নেতাদের মোবাইল এখন বন্ধ থাকবে

কাফি কামাল
  প্রকাশিত : ০৩ জুন ২০১৯, ১৪:২৯
অ- অ+

জাতীয় নির্বাচন এলে ধানের শীষের টিকিট পাবার জন্য হাজারপাঁচেক নেতা প্রচার মঞ্চে আসেন। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় কয়েকগুণ। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি, শীর্ষস্থানীয় কয়েকটি অঙ্গদল এবং বিশেষ করে জেলা কমিটিগুলো গঠনের সময় পদপ্রত্যাশীদের তৎপরতা বেড়ে যায়। এর সবই একটি জনপ্রিয় দলের লক্ষণ। শীর্ষ নেতারা আত্মতুষ্টিতে ভোগেন। ভালো। কিন্তু তারা ভুলে যান বিগত একযুগের বেশি সময় ধরে মামলা-হামলা, গ্রেপ্তার-হয়রানিতে তৃণমূল নেতাকর্মীদের জীবনে উঠেছে নাভিশ্বাস।

ছাত্রদলের সঙ্গে যুক্ত তরুণেরা চাকরি পাচ্ছে না, রাজনীতির কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে বেকার, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তৃণমূল নেতারা পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছেন, আয়ের উৎস হারিয়ে দিশেহারা গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীদের পরিবারগুলো, সর্বোপরি সাধারণ নেতাকর্মীরা মামলার ব্যয় মেটাতে গিয়ে চোখে অন্ধকার দেখছেন। দলটির মহাসচিব মাঝেমধ্যে কান্নাকাটি করে বলেন, নেতাকর্মীরা অভাবে পড়ে বাধ্য হয়ে রিকশা চালাচ্ছেন। সে কথা শুনে অনেকের আবেগের পুকুরে ঢেউ জাগে। কিন্তু বিপর্যস্ত সে নেতাকর্মীদের খবর কি বড় ও মালদার নেতারা রাখেন?

যারা কমিটির সময় পদ ও নির্বাচনের সময় মনোনয়নটি নিজেদের অধিকার আর হিস্যা মনে করেন। গ্রুপিং করান, বিবাদ উসকে দেন, প্রয়োজনে ঝগড়া-বিবাদ বাধিয়ে নিজের সুবিধাটি আদায় করে নেন। ঈদের সময় আপনি শপিং করবেন অভিজাত শপিং মলে, কিনবেন বিখ্যাত ব্র্যান্ডের পণ্য, সদাই করতে যাবেন বিদেশে। আর বিপর্যস্ত দরিদ্র তৃণমূল, বেকার, পুঁজি হারানো, কারারুদ্ধ নেতাকর্মীদের পরিবারের সদস্যদের কি ফুটপাত থেকে সদাই করে ঈদ পার করার অধিকারও নেই।

বড় নেতা ও মালদার নেতাদের মোবাইল এখন বন্ধ। তারা এখন আল্লাহর নৈকট্য লাভে ওমরাহ করতে গেছেন বা চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর; জরুরি কাজে মালয়েশিয়া কিংবা ইউরোপে। বিএনপির চেয়ারপারসন দীর্ঘ সোয়া বছর ধরে বন্দী আছেন কারাগারে। তার উন্নত চিকিৎসার দাবিটি আদায়ের বাস্তবিক কোনো তৎপরতা নেই, লবিংও দৃশ্যমান নয়। নেতারা কিন্তু চিকিৎসা নিচ্ছেন বিদেশে। খালেদা জিয়া কারাবিধি অনুযায়ী দৈনিক ৩০ টাকার ইফতার পান। নেতারা সেটা নিয়ে রাজনীতির নামে যেন বিদ্রুপ করে দামি গাড়িতে ৫০০-১০০০ টাকার তেল পুড়িয়ে ৩০ টাকার ইফতার সারতে আসেন। দলের গুম-খুনের শিকার কিছু নেতার পরিবারকে দলটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানের তরফে একটি করে গিফট বক্স দেয়া হয়েছে দেখলাম। কিন্তু সেটা প্রদানে যে আয়োজন, যতজন নেতার ছবি ও সেলফি উঠানো আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে তাতে নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও বিব্রত হয়েছে ওইসব পরিবার। এ সবই বিএনপি ও দলটির সর্বস্তরের প্রত্যাহিক চিত্র।

অবশ্যই দেশের সবখানেই কিছু ব্যতিক্রম আছে। কিছু নেতা সাধ্যমতো তৃণমূল ও ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। এই নিয়ে লেখার জন্য আমাকে অনেকেই অনুরোধ করেছেন।

কয়েকজনকে বলেছি, নেতাদের মোবাইল যথাসময়ে ওপেন হবে। সামনে যখন কমিটি গঠনের উদ্যোগ বা নির্বাচনে মনোনয়নের সময় আসবে। আর আমি কিছু লিখলেই তো আপনাদের ৯০ ভাগ জনপ্রিয় দলের নেতারা আমার বদনাম করবেন, আমার বিরুদ্ধে জায়গামতো অভিযোগ করবেন। তারপরও তাদের অনেকের আর্থিক দুর্দশা, গরিবি জীবনযাপন, প্রায় নিশ্চল সংসারের হাল দেখে ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও এই স্ট্যাটাসটি লিখলাম।

লেখক: সাংবাদিক

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
চলচ্চিত্র অনুদান কমিটি থেকে পদত্যাগ করলেন অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মম
পদ্মা ব্যাংকের ১২৮তম পর্ষদ সভা অনুষ্ঠিত
মায়ের লাশ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা কেন্দ্রে দুই শিক্ষার্থী 
স্পেনে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেলেন লিভারপুল তারকা দিয়োগো জোতা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা