যৌথ প্রযোজনার পক্ষে-বিপক্ষে: পর্ব-১
বিপর্যয় পর্বে ঢাকাই সিনেমা?

ঈদ আসে আনন্দের বারতা নিয়ে। সেই আনন্দ আরো রাঙিয়ে দেয় নতুন নতুন চলচ্চিত্র। ঈদের আগে তাই সিনেপাড়ায় আলাদা রকমের উৎসাহ-উদ্দীপনা-উত্তেজনা দেখা যায়। ঢাকাই চলচ্চিত্রের রমরমা সময়ে সিনেমা মুক্তির মিছিল নিয়ে প্রতিযোগিতাই লেগে যেত। অন্তত জনা-দশেক পরিচালক ঈদের দিনে নতুন ছায়াছবি দিতে চাইতেন প্রেক্ষাগৃহে। তাদের দাবি মেটাতে গিয়ে দশের বেশি নতুন ছবি মুক্তির রেকর্ডও আছে। সেই দিন আর নেই। এখন ঈদে বড়জোর চারটে নতুন ছবি আসে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ সারা দেশে। গত এক দশকে বেশিরভাগ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে থাকছেন শাকিব খান। এবারো তেমনটাই ছিল।
আমরা দেখলাম, যে তিনখানি নতুন ছবি এসেছে তার দুটোতে নায়ক হিসেবে আছেন শাকিব। আবার খাঁটি ঢাকাই সিনেমা ছিল মোটে একটি। সেটি শাকিব-অপুর ‘রাজনীতি’। বাকি দুটো বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার নীতিমালার আলোকে নির্মিত। এর মধ্যে ‘নবাব’ নায়ক শাকিব খান। ‘বস টু’ নায়ক জিৎ। তার মানে যৌথ প্রযোজনার বিষয়টি গতি পেয়েছে। তা কী আমাদের বৃহত্তম পড়শি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের গভীরতম একটি অধ্যায় তুলে ধরছে? নাকি আমাদের বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) নিজস্ব নির্মাণের দৈন্যের দিকটি ফুটিয়ে তুলছে? এসব প্রশ্ন তোলা যত সহজ, উত্তর মেলা কিন্তু তেমনটা নয়। এসব বিষয়ে স্পষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগও আসলে আপাতত নেই। কারণ ঈদের আগে এবার সিনেপাড়া যৌথ প্রযোজনার পক্ষে-বিপক্ষে দুটি বিভাজন রেখায় ভাগ হয়ে গেছে।
এক পক্ষ যৌথ প্রযোজনাকে ‘যৌথ প্রতারণা’ আখ্যা দিয়ে নেমে আসে রাজপথে। অন্যপক্ষ প্রেক্ষাগৃহ সুরক্ষায় যূথবদ্ধ উদ্যোগের ছবির পক্ষে করেছে জোরালো সংবাদ সম্মেলন। দুই পক্ষের যুক্তির মধ্যেই গ্রহণযোগ্য কিছু বাস্তব দিক আছে। আবার তর্ক যখন কুতর্কে রূপ নিয়েছে তখন আরো বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যা রুপালি পর্দার সোনালি অতীতকে ম্লান করে দিতে যথেষ্ট। অথচ ঈদের পরও পরিস্থিতির উন্নতি নেই। কেউ অভিভাবক হয়ে এসে দুই পক্ষকে নিয়ে বসছেন না। তাই রেষারেষিও কমছে না। স্বপ্নের নায়ক-নায়িকা-প্রতিনায়কদের বাস্তবের শত্রুতার যদি দ্রুত কোনো সুরাহা না হয়, তবে গোষ্ঠীগত স্বার্থ, ব্যক্তিগত আক্রমণ আরো উসকে দেয়ার শঙ্কা বাড়িয়ে দেয়।
যা সিনেমা নিয়ে গণমানুষের মোহ ভেঙে দিতে পারে। যার কারণে দর্শক আরো হলবিমুখ হবে। যেখানে ঢাকাই সিনেমা বিপর্যয়ের মুখে পড়বে- আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?
এদিকে ঢালিউডের সবশেষ খবর হচ্ছে, নতুন নীতিমালা না হওয়া পর্যন্ত যৌথ প্রযোজনা সাময়িক পর্যায়ে স্থগিত করার আদেশ জারি করেছে তথ্য মন্ত্রণালয়। ৯ জুলাই এসেছে এই সিদ্ধান্ত। ঈদের আগে থেকে দুই দেশের রসায়নের ছবির বিরুদ্ধে সরব ছিলেন, আপাতত তাদের জয় হলো। তবে আমরা চাই চলচ্চিত্রই বিজয়ী হোক। তাতেই উন্নতির সূচকে থাকবে বিনোদনের এই ধারা।
তায়েব মিল্লাত হোসেন: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক
পর্ব-২ আগামীকাল: প্রযোজনা নাকি প্রতারণা

মন্তব্য করুন