রাজশাহী-৩: আ.লীগে আয়েন-আসাদ বিএনপিতে মিলন এগিয়ে

ব্যুরো প্রধান, রাজশাহী
 | প্রকাশিত : ১১ আগস্ট ২০১৮, ০৯:২৫

পবা ও মোহনপুর উপজেলার তিনটি পৌরসভা এবং ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৩ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এক ডজন নেতা মনোনয়ন-প্রত্যাশী। তাদের মধ্যে ক্ষমতাসীন দলে দুজন ও বিএনপিতে একজন এগিয়ে বলে নেতাকর্মীরা বলছেন।

প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ লোকের এই আসনে ১৯৯১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-দলীয় এমপি ছিলেন। ২০০৮ সালে রাজশাহী সদর আসন থেকে আলাদা হওয়ার পর দুই মেয়াদ ধরে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে।

এই আসনের বড় একটি অংশ রাজশাহী সিটি করপোরেশনের চারপাশ ঘিরে আছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় এটি সব রাজনৈতিক দলের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রধান দুই দলের যে ডজন খানেক নেতা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক, তাদের বেশির ভাগের বাড়ি নেই এই সংসদীয় এলাকায়। আওয়ামী লীগের দুজন ও বিএনপির একজন বাদে বাকি সবাই রাজশাহী মহানগর থেকে গিয়ে এ আসনে নির্বাচন করতে চান।

মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের অনেকে এ আসনে প্রচারণা চালাচ্ছেন বহু দিন আগে থেকে। প্রতিদিন তারা ভোটারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন। চাইছেন সমর্থন। দিচ্ছেন প্রতিশ্রুতি। পোস্টার, ব্যানার আর ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পবা ও মোহনপুরের বিভিন্ন এলাকা। কৃষি ও বাণিজ্যিক সম্ভাবনার এই দুই উপজেলাকে ঘিরে সাম্ভাব্য প্রার্থীরা ভোটারদের শোনাচ্ছেন নানা উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা।

মনোনয়ন দৌড়ে আওয়ামী লীগের দুজন ও বিএনপির একজন মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন বলে মনে করেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। তারা বলছেন, আওয়ামী লীগ থেকে মূল লড়াইয়ে থাকবেন বর্তমান এমপি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আয়েন উদ্দিন এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ। আর বিএনপির আধা ডজন মনোনয়ন-প্রত্যাশীর মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এগিয়ে থাকবেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন।

২০০৮ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন থেকে পবা এবং বাগমারা থেকে মোহনপুর উপজেলা বাদ দিয়ে রাজশাহী-৩ আসন সৃষ্টি করা হয়। এ আসনে ২০০৮ সালে বিএনপির কবির হোসেনকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে এমপি নির্বাচিত হন জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নির্যাতিত সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন। তবে মেরাজ মোল্লা মনোনয়ন না পেলেও নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং আয়েন উদ্দিনের কাছে প্রায় ৭২ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারেন।

ছাত্রলীগ দিয়ে রাজনৈতিক জীবন শুরু করা এমপি আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘আমার পরিবারের সদস্যরাও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে আমি প্রতিবাদ করায় গ্রেপ্তার হই। সাড়ে তিন বছর জেলে ছিলাম। এর প্রতিদান হিসেবে দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা আমার ওপর আস্থা রেখে ২০১৪ সালের নির্বাচনে মনোনয়ন দেন। গত সাড়ে চার বছরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করেছি। তাই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ড আবার আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমার বিশ্বাস।’

আয়েন উদ্দিন, মেরাজ উদ্দিন মোল্লা ও আসাদুজ্জামান আসাদ ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে এ আসনে মনোনয়ন-প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি বেগম আখতার জাহান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মানজাল, সাংগঠনিক সম্পাদক আলফোর রহমান, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি রবিউল আলম বাবু এবং পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা ইয়াছিন আলী।

এ আসনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন দৌড়ে আয়েন উদ্দিন ও আসাদুজ্জামান আসাদের পাশাপাশি এগিয়ে আছেন মুক্তিযোদ্ধা ইয়াছিন আলীও। সবচেয়ে বেশি প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন আসাদুজ্জামান আসাদ। প্রায় প্রতিদিন নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগ করছেন তিনি। এ আসনে আগামী নির্বাচনে তিনি মনোনয়নের সবুজ সংকেত পেয়েছেন বলে তার দাবি।

বিএনপি থেকে অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন ছাড়া আরও পাঁচ নেতা দলের মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট কামরুল মনির, রাজশাহী বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রায়হানুল হক রায়হান।

পবার বাসিন্দা রায়হানুল হক রায়হান ছাড়া বাকি পাঁচজন বহিরাগত। আগে তাদের বাড়ি রাজশাহী অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় থাকলেও সবাই এখন মহানগরের বাসিন্দা। মনোনয়নের মাঠে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন শফিকুল হক মিলন। এলাকায় অবস্থান করে তিনি প্রতিদিন গণসংযোগসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সমর্থন আদায়ে মতবিনিময় করছেন।

মিলনের সমর্থকরা জানান, এ আসনে বিএনপি থেকে তরুণ নেতা শফিকুল হক মিলনের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ২০১৩ সালের রাজশাহী সিটি করেপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পাশাপাশি শফিকুল হক মিলনও প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দেন। তখন দলের হাইকমান্ড তাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশের পাশাপাশি রাজশাহী-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন দেয়ার আশ্বাস দেয়।

ছাত্রদলের মাধ্যমে মিলনের রাজনীতি শুরু। রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত নেতা ছিলেন তিনি। পরবর্তী সময়ে পর পর দুবার রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। ফলে সাংগঠনিকভাবে তৃণমূল পর্যায়ে ত্যাগী নেতা হিসেবে তার গড়ে উঠেছে।

আশির দশক থেকে রাজনীতিতে সংশ্লিষ্ট মিলন বলেন, ‘বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশে আমি ২০১৩ সাল থেকে পবা ও মোহনপুরে গণসংযোগ করছি। এই আসনের নেতাকর্মীরা আমার পাশে রয়েছেন। আর ভোটররা আমাকে নির্বাচিত করার প্রতিশ্রুত দিচ্ছেন। আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হলে আমি নির্বাচিত হব বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।’

জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইতিমধ্যে মনোনীত হয়ে আছেন কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগর সভাপতি শাহাবুদ্দিন বাচ্চু। তিনি জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি থাকাকালে পবা ও মোহনপুরে সংগঠনকে শক্তিশালী করেন। পুরস্কার হিসেবে পার্টির প্রধান এইচ এম এরশাদ এ আসনে তাকে মনোনয়নের ঘোষণা দেন।

এ আসনে জামায়াতের কোনো প্রার্থীর নাম আপাতত শোনা যাচ্ছে না। তবে এর আগে এখানে জামায়াতের প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।

(ঢাকাটাইমস/১১আগস্ট/আরআর/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

আ.লীগ জনগণকে কবরস্থ ক‌রে ক্ষমতা দখলে রাখতে চায়: রিজভী

বাংলাদেশ ও ভারত ভবিষ্যৎ বিশ্বে নানা ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবে: ড. সেলিম মাহমুদ

রাজনৈতিক দলগুলো কথা বন্ধ রাখলে গণতন্ত্র পিছিয়ে পড়বে: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী

স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পতাকা ওড়ানোসহ ছাত্রলীগের একগুচ্ছ কর্মসূচি ঘোষণা

একদলীয় শাসনে বাংলাদেশে আজ মুক্ত গণমাধ্যম অনুপস্থিত: মঈন খান

উপজেলা নির্বাচনও ডা‌মি, বর্জন করুন: রিজভী 

সত্য বললে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে আঘাত লাগলে কিছু করার নেই: ওবায়দুল কাদের

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সভা সোমবার

ঝিনাইদহ-১ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী নায়েব আলী

টাকা পাচারের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক ও অন্য ব্যাংকের অবস্থা খুবই করুণ: অলি

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :