আশুলিয়ায় মিথ্যা মামলায় ব্যবসায়ীকে ফাঁসানোর অভিযোগ
ঢাকার আশুলিয়ায় পুলিশের বিরুদ্ধে এক ব্যবসায়ীকে ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় থানা হাজতে আটকে রেখে মিথ্যা মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। এমনকি হাজতে আটকে রাখা অবস্থায় ব্যবসায়ী আমিনুলকে নির্যাতন করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পরিবারের।
যদিও আদালতের নির্দেশ মতে, ২৪ ঘণ্টার অধিক সময় কোন আসামিকে থানা হাজতে আটকে রাখার নিয়ম নেই।
এদিকে পুলিশি গ্রেপ্তারের ভয়ে পালিয়ে বেরাচ্ছেন পরিবারের কর্তা ও আমিনুলের বাবা সাবেক ইউপি সদস্য শফর উদ্দিন।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল আজিজের এমন কর্মকাণ্ডে হতাশ ও চরম আতঙ্কে রয়েছে পরিবারটি।
আটক হওয়া কাঠ ব্যবসায়ীর বাবা ও ইয়ারপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য শফুর উদ্দিন অভিযোগ করেন, গত বুধবার রাতে পুলিশ তার ছেলে ব্যবসায়ী আমিনুলকে আটক করলেও ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় থানা হাজতে আটকে রেখে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। আর শুক্রবার সকালে তিনি মামলার ব্যাপারে জানতে পেরেছেন। এমনকি শুক্রবার দুপুর ৩টার দিকে তার ছেলেকে আদালতে পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, গত বুধবার সন্ধ্যায় নরসিংহপুর বুড়িপাড়া এলাকায় নিজ বাসার সামনে তুচ্ছ ব্যাপার নিয়ে তার সাথে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারী রাজীব। এসময় রাজীব তার কলার চেপে ধরলে ছোট ছেলে পাপ্পু প্রতিবাদ জানায়। এক পর্যায়ে ছেলে পাপ্পুর সাথেও বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে সোর্স পরিচয়দানকারী রাজীব। নিজে জনপ্রতিনিধি হিসেবে এক সময় দ্বায়িত্ব পালন করায় এসময় এলাকাবাসীও এর প্রতিবাদ জানায়। পরে এলাকাবাসীর তোপের মুখে সেখান থেকে চলে যায় রাজীব।
এরপর রাত ৯টার দিকে আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল আজিজকে ফোর্সসহ তাদের বাড়িতে নিয়ে আসেন রাজীব। এসময় তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টার সময় আবারো এলাকাবাসীর তোপের মুখে ব্যর্থ হয়ে তার বড় ছেলে কাঠ ব্যবসায়ী আমিনুলকে আটক করা হয়। এরপর পুলিশের সোর্স রাজীব তার কাছে ছেলেকে ছেড়ে দেয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তবে তার ছেলে কোন অন্যায় করেনি। বিনা কারণে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ কারণে তিনি টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।
এ ঘটনার পর হতে পুলিশি গ্রেপ্তারি এড়াতে তিনি পালিয়ে বেরাচ্ছেন। এর মধ্যে কয়েক দফা তার বাড়িতে গিয়ে তল্লাশির নামে ভাঙচুর ও পরিবারের সদস্যদের সাথে অসদাচরণ করেছেন পুলিশ কর্মকর্তা আজিজ।
তবে এ বিষয়ে অভিযুক্ত আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক আব্দুল আজিজের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে ওই ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে বলে স্বীকার করেন। এছাড়াও ব্যবসায়ীকে ছেড়ে দেয়ার জন্য ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছেন এমন অভিযোগের কথা অস্বীকার করেন। তবে গ্রেপ্তারের সময় ও মামলায় উল্লেখ করা সময়ের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মুঠোফোনটি কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে স্থানীয় রাজ্জাক ও কিরণ নামে একাধিক ব্যক্তি জানান,বুধবার রাতে পুলিশের সোর্স রাজীবের সাথে সাবেক ইউপি সদস্য ও তার দুই ছেলের বাকবিতণ্ডা হয়। এর জের ধরে এসআই আজিজ আমিনুলকে তাদের বাড়ির সামনে থেকে আটক করে নিয়ে যায়। আমিনুল ব্যবসায়িক কাজে টাঙ্গাইলে থাকেন। কয়েকদিন আগে তিনি বাড়িতে এসেছেন। সোর্স রাজীব তার প্রভাব দেখানোর জন্য এসআই আজিজকে দিয়ে মিথ্যে মাদক মামলা করেছেন বলেও তারা অভিযোগ করেন।
একজন ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের পর আদালতে না পাঠিয়ে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় থানা হাজতে আটকে রাখা সম্পর্কে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। তিনি সারাদিন থানার বাইরে ছিলেন। এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানানো হচ্ছে।
আর এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা পুলিশের অপরাধবিষয়ক পুলিশ সুপার সাইদুর রহমান ঢাকাটাইমসকে জানান, আপনি বিষয়টা অনুসন্ধান করে দেখেন কতটা সঠিক? আমার বিষয়টা জানা নেই। আর অভিযোগ পেলে আপনি অনুসন্ধানী রিপোর্ট করেন।
(ঢাকাটাইমস/২০অক্টোবর/আইআই/এলএ)