শুভঙ্করের মাটির মানচিত্র দেখল জাদুঘর কর্তৃপক্ষ
দেশে এই প্রথম বাংলাদেশের ৬৪ জেলার মাটি সংগ্রহ করে ফরিদপুরের শুভঙ্কর একটি মানচিত্র তৈরি করেন। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সেই মানচিত্র দেখে গেলেন জাতীয় জাদুঘর কর্তৃপক্ষ।
জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া এসময় সবাইকে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করেন।
ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার বুরাইচ ইউনিয়নের বারাংকোলা গ্রামের তরুণ শুভঙ্কর পালের বাবা পল্লী চিকিৎসক নিহার রঞ্জন পাল। মা অমৃতা পাল। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। বাড়িতে কাকা দিলীপ কুমার পাল মাটি দিয়ে বিভিন্ন মূর্তি গড়তেন। কাকার সঙ্গে মাটির কাজে হাত লাগাতেন শুভঙ্কর।
বড় শখ ছিল শুভঙ্করের সাইকেলে দেশের ৬৪টি জেলা ঘুরে দেখবেন। বাদ সাধলেন বাবা। দেশের ৬৪ জেলার মাটি সংগ্রহ করে বাংলাদেশের মানচিত্র বানালে কেমন হয়। একসঙ্গে ৬৪ জেলার মাটি স্পর্শ করা যাবে। পাওয়া যাবে একসঙ্গে সারা বাংলার মাটির গন্ধও।
পরে ফেসবুক বন্ধুদের কাছে নিজ জেলার মাটি কুরিয়ারে পাঠানোর জন্য অনুরোধ জানান শুভঙ্কর। মাটির পরিমাণ বলে দিয়ে কুরিয়ারের খরচ পাঠানোর ইচ্ছেও প্রকাশ করেন। কিন্তু যারা মাটি পাঠিয়েছেন, তারা কেউ টাকা নিতে রাজি হননি। কুরিয়ারে প্রথম মাটি আসে নাটোর থেকে। এক মাসের মধ্যেই ২০ জেলা থেকে মাটি চলে আসে। ১২ জেলার মাটি নিজেই সংগ্রহ করেন। এর মধ্যে মেহেরপুরের মুজিবনগরের, ঝিনাইদহের কবি গোলাম মোস্তফার বাড়ির, বাগেরহাটে ষাটগম্বুজ মসজিদ এলাকার, কক্সবাজারের হিমছড়ি পাহাড়ের, মাগুরায় সীতারাম রায়ের বাড়ির, পাবনার এডওয়ার্ড কলেজ ক্যাম্পাস থেকে মাটি সংগ্রহ করেন শুভঙ্কর। ফরিদপুরের মাটি তিনি সংগ্রহ করেছেন নিজ গ্রাম বারাংকুলা থেকে। শেরপুর, মুন্সিগঞ্জ ও ঝালকাঠির মাটি সংগ্রহে তাকে সহযোগিতা করেছেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া।
শুভঙ্করের নির্মাণ করা বাংলাদেশের মানচিত্র দৈর্ঘ্যে ২৮, প্রস্থে ১৮ ইঞ্চি। মানচিত্রটি রাখা হয়েছে কাচঘেরা একটি কাঠের বাক্সে। মানচিত্রের প্রতিটি জেলা তৈরি হয়েছে সে জেলার মাটি দিয়ে।
বাংলাদেশ জাতীয় যাদুঘর থেকে পরিদর্শনে আসা জাতিতত্ত্ব ও অলংকরণ শিল্পকলা বিভাগের উপ-কিপার সিরাজুল ইসলাম জানান, গত ১ জানুয়ারি মহাপরিচালক আমাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করে মানচিত্রটি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। সে কারণে আজ আমরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসেছি। আমরা মানচিত্রের উপাদানগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখেছি। এর চিত্র ধারণ করেছি। জেলা প্রশাসক ও নির্মাতার সাথে এ সংক্রান্ত বিশদ আলোচনা করেছি এবং সকল তথ্য সংগ্রহ করেছি। সকল কিছুর ভিত্তিতে আমাদের কমিটি একটি প্রতিবেদন পেশ করবে, যার ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
জেলা প্রশাসক উম্মে সালমা তানজিয়া বলেন, এই মানচিত্রটি আমার দেশের মাটির ষ্পর্শ করার যে অনুভূতি সেটা অতুলনীয়। আমি গত বছরের ২৫ অক্টোবর জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালকের কাছে এই মানচিত্রটি যাতে সেখানে সংরক্ষণ করা হয়, সে বিষয়ে চিঠি দেই। তার ধারাবাহিকতায় আজ জাদুঘর কর্তৃপক্ষ পরিদর্শনে এসেছে। আমি আশা করি, এই সৃষ্টি জাতীয় জাদুঘরে স্থান পাবে। আর যদি যাদুঘর এটি নেয়, তাহলে আমরা তাদেরকে এটি বিনামূল্যে দেব।
(ঢাকাটাইমস/৯জানুয়ারি/এলএ)