চিকেন বলে মাংস নাকি নাড়িভুঁড়ি

তায়েব মিল্লাত হোসেন
  প্রকাশিত : ১৮ জুন ২০১৭, ০৯:৫২| আপডেট : ১৮ জুন ২০১৭, ১৬:৩৫
অ- অ+

সহজেই মিলছে পাড়া-মহল্লার ফাস্টফুডের দোকানে। আবার দামেও কম। চিকেন বলের ব্যবসা তাই রমরমা। রমজানে এর চাহিদা আরো বেড়েছে। কারণ ইফতারিতে অনেকেরই প্রিয় এই চিকেন বল। চিকেন নাগেটস, চিকেন সসেজও ইফতারির পদ হিসেবে বেশ বেচাবিক্রি হচ্ছে।

মুরগির মাংসের কিমা দিয়ে এগুলো তৈরি হয়, এটা ভেবেই খাচ্ছে সবাই। কিন্তু হালে অভিযোগ উঠেছে রেস্তোরাঁ, সুপারশপে ভাজা বা প্যাকেটজাত যেসব চিকেন বল, চিকেন নাগেটস ও চিকেন সসেজ পাওয়া যায়, সেগুলোয় নাকি মুরগির নাড়িভুঁড়ি দিয়ে তৈরি কিমা যোগ করা হচ্ছে। এ ধরনের অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সত্যতা মিলেছে, ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এই তথ্য জানায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফাস্টফুডের কর্মীরা চিকেন বল, সসেজ আর চিকেন নাগেটসে মুরগির নাড়িভূড়ি ব্লেন্ড করে মিশিয়ে দেয়। এর জন্যেই চিকেন বল ও সসেজের ভেতরটা মাংসের তুলনায় বেশি নরম থাকে। আর চিকেন নাগেটসে মচমচে ভাবটা আনতে নাকি মুরগির নাড়িভূরি ব্লেন্ড করে মিশিয়ে ভাজা হয়।

মুরগির মাংসের কথা বলে ভোক্তাদের নাড়িভুঁড়ির কিমার খাবার খাওয়ানো হচ্ছে- এ প্রসঙ্গে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এ ধরণের কিছু যদি হয়ে থাকে, তবে তা গ্রহণযোগ্য নয়। যারা এই কাজ করছে, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) ড. মো. শাহাদাৎ হোসেন ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, চিকেন বল, চিকেন নাগেটস ও চিকেন সসেজে নাড়িভুঁড়ি ব্যবহার করা হচ্ছে, এ ধরনের অনেক অভিযোগ এসেছে তাদের কাছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে সত্যতাও পাওয়া গেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনেকেই মোটা অঙ্কের জরিমানা দিতে বাধ্য হয়েছে।

‘‘রমজানে খাবারের ভেজাল প্রতিরোধে আমাদের অভিযান আরো বেড়েছে। কেউ যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আমাদের কাছে করেন, তাহলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা নেই। খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর অবস্থান নিয়ে কাজ করছি।’’

ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে এভাবেই বললেন ড. শাহাদাৎ।

নাড়িভুঁড়ি কী করি...

চিকেন বল, নাগেটস আর সসেজে নাড়িভুঁড়ির কিমা ব্যবহার করা হয়- এই তথ্য যারা জানতে পারছেন, তাদের অনেকেই আতঙ্কে পড়ছেন। ফার্মের মুরগির নাড়িভুঁড়ি ক্ষতিকর, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া এমন তথ্যও জনমনে এক ধরনের ভয় ছড়িয়ে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম কথা বলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খুরশিদ জাহানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘খাবার হিসেবে গরুর নাড়িভুঁড়ি আমাদের দেশে বেশ জনপ্রিয়। এটা খাওয়ার আগে কিন্তু যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রান্না করা হয়। এর ফলে তা জীবাণুমুক্ত হয়।’

মুরগির নাড়িভুঁড়ি কী খাওয়া যাবে? এমন প্রশ্নে এই পুষ্টিবিজ্ঞানী ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘বাজারে এখন হাফ বয়েল, ফুল বয়েল মুরগির নানা রকম ফাস্টফুড আইটেম পাওয়া যায়। এগুলোতে নাড়িভুঁড়ির ব্যবহার যদি থাকে, তবে সেগুলো অবশ্যই ভালো ভাবে সেদ্ধ করে, জীবাণমুক্ত করে ব্যবহার করতে হবে। এভাবে হলে খাওয়া যেতে পারে। কিন্তু প্রসেসিংয়ে যদি কোনো ফাঁকি থাকে, তাবে মুরগির নাড়িভুঁড়ি শরীরের জন্য ক্ষতিকর হবে।’

শারীরিক ক্ষতি না হলেও মানসিকভাবে অনেকের কাছেই মুরগির নাড়িভুঁড়ি অগ্রহণযোগ্য হতে পারে। তাই মুরগির আইটেমে মাংস, হাড়, নাড়িভুঁড়িসহ কোন কোন অংশ ব্যবহার করা হয়েছে, সেই সম্পর্কে জনসাধারণকে স্পষ্ট ধারণা দিতে হবে। প্যাকেটজাত খাবারে এটা সহজেই করা সম্ভব। আবার ফাস্টফুডের দোকান ও রেস্তোরাঁগুলোয় এ ধরনের তথ্য ভোক্তার সামনে তুলে ধরতে হবে। তথ্য আড়ালে রেখে বা গোপন করে কোনো কিছু খাওয়ানোর প্রবণতা গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন ড. খুরশিদ জাহান।

ঢাকাটাইমস/১৮জুন/টিএমএইচ

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টয়োটার ব্যবসা হারাচ্ছে নাভানা?
সারজিস বনাম নওশাদ: ভোটে কার পাল্লা ভারি?
মনোহরদীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা গণধোলাইয়ের শিকার
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা