গ্রাহক-ব্যাংকের টাকা নিয়ে লাপাত্তা মেদেনী বিল্ডার্স
জীবনের সঞ্চয়ের টাকায় বুকিং মানি হিসেবে জমা দিয়ে একটি ফ্ল্যাট হবে স্বপ্ন দেখেছিলেন ‘মোমেনশাহী ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ শিক্ষক কুমকুম সরকার। ধারদেনা করে পরিশোধও করেছিলেন ২২ কিস্তির টাকা। কিন্তু তিন কিস্তির টাকা বাকি থাকতেই মিথ্যা অভিযোগে মেদেনী বিল্ডার্স লিমিটেড বাতিল করে দেয় কুমকুম সরকারের সঙ্গে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের চুক্তিপত্র।
২০০৯ সালের এই ঘটনায় এখনও ফেরত পাননি কুমকুম সরকার তার বুকিংয়ের টাকা। একই ধরনের প্রতারণার শিকার হন ময়মনসিংহের আরেক স্কুলশিক্ষক শিরিন আক্তার। ফোন না ধরায় এবং অফিস পাল্টে ফেলায় যোগাযোগ করতে না পেরে হতাশ এই স্কুলশিক্ষক। এখন বিচার চাওয়ার জায়গাও খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি।
২০০৯ সালে কাজ শুরু করে ২০১১ সালের মধ্যে ফ্ল্যাট হস্তান্তরের চুক্তি করে গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিটি ফ্ল্যাটের কিস্তিতে পরিশোধযোগ্য মূল্য ধরা হয় প্রায় ২৪ লাখ টাকা।
ডাউন পেমেন্ট ও বুকিং মানিসহ ছয় লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের পর অবশিষ্ট টাকা সমানহারে ২৫টি কিস্তিতে পরিশোধের শর্ত ছিল। তারপরও সময়মতো ফ্ল্যাট পাননি অনেকে। এ সময় টাকা ফেরত না দিয়েই অফিস গুটিয়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন মেদেনী বিল্ডার্সের কর্মকর্তারা। নয়তলা ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে তিনটি করে মোট ২৭টি ফ্ল্যাট রয়েছে। প্রয়াত শেখ মো. আব্দুল হাই অ্যাডভোকেট মেদেনী টাওয়ারের জমির মালিক। মালিকপক্ষ পেয়েছেন নয়টি ফ্ল্যাট।
এদিকে বুকিংয়ের টাকা ফেরত পেতে নানা মহলে ধর্ণা দিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না প্রতারণার শিকার গ্রাহকরা। অভিযোগ উঠেছে, মেদেনী বিল্ডার্স গ্রাহকদের টাকা মেরেই ক্ষান্ত হয়নি, ফ্ল্যাটের জমি বন্ধক রেখে গোপনে ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ আর আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, ফ্ল্যাটের জমি ঢাকার বিজয় নগর শাখার শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের কাছে গোপনে বন্ধক রেখে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে মেদেনী বিল্ডার্স লিমিটেড কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে উদ্বেগ আর আতঙ্কে আছেন ফ্ল্যাটের বাসিন্দারা।
মেদেনী টাওয়ার ফ্ল্যাট মালিক সমিতির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হীরেন্দ্র নাথ রায় জানান, ‘ফ্ল্যাট বন্ধক রেখে ঋণ নেয়ার বিষয়টি জানার পর থেকে তিনি উদ্বেগ আর আতঙ্কে আছেন। কারণ মেদেনী বিল্ডার্ড কর্তৃপক্ষ এখন কারও ফোনও ধরছে না। পাল্টে ফেলেছে তার ঢাকার অফিস।’
সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ জানান, ‘ফ্ল্যাটের কারও সঙ্গে যোগাযোগ নেই মেদেনী বিল্ডার্স কর্তৃপক্ষের। এমতাবস্থায় মহাফাপড়ে আছেন ফ্ল্যাট মালিকেরা।’
মোবাইল ফোনে মেদেনী বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পরিচয়ে আবু বকর সিদ্দিক জানান, ‘প্রত্যেকের টাকাই ফেরত দেয়া হবে। স্বীকার করেন ফ্ল্যাটের জমি বন্ধক রেখে ঢাকার বিজয় নগর শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড শাখা থেকে সাত কোটি টাকার বেশি ঋণ নেয়ার কথাও।’
বলেন, ‘এ নিয়ে ফ্ল্যাট মালিকদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। প্রয়োজনে নিজস্ব জমি বিক্রি করে ব্যাংক ঋণ শোধ করা হবে।’
ময়মনসিংহ নগরীর ৬১ নম্বর সারদা ঘোষ রোড়ের মেদেনী হাই টাওয়ারের নয়তলা ভবনটি নির্মাণ করে মেদেনী বিল্ডার্স লিমিটেড নামে ঢাকার একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠান।
(ঢাকাটাইমস/৬মার্চ/এলএ)