‘ঘরবন্দি’ এম কে আনোয়ার

বোরহান উদ্দিন, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ১২ জুন ২০১৭, ১৫:২২ | প্রকাশিত : ১২ জুন ২০১৭, ০৯:০০

সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর যোগ দেন বিএনপির রাজনীতিতে। ৩৪ বছরের পেশাজীবনে যেমন সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন, তেমনি রাজনীতিতে যোগ দিয়ে অল্পদিনেই হয়ে ওঠেন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। সজ্জন ও মেধাবী রাজনীতিবিদ হিসেবেও পরিচিত পান তিনি। পাশাপাশি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে তাকে সরব দেখা গেছে মাঠে-রাজপথে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার এখন অনেকটা ‘ঘরবন্দি’।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতাকে গত প্রায় দুই বছর ধরে রাজনীতিতে দেখা যাচ্ছে না। নাশকতার মামলায় আটক হয়ে ছয় মাস কারাগারে থেকে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পান তিনি। কিছুদিন পর চিকিৎসার জন্য চলে যান ভারতে। চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরে আসার পরও তাকে আর তেম দেখা যায়নি।

জানা গেছে, শারীরিক অসুস্থতায় সেভাবে চলাফেরা করতে না পারায় কোথাও যাচ্ছেন না এম কে আনোয়ার। এমনকি তিনি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও অংশ নিতে পারছেন না।

তার ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা গেছে, ডাক্তারি পরীক্ষায় তার শরীরে সেভাবে মারাত্মক সমস্যা ধরা না পড়লেও শরীর ভীষণ দুর্বল। বেশির ভাগ সময় এলিফ্যান্ট রোডের নিজ বাসায় শুয়ে-বসে তার সময় কাটছে। নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

গত বছর দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর গঠিত নতুন কমিটিতে কুমিল্লার জনপ্রিয় নেতা এম কে আনোয়ারকে রাখা হয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে।

দশম সংসদ নির্বাচনের আগে সরকারবিরোধী আন্দোলনে সরাসরি মাঠে না থাকলেও নাশকতা, উস্কানিমূলক বক্তব্যের অভিযোগে বিভিন্ন স্থানে ২১টি মামলা হয় এম কে আনোয়ারের বিরুদ্ধে। একাধিকবার গ্রেপ্তার হয়ে জেলও খাটেন। ২০১৫ সালের ১৮ আগস্ট কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বাসে পেট্রোলবোমা হামলায় আটজন নিহত হওয়ার ঘটনার মামলায় সাবেক এই সচিবকে কারাগারে পাঠান আদালত।

প্রায় ছয় মাস জেল খেটে গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পান তিনি। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল থেকে জামিনে মুক্তি পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য ১০ এপ্রিল দিল্লি যান এম কে আনোয়ার। সেখানে তিনি হরিয়ানার মেদান্তা হাসপাতালে হৃদরোগ ও কিডনির চিকিৎসা নেন। এরপর দেশে ফেরার পর তাকে খুব বেশি প্রকাশে দেখা যায়নি।

দলীয় কর্মসূচি তো দূরের কথা, সবশেষ গত ২১ মে অনুষ্ঠিত দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও তিনি যেতে পারেননি শারীরিক দুর্বলতার কারণে।

জানা গেছে, চিকিৎসা নিয়ে দেশে আসার পর থেকে তার বেশির ভাগ সময় কাটছে এলিফেন্ট রোডের নিজের বাসায়। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর এম আব্দুল্লাহর তত্ত্বাবধানে নিয়মিত চিকিৎসা নেন।

এর মধ্যে কেবল দুই দিন তাকে দেখা গেছে বেরোতে। গত ১০ মে খালেদা জিয়ার ভিশন-৩০ ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন তিনি। এরপর নাশকতার এক মামলায় গত ১৫ মে ঢাকার সিএমএম কোর্টে হাজিরা দিতে যান এম কে আনোয়ার।

তার বর্তমান অবস্থার খোঁজ নিতে সম্প্রতি এম কে আনোয়ারের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও ওপ্রান্তে কেউ তা ধরেননি। পরে তার ব্যক্তিগত সহকারী বশির উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘স্যারের (এম কে আনোয়ার) শরীর অনেক দুর্বল। বেশির ভাগ সময় বাসায় শুয়ে থাকতে হয়। এ কারণেই তাকে বাইরে তেমন একটা দেখা যায় না।’

তবে নিজ এলাকার দলীয় নেতাকর্মীরা নিয়মিত তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এমনটা জানিয়ে বশির উদ্দিন বলেন, ‘দলের সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন তিনি। নেতাকর্মীরাও প্রয়োজন হলে আসেন। সমস্যার সমাধান করে দেন।’

১৯৫৬ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগ দেয়ার মধ্য দিয়ে সরকারি চাকুরে হিসেবে পেশাজীবন শুরু হয় এম কে আনোয়ারের। ১৯৯০ সাল পর‌্যন্ত তার ৩৪ বছরের পেশাগত জীবনে তিনি ফরিদপুর ও ঢাকার ডেপুটি কমিশনার, জুটমিল কর্পোরেশনের সভাপতি, টেক্সটাইল মিল কর্পোরেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ বিমানের সভাপতি এবং প্রশাসনে বিভিন্ন উচ্চপদে দায়িত্ব পালন করেন। প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছিলেন তিনি। ১৯৭২ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত তিনি প্রশাসনে বিভিন্ন উচ্চপদে পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। সিএসপি কর্মকর্ত এম কে আনোয়ার ১৯৭১ সালে ঢাকা জেলার প্রশাসক ছিলেন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনের আগে এম কে আনোয়ার বিএনপিতে যোগ দেন। ওই বছর অনুষ্ঠিত পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ২০০৮ সাল পর‌্যন্ত টানা পাঁচবার তিনি সাংসদ নির্বাচিত হন।

তিনি বিএনপি সরকারের বাণিজ্য, নৌ-পরিবহন এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

(ঢাকাটাইমস/১২জুন/মোআ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

রাজনীতি বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

রাজনীতি এর সর্বশেষ

ব্যাংকে কি মাস্তান মাফিয়ারা ঢুকবে, কাদেরকে প্রশ্ন রিজভীর

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে কারাগারে পাঠালেন আদালত

আওয়ামী লীগ এখন পরগাছা হয়ে গেছে: জিএম কাদের

ভারতীয় ভাতাপ্রাপ্ত এজেন্সিগুলো দেশে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে: রাশেদ প্রধান

বিএনপি জালিয়াত রাজনৈতিক দল: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সাংবিধানিক অধিকার থেকে প্রতিনিয়ত নাগরিকদের বঞ্চিত করা হচ্ছে: গোলাম পরওয়ার

দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ‘টালমাটাল’: কর্নেল অলি

আ.লীগ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতো টাকা লুট করে পাচার করছে: গয়েশ্বর

দুর্নীতি-লুটপাটের বিরুদ্ধে তরুণদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান মেননের

যে কারণে ডিবি কার্যালয়ে এসেছিলেন মামুনুল হক, জানালেন নিজেই

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :