঠিকানাও। কারণ, কথা বলার মতো মানসিকতা কাদেরের সব সময় থাকে না। যখন তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল, তখনও তার কথা বলার মানসিকতা ছিল না।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের মর্গে যাওয়ার সরু রাস্তাটি গাছ পড়ে বন্ধ। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সেই বন্ধ রাস্তার ওপর আলপনা আঁকতে দেখা গেল কাদেরকে। রং বা তুলি দিয়ে নয়। চক, ইট আর কয়লার টুকরো দিয়েই আলপনা আঁকছিলেন তিনি। আলপনায় লেখা কিছু কথা, যা কিছুক্ষণের জন্য হলেও মানুষকে ভাবিয়ে তুলবে নিশ্চিত। যেন রাস্তায় ভাসছে কাদেরের হৃদয়ের ভাষা!

টানা টানা শব্দে কাদের লিখেছেন, ‘এমন জীবন তুমি করিও না গঠন, মরিলে হাসিবে তুমি, কাঁদিবে ভুবন’ ‘মানুষ কি মানুষ, শুধু ক্ষণিকের যাত্রী’ ‘অগাত সয়-সম্পত্তির চেয়েও একজন সু-শিক্ষিত সন্তানের মূল্য অনেক বেশি’ ‘শত ব্যথার মাঝেও যে হাসি, সে হাসি অনেক দামি’- এমন আরও অনেক কথা।

কাছে গিয়ে কথা বলতে চাইলে চুপচাপ কাদের। কথা বলতে পারেন কি না, জানতে চাইলে নিজের মাথাটা একবার ওপর-নিচ করে কাদের জানান দেন, তিনি কথা বলতে পারেন। তাহলে চুপচাপ কেন, জানতে চাইলে কাদের আঙ্গুল তুলে আলপনার দিকে ইশারা করলেন। সেখানে লেখা ‘কথা বলার মতো মন-মানসিকতা সব সময় থাকে না।’

বোঝা গেল কাদের কথা বলতে চান না। কিন্তু নামটা তো জানা দরকার। প্রশ্ন করলে কাদের আবার ইশারা করলেন আলপনার দিকে। সেখানে লেখা ‘কাদের, ১৯৯০ সালে ইন্টার।’ বাড়ি কোথায়, জানতে চাইলে এবারও আলপনার দিকে আঙ্গুল কাদেরের। সেখানে লেখা ‘বাড়ি ছিল দক্ষিণবঙ্গে। বিশাল এক নদীর কূলে। জেলা বরিশাল।’

বরিশাল থেকে রাজশাহী কেন, এমন প্রশ্নে কিছুটা বিরক্তের ছাপ লক্ষ্য করা গেল কাদেরের চোখে-মুখে। তবে তারপরেও আঙ্গুল তুললেন আলপনার দিকে। দেখা গেল, সেখানে কাদের লিখেছেন, ‘ছন্নছাড়া মন ঠিক হয়ে আর কোথাও দাঁড়ায় না। যেখানেই যাই, মানুষে বলে পাগল।’ এর পাশে তিনি লিখেছেন- ‘পথ চলতে হোটেলে ভাত রুটি খাবার জন্য যদি কারও মন চায়, কিছু হেল্প মি (সাহায্য করুন)। খুব ক্ষুধার্ত।’

প্রায় ৫০ বছর বয়সী কাদেরের মাথায় বাবরি চুল। গায়ের রং কালো। পরনে ময়লা একটা লুঙ্গি আর গেঞ্জি। মাথায় দিয়ে রেখেছেন একটা গামছা। পায়ের সেন্ডেল খুলে তার ওপর বসে আছেন কাদের। পাশে তার ছোট একটা বস্তা। তাতে প্রয়োজনীয় কিছু আছে হয়তো। বাইরে থেকে একটা পানির বোতল দেখা গেল।

কিছুক্ষণ পর ওই পথ ধরে এলেন রাজশাহী নার্সিং কলেজের দুই ছাত্রী। এমন আলপনা দেখে তারা মুগ্ধ। তারা মুঠোফোনে আলপনার ছবি তুললেন। কাদেরের লেখাগুলোও পড়লেন। তারপর কাদেরের হাতে দিলেন কটা টাকা।

কাদের চলে গেলেন। যাওয়ার আগে আলপনার একটা অংশে ইংরেজিতে বড় বড় করে লিখে গেলেন, ‘ডু নট উইপ (মুছবেন না)। কিন্তু একটু পরই নামল বৃষ্টি। মুছে গেল কাদেরের মুগ্ধতা ছড়ানো এ আলপনা। মুছে গেল তার হৃদয়ের ভাষা!

(ঢাকাটাইমস/১১জুলাই/আরআর/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পারমাণবিক শক্তিধর ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কে এগিয়ে?
রূপগঞ্জে গ্যাস বিস্ফোরণে দগ্ধ দুজনের মৃত্যু
কিউইদের বিপক্ষে ‘এ’ দলের সহজ জয়
বঙ্গবন্ধু পরিষদের নেতার কাছে চাঁদা দাবি: কলাবাগান থানার ওসি-এসআই প্রত্যাহার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা