বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তিন শতাধিক গার্মেন্টসের রপ্তানি

ঢাকাটাইমস ডেস্ক
| আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০১৮, ০৯:২২ | প্রকাশিত : ০৫ অক্টোবর ২০১৮, ২২:৩৩
ফাইল ছবি

সংস্কারে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি না হওয়ায় তিন শতাধিক পোশাক কারখানার রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার৷ কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর (ডিআইএফই) থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হচ্ছে৷ খবর ডিডব্লিউ’র।

চিঠিতে মূলত কারখানার বন্ড সুবিধাসংক্রান্ত সেবা বন্ধ করার অনুরোধ জানানো হবে৷ আগামী রবিবার এই চিঠি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন ডিআইএফই এর মহাপরিদর্শক সামছুজ্জামান ভূঁইয়া৷ তিনি বলেন, বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও এই কারখানাগুলোতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়নি৷ কেউ কেউ তো কোনো কাজই শুরু করেনি৷

ডিআইএফই জানিয়েছে, কোনো কারখানা সাব কন্ট্রাক্ট ভিত্তিতে পোশাক তৈরি করে থাকলেও ওই সুবিধাও (বন্ড ট্র্যান্সফার) বাতিল করার অনুরোধ জানানো হবে৷ এর মধ্যে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএভুক্ত কারখানা রয়েছে ২১৫টি৷ এর আগে একই কারণে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকেও আলাদা দু'টি চিঠিতে সদস্যভুক্ত কারখানাকে দেওয়া ইউডি (ইউটিলিটি ডিকারেশন বা কাঁচামালের প্রাপ্যতার ঘোষণা) সংক্রান্ত সেবা প্রদানে নিষেধাজ্ঞার অনুরোধ জানানো হয়৷ এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে কারখানাগুলোর রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়বে৷ অবশ্য বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এ নিষেধাজ্ঞা এখন পর্যন্ত কার্যকর করেনি বলেই জানা গেছে৷

ডিআইএফই'র মহাপরিদর্শক সামছুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, ‘কারখানাগুলোকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্বেও কারখানার ভবনের কাঠামো, অগ্নি কিংবা বৈদ্যুতিক নিরাপত্তায় কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি৷ বহুবার তাদের সঙ্গে সভা করেছি৷ এরপর তাদের সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়েছে৷ অনেক কারখানা তো কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি৷ এখন কারখানার শ্রমিকের নিরাপত্তা, দেশের ভাবমূর্তির স্বার্থেই এ সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। কেননা, এসব কারখানার কোনো একটিতে দুর্ঘটনা ঘটলে এবং তাতে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হলে, তার দায় পুরো গার্মেন্টস খাতকেই নিতে হবে৷ ইতিমধ্যে গার্মেন্টস খাতের দুটি সংগঠনকে চিঠি পাঠানো হয়েছে৷’

বন্ধের তালিকায় থাকা গার্মেন্টসগুলোর মধ্যে কোনো নামকরা প্রতিষ্ঠান আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না, এই ধরনের কোনো প্রতিষ্ঠান নেই৷ এগুলো ক্ষুদ্র গার্মেন্টস, অনেকেই সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে।’

ডিআইএফই'র মহাপরিদর্শক বলেন, ‘কারখানাগুলো যাতে বন্ড ট্র্যান্সফার বা সাব কক্ট্রাক্টভিত্তিতেও কোনো কাজ পরিচালনা না করতে পারে, বন্ড কমিশনারেটকে সে অনুরোধও জানাবো৷ যেসব কারখানার সংস্কার ২০ শতাংশের নিচে, তাদের ক্ষেত্রে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ তবে কারখানাগুলো সংস্কারে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি করতে পারলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হবে।’

এর আগে বিজিএমইএ ও বিকেএমইএতে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, কারখানাগুলোর মালিক কিংবা প্রতিনিধিদের সঙ্গে গত বছরের মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে অন্তত ৩২টি সভা করা হয়েছে এবং দুই দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে৷

রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারের দেওয়া বন্ড সুবিধার আওতায় শুল্কমুক্ত সুবিধায় কাঁচামাল ও এক্সেসরিজ আমদানি করতে পারে৷ এক্ষেত্রে কাঁচামালের প্রাপ্যতার ঘোষণা বা ইউডি অনুমোদনের ক্ষমতা পোশাক মালিকদের দুটি সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ'র হাতে৷ এই ঘোষণা দেওয়ার মাধ্যমে কাঁচামাল আমদানি করতে পারে কারখানাগুলো৷ আর এসব কাঁচামাল আমদানি কিংবা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করার পর তা চূড়ান্তভাবে অনুমোদনের এখতিয়ার বন্ড কমিশনারেটের হাতে৷ এসব সেবা বন্ধ থাকলে প্রকৃতপক্ষে কোনো কারখানার পক্ষে রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনা করা একেবারেই সম্ভব নয়৷

ডিআইএফই'র চিঠি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট কারখানার প্রনিতিধিদের সঙ্গে সভা করেছে গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ৷ বিজিএমইএ'র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘যেসব কারখানা সংস্কার চালিয়ে যেতে পারবে, সেগুলোর ইউডি আমরা বন্ধ করতে চাই না৷ আগামী সপ্তাহে ডিআইএফই'র সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে৷’

‘হঠাৎ করে বন্ধ করে দিলে সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে৷ যারা সংস্কার করতে পারবে, তাদের তো মারার মানে হয় না৷ আর যারা সংস্কার করতে পারবে না, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে তাদের ‘এক্সিটের’(বন্ধ করা) উপায় বের করতে হবে৷ আমরা সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি৷ যাদের নাম তালিকায় এসেছে, তাদের অনেকের পক্ষে যুক্তিও আছে৷ আমি নিজে আগামী সপ্তাহে চট্টগ্রামে যাচ্ছি, সেখানে যাদের নাম আছে, তাদের সঙ্গে বৈঠক করব৷ তবে ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা কোনোভাবে চলবে না৷’

২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় বহু শ্রমিক হতাহতের পর দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানা সংস্কারের জোর দাবি ওঠে৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরই ইউরোপ ও অ্যামেরিকার ক্রেতাদের কাছে রপ্তানি করে এমন দুই হাজার ২০০ কারখানা সংস্কারে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স নামে দুটি জোট গঠিত হয়৷ তাদের কার্যক্রম এখন শেষ হওয়ার পথে৷ অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সভুক্ত কারখানাগুলোর সংস্কারে অগ্রগতি ৯০ শতাংশের ওপরে৷ তবে এ দুটি জোটভুক্ত ক্রেতাদের কাছে পোশাক রপ্তানি হয় না, এমন দেড় হাজার কারখানা সংস্কারের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের শুরুতে উদ্যোগ নেয় সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়৷

তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এ কারখানাগুলোর সংস্কার হয়েছে গড়ে এক তৃতীয়াংশ৷ এই সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া, স্থানান্তর কিংবা অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সে যুক্ত হওয়া কারখানা বাদ দিয়ে এখন ৭৪৫টি কারখানার সংস্কার দেখভাল করছে ডিআইএফই৷ গত এক বছর ধরে দফায় দফায় সভা করেও খুব কম সংখ্যক কারখানায়ই আশানুরূপ সংস্কার হয়েছে৷ সর্বশেষ গত ফেব্রুয়ারিতে কারখানাগুলোকে ছয় মাসের সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়৷ অন্যথায় বন্ধ করার হুমকিও দেওয়া হয়৷ এরপরই হার্ডলাইনে গেল ডিআইএফই৷

ডিআইএফই'র এই সিদ্ধান্তের ব্যাপারে জানতে চাইলে জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, ‘হঠাৎ করেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণযোগ্য নয়৷ বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ এতদিন কী করেছে? কেন এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো? আমার শ্রমিকরা বেকার হোক সেটা যেমন আমি চাই না, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কারখানায় কোনো শ্রমিক কাজ করুক, সেটাও চাই না৷ আমরা বিষয়টির একটা সুষ্ঠু সমাধান চাই৷’-ডয়েচে ভেলে

(ঢাকাটাইমস/০৫অক্টোবর/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

অর্থনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

অর্থনীতি এর সর্বশেষ

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :