বহাল তবিয়তেই ডিআইজি মিজান

আশিক আহমেদ
 | প্রকাশিত : ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ০৮:৩৮

অস্ত্রের মুখে নারীকে তুলে নিয়ে বিয়ে করার অভিযোগ ওঠার দেড় বছরেও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি পুলিশের বরখাস্ত ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। অভিযোগ ওঠার পর তাকে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারের পদ থেকে সরিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিলেছে মর্মে প্রতিবেদনও দেওয়া হয়। সেই প্রতিবেদন যায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ শাখায়। কিন্তু এরপর এক বছর হয়ে গেলেও সেখান থেকে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।

এর মধ্যে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের সংবাদ উপস্থাপিকাকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। ওই ঘটনাতেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

২০১৭ সালের ১ জুলাই মরিয়ম আক্তার ইকো ও তার মা কুইন তালুকদারকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে বিয়ে করার অভিযোগ ওঠে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। একটি জাতীয় দৈনিকে তাকে নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর ২০১৮ সালের ৮ জানুয়ারি তাকে প্রত্যাহার করা হয়। গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।

ওই কমিটিতে ছিলেন অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (অর্থ) মঈনুর রহমান চৌধুরী, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার শাহাব উদ্দিন কোরেশি এবং তৎকালীন অতিরিক্ত ডিআইজি হাবিবুর রহমান।

২০১৮ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অসদাচরণের প্রমাণ পাওয়ার তথ্য জানিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি। ২০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে বলা হয়, এ ঘটনায় পুলিশসহ সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে।

এই প্রতিবেদন মতামতসহ পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগে পাঠিয়ে দেন আইজিপি। ওই বিভাগের সচিব পরে মিজানুরের শুনানি গ্রহণ করেন।

বিধান অনুযায়ী অভিযুক্তের জবাবে সন্তুষ্ট হলে শাস্তি ছাড়াই বিষয়টির নিষ্পত্তি করতে পারেন সচিব। আর জবাব সন্তোষজনক না হলে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কর্মকা-ের জন্য বিভাগীয় ব্যবস্থা তথা বিভাগীয় মামলা করা হবে। এতে দোষী সাব্যস্ত হলে শাস্তি পেতে হবে। অসদাচরণের কারণে গুরুদ- হলে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে চাকরিচ্যুতির বিধান রয়েছে।

তদন্ত কমিটির সদস্য শাহাব উদ্দিন কোরেশি ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘তার (ডিআইজি মিজান) বিরুদ্ধে আমরা পুলিশ সদর দপ্তরে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। সদর দপ্তর পরবর্তীতে কী করেছে, সেটা আমরা বলতে পারব না। তবে নিয়ম অনুযায়ী সেটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পুলিশ শাখায় পাঠানোর কথা রয়েছে। সেখানেই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (পুলিশ ও এনটিএমসি) নূরুল ইসলাম বলেন, ‘শুনেছি, ডিআইজি মিজান আদালতে একটি রিট করেছেন। ফলে বিষয়টি এখন দেখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের আইন শাখা।’

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আইন-১ শাখার উপসচিব মফিজুল ইসলামও বিষয়টি নিয়ে কিছু জানাতে পারেননি। বলেন, ‘আমাদের এখানে কয়েক হাজার মামলা রয়েছে। আপনি যদি রিট নম্বরটি বলতে পারতেন, তাহলে আমি ফাইল খুলে বলতে পারতাম।’

ডিআইজি মিজানের ঘটনাটি ওই সময়ে একটি আলোচিত ঘটনা হলেও আপনি কেন জানেন না এমন প্রশ্নের জবাবে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গত চার থেকে পাঁচ মাসে মিজান সাহেব কোন মামলা করেছেন, সেটা আমার কাছে আসেনি। মনে হয় কিছুদিন আগেই তিনি রিট করেছেন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ধরেননি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

জাতীয় বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :