বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে গোয়েন্দা রিপোর্ট এখন বই

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৫৬| আপডেট : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ২০:৪২
অ- অ+

১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইনটিলিজেন্স ব্রাঞ্চ-আইবির প্রতিবেদন বই আকারে প্রকাশ শুরু হয়েছে। যে ১৪টি খণ্ড প্রকাশ হবে তার মধ্যে প্রথম খণ্ড এরই মধ্যে বাজারে এসে গেছে।

শুক্রবার বিকালে গণভবনে এক অনুষ্ঠানে ‘সিক্রেট ডকুমেন্টস অব ইন্টিলিজেন্স ব্রাঞ্চ অন ফাদার অব দ্য নেশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

হাক্কানি পাবলিশার্স বইটি প্রকাশ করেছে। ৫৮২ পৃষ্ঠার এই বইটির দাম রাখা হয়েছে ৯০০ টাকা। এর প্রচ্ছদ করেছেন সমর মজুমদার।

প্রথম খণ্ডে ১৯৪৮ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যযন্ত গোয়েন্দা রিপোর্ট স্থান পেয়েছে। ১৯৫১ থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত থাকা রিপোর্টগুলো ছাপা হবে বাকি ১৩টি খণ্ডে।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অসংখ্য বই, কবিতার ভিড়ে তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ও ডায়রি ‘কারাগারের রোজনামচা’ তুমুল সমাদৃত হয়েছে। বাঙালি জাতির স্বাধীনতা আন্দোলনের এই পুরোধার নিজের চিন্তা-চেতনা, আদর্শ-দর্শন এবং কৈশোর-যৌবনের কর্মকাণ্ডের বিষয়টি জানা গেছে এই দুটি বইয়ে।

বই দুটি প্রকাশের পর এমনকি আওয়ামী লীগের বিরোধীরাও ক্ষমতাসীন দলকে বঙ্গবন্ধুর উদাহরণ দিয়ে সমালোচনা করে থাকে।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আরও দুটি বই প্রকাশ হবে এবং তার প্রস্তুতিও একেবারে শেষ পর্যায়ে।

আজ প্রকাশ হওয়া গোয়েন্দা প্রতিবেদনগুলোর বিষয়ে শেখ হাসিনা জানতে পারেন ১৯৯৬ সালে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর। তখন থেকেই সেগুলো বই হিসেবে প্রকাশের প্রক্রিয়া ও চেষ্টা শুরু হয়। আর ২২ বছরের চেষ্টায় প্রকাশ হলো প্রথম খণ্ড। তবে বাকি খণ্ডগুলো শিগগির প্রকাশ হয়ে যাবে বলে আশা করছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

‘প্রথম খণ্ড করাটাই কঠিন ছিল। আমরা করে ফেলেছি। এটা ৪৮ ধেকে ৫০ সাল পর্যন্ত। এরপর ৫১ থেকে একেকটা ভলিউম কতটা হবে সেটা নির্ভর করে আমরা ১৪ খণ্ডে এটা পাবলিশ করব।’

মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এই বইটিকে বাংলাদেশের ইতিহাসের অমূল্য রতন আখ্যা দেন। বলেন, এর মাধ্যমে বহু অজানা তথ্য জানতে পারবে দেশবাসী। সেই সঙ্গে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা পর্যন্ত সময়ে প্রকৃত ইতিহাস উঠে আসবে।

‘যেমন কয়লা খনি খুঁড়ে খুঁড়ে হীরা বের হয়ে আসে, হীরা খনি পাওয়া যায়, আমার মনে হয়েছে যেন ঠিক সেইভাবে মনে হয় আমরা হীরার খনি আবিষ্কার করতে সক্ষম করেছি। আমি আজ সত্যি আনন্দিত এটা সকলের হাতে তুলে দিতে পারলাম বাংলাদেশের জনগণ কিছু জানতে পারবে।’

‘এমনকি ভাষা আন্দোলন নিয়েও এমনও অনেক কথা বলা হয়েছে তিনি (বঙ্গবন্ধু) তো জেলেই ছিলেন, ভাষা আন্দোলন আবার কী করবেন। কাজেই মানুষের যে একটা বৈরী চিন্তা ভাবনা, আমি আশা করি এই ডকুমেন্টগুলো পেলে পরে... কারণ এটা তো তার পক্ষে কিছু না, সবই বিপক্ষের। আর বিপক্ষের হলেও আমি কিন্তু সাহস নিয়ে এটার প্রচার করছি, প্রকাশনায় নিয়ে এসেছি এই কারণে যে এর ভেতর থেকেই বাংলাদেশের জনগণ সত্যটাকে আবিষ্কার করতে পারবে, অনেক সত্য কথা জানতে পারবে, ইতিহাসটা জানতে পারবে যে কীভাবে আমরা এই স্বাধীনতাটা অর্জন করলাম।’

শেখ হাসিনা জানান, ‘১৯৪৮ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত জাতির পিতার প্রতিটি কর্মকাণ্ড প্রতিদিন কোথায় তিনি গেছেন, কী করেছেন, কোন মিটিং করেছেন, কোন মিটিংয়ে কী বক্তৃতা দিয়েছেন, সে তথ্য তার মধ্যে আছে।’

‘যে সমস্ত চিঠিপত্র তার কাছে গেছে, তার অধিকাংশ বাজেয়াপ্ত করা ছিল। অনেক চিঠি তিনি দিয়েছেন, তার অনেকগুলো প্রাপকের কাছে কোনোদিনও পৌঁছেনি। সেই চিঠিপত্রগুলোও পাওয়া গেছে।’

‘সেই সাথে সাথে আমাদের আওয়ামী লীগ যে সংগঠনটা ১৯৪৯ সাল থেকে বহু নেতা-কর্মীর নাম ওখানে পাওয়া যাচ্ছে। জাতির পিতা তাদেরকে যে চিঠি দিতেন, সেখানে নামগুলো পাওয়া যাচ্ছে।’

১৯৬৬ সালে বঙ্গবন্ধুর দেয়া ছয় দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দায়ের এবং গণআন্দোলনের মুখে তাকে মুক্তি দিতে নির্দেশনাও এই রিপোর্টে স্থান পেয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী জানান, নতুন বইয়ে মূল গোয়েন্দা প্রতিবেদন অক্ষত রেখে সম্পাদনা করা হয়েছে অতিরিক্ত লেখাগুলো বাদ দিতে।

অনুষ্ঠানের সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্য তারা (বই প্রকাশনায় যারা সহযোগিতা করেছেন) যে কাজটি করলেন সে জন্য এই জাতি চিরকাল তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে থাকবে। এই জাতিকে তারা ‍ঋণী করে গেলেন। এই ১৪ খণ্ড না হলে আমরা কখনও বাংলাদেশের স্বাধীনতার অবিকৃত ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস রচনা করতে সক্ষম হবো না।... যারা ইতিহাসের গবেষক, যারা মু্ক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গবেষণা করেন, তারা এখন সোনার খনি পেয়ে গেছেন।’

বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলা যায়নি

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃতি ও তার নাম মুছে ফেলতে অপচেষ্টার বিষয়টিও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। বলেন, এই চেষ্টা আজ ব্যর্থ হয়েছে।

‘বাংলাদেশের ইতিহাস বলতে গেলে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছবি আসবেই। আর কোনো ছবি দেখা গেলে তার ছবি আসবেই। এমনও আমরা দেখেছি যে কোনো ছবি আসলে অনেক ছবির মাঝে বঙ্গবন্ধুর ছবিটা কাগজ দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হতো অথবা কোথাও আসলে সেটা ঝিরঝির করে দেয়া হতো।’

‘সে নামটা (বঙ্গবন্ধু) তারা মুখে ফেলতে চেয়েছে। কিন্তু সত্যকে মিথ্যা দিয়ে কখনও মিথ্যা দিয়ে চাপা দেয়া যায় না, সেটা আজ প্রমাণ হয়েছে। আর সে নাম তো কেবল বাংলাদেশে না, সারা বিশ্বে উজ্জ্বল। ৭ মার্চের ভাষণ আজকে বিশ্ব প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে।’

আসছে আরও দুই বই

প্রধানমন্ত্রী জানান, বঙ্গবন্ধুকে লেখা আরও দুটি বই প্রকাশের প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। সেগুলোও শিগগির জনগণের হাতে তুলে দেয়া হবে।

‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) ৫২ সালে চীন ভ্রমণ করেছিলেন। তখনকার ভ্রমণ সম্পর্কে তিনি লিখেছিলেন। সেটাও প্রায় প্রস্তুত আছে, খুব শিগগির সেটা প্রকাশ করতে পারব।’

‘আর সেই সাথে সাথে তিনি (বঙ্গবন্ধু) ‘স্মৃতিকথা বলে তিনি নিজের কিছু আত্মজীবনীও লিখেছিলেন। সেটা অনেকটা অসমাপ্ত আত্মজীবনীর সাথে মিলে গেছে। সেখানে আরও অনেক তথ্য দেয়া আছে। সেটাও আমরা খুন শিগগির বের করব, সেটা নিয়েও আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

স্পিকার শিরীন শারমীন চৌধুরী, বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ, প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, তিন বাহিনীর প্রধান ছাড়াও এবং প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং রাজনীতিকরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

(ঢাকাটাইমস/০৭সেপ্টেম্বর/ডব্লিউবি/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিজয়নগর সীমান্তে পুশইনের চেষ্টা, বিজিবির টহল জোরদার 
গোপালগঞ্জে বাস-ট্রাকের সংঘর্ষে নিহত ৩
কাকরাইল মোড়ে জবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা, দুপুরে গণঅনশন
সহকর্মীর সঙ্গে দুর্ব্যবহার, ক্ষমা চাইলেন অভিনেতা শামীম হাসান সরকার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা