ঠাকুরগাঁওয়ে পাঁচ ছাত্রকে ‘ন্যাড়া’ করলেন বিএনপি নেতা

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি, ঢাকাটাইমস
 | প্রকাশিত : ০৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৯:০৪

ঠাকুরগাঁওয়ে ‘অপরাধ’ না করলেও ক্লাসে ডেকে নিয়ে শালিস-বৈঠকের মাধ্যমে পাঁচ ছাত্রকে ন্যাড়া করার অভিযোগ উঠেছে এক সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে।

বুধবার ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির পাঁচজন ছাত্র এমন অভিযোগ করে।

অভিযুক্ত আব্দুল জব্বার সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও রুহিয়া থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক। এছাড়াও তিনি ঢোলারহাট ইউনিয়নের ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্ররা হলো- রুবেল রানা, সবুজ, সারোয়ার, আসিফ ও আশরাফুল।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, গত শনিবার পাঁচ ছাত্র প্রাইভেট শেষ করে বাড়িতে ফিরছিল। পথে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে পথরোধ করে ইভটিজিং করছিল রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের মোন্নাপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে লিটন (১৫) । এটি দেখতে পেয়ে ওই পাঁচ শিক্ষার্থী তার প্রতিবাদ করে। পরে লিটন সেখান থেকে চলে যায়।

শিক্ষার্থীরা জানায়, রবিবার দুপুর ২টার দিকে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার ওই পাঁচ ছাত্রকে তার বিদ্যালয়ে ডেকে পাঠান। এরপর বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে স্থানীয় মাতব্বরদের নিয়ে শালিস-বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে পাঁচজন ছাত্র নিরপরাধ দাবি করলেও প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা তা মানতে রাজি হয়নি। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার ক্ষিপ্ত হয়ে তাদের মারপিট করেন এবং স্থানীয় এক নাপিতকে বিদ্যালয়ে ডেকে আনেন। পরে প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বারের নির্দেশে সবার উপস্থিতিতেই একজন একজন করে পাঁচ ছাত্রকে ন্যাড়া করে দেয়।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র রুবেল রানা বলে, ‘আমরা নিরপরাধ দাবি করে প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বারসহ অন্যদের হাত-পা ধরে কান্না করেছি, কিন্তু তারা শোনেনি। এ ঘটনার পর এলাকার মানুষ নানা ধরনের কথা বলছে, এমনকি বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষার্থীরাও আমাদের নিয়ে কটূক্তি করছে। এখন লজ্জায় মানুষকে মুখ দেখাতে পারছি না।’

ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ে এমএলএসএস (পিয়ন) মো. ফিরোজ বলেন, ‘রবিবার দুপুরে ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির পাঁচজন ছাত্রকে নিয়ে বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে শালিস-বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। শালিস-বৈঠকেই পাঁচজন ছাত্রকে মারপিট করার পর ন্যাড়া করে দেয়া হয়। এসময় ছাত্ররা অনেক কান্নাকাটি করে। বৈঠকের নেতৃত্ব দেয় আমরা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।’

ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী বলে, লিটন আমার পথরোধ করে জোরপূর্বক গোলাপ ফুল দেওয়ার চেষ্টা করে। এর প্রতিবাদ করে ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির পাঁচ ছাত্র। শালিস-বৈঠকে লিটনের বিচার না করে নিরপরাধ পাঁচজন ছাত্রকে ন্যাড়া করে দেয়া হয়। আমি লিটনের শাস্তি দাবি করছি।

সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীর মা ক্ষোভ নিয়ে বলেন, ইভটিজিং করেছে লিটন, সে অসুস্থ হওয়ার কারণে তাকে কোনো ধরনের শাস্তি দেওয়া হয়নি, উল্টো অন্যদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।

ভেলারহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আব্দুল বারেক বলেন, আমাদের স্কুলের পাঁচজন ছাত্রকে ডেকে নিয়ে গিয়ে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বারসহ অন্য মাতব্বররা ন্যাড়া করে দেন। একজন শিক্ষকের কাছে এ ধরনের কাজ মোটেও কাম্য নয়। এর বিচার হওয়া দরকার।

১০ শ্রেণির ছাত্র আশরাফুল ইসলামের বড় ভাই আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিনা অপরাধে আমার ভাইসহ আরও চারজন ছাত্রকে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। আমি এটার সুষ্ঠু বিচার চাই।

ঢোলারহাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সীমান্ত কুমার বর্মন বলেন, কোনো শিক্ষার্থীকে একটি মারও দেওয়া যাবে না, সেখানে কীভাবে একজন প্রধান শিক্ষক পাঁচজন ছাত্রকে ন্যাড়া করে দেন। একজন শিক্ষকের কাছে এ ধরনের ব্যবহার আশা করা যায় না। কেউ অপরাধ করলে তার জন্য আইন আছে, শিক্ষক আইন লঙ্ঘন করেছেন।

অভিযুক্ত ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বারের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে রুহিয়া থানার ওসি প্রদীপ কুমার রায় বলেন, থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঠাকুরগাঁওয়ের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. মোশারফ হোসেন বলেন, বিদ্যালয় হচ্ছে পাঠদান গ্রহণ করার জায়গা। সেখানে শালিস-বৈঠক তো প্রশ্নই আসে না। কোনো শিক্ষার্থী অপরাধ করলে তার জন্য আইন আছে। পাঁচজন ছাত্রকে ‘ন্যাড়া’ করার ঘটনটি আমি জানি না; খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(ঢাকাটাইমস/০৩অক্টোবর/প্রতিনিধি/জেবি)

সংবাদটি শেয়ার করুন

বাংলাদেশ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :