বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে ওষুধ প্রতিরোধী নতুন সুপারবাগ

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ আগস্ট ২০১৯, ০৯:০২
অ- অ+

ওষুধ প্রতিরোধী ফাঙ্গাস বা ছত্রাক, নাম ক্যানডিডা অরিস, আবিষ্কৃত হয়েছিলো মাত্র ১০ বছর আগে। কিন্তু তারপরও হাসপাতালে থাকা অণুজীবের মধ্যে এখন বিশ্বের সবচেয়ে আতঙ্কজনক নামগুলোর মধ্যে একটি ক্যানডিডা অরিস। বিশ্বজুড়ে এই ফাঙ্গাসের আক্রমণে মহামারি দেখা দেয়ার উপক্রম হয়েছে। গবেষণা বলছে, তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই বৃদ্ধি পাচ্ছে এর সংক্রমণের হার।

যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র সিডিসি বলছে, এর ঝুঁকি কমাতে হলে, এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে কারা রয়েছে তা জানতে হবে।

ক্যানডিডা অরিস কী?

ক্যানডিডা অরিস বা সি.অরিস হচ্ছে এক ধরনের ইস্ট বা ফাঙ্গাস বা ছত্রাক যা মানব দেহে সংক্রমণ তৈরি করতে পারে। সাধারণ ছত্রাক যেমন ক্যানডিডা অ্যালবিকান্সের মতো মুখ ও গলায় ক্ষত তৈরির মতো সংক্রমণ তৈরি করে এটি।

২০০৯ সালে জাপানে টোকিও মেট্রোপলিটন গেরিয়াট্রিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক রোগীর কানের ভেতর প্রথম পাওয়া যায় এই ছত্রাক। বেশিরভাগ সময়ই ক্যানডিডা ছত্রাক আমাদের ত্বকে কোনো ধরনের ক্ষতি না করেই বসবাস করে। তবে আমরা যদি অসুস্থ হয়ে পড়ি কিংবা সংবেদনশীল কোন স্থান যেমন রক্তস্রোত কিংবা ফুসফুসে চলে গেলে এটি সংক্রমণ তৈরি করতে পারে।

কী ধরনের অসুস্থতা তৈরি করে এটি?

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সি.অরিস মানব দেহে রক্তপ্রবাহে সংক্রমণ তৈরি করে। এছাড়া নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস ব্যবস্থা, কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র, দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অঙ্গ এবং ত্বকেও সংক্রমণ তৈরি করতে পারে। এর সংক্রমণ বেশ মারাত্মক। সারা বিশ্বে, যারা সি.অরিসের সংক্রমণে আক্রান্ত হন তাদের ৬০ ভাগই মৃত্যুবরণ করেন।

এই ছত্রাক সাধারণত ওষুধ প্রতিরোধী হওয়ায় এর সংক্রমণ ঠেকানো কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও, অনেক সময়ই সি.অরিসের সংক্রমণকে অন্য কোন অসুস্থতা বলে ভুল করা হয়। যার কারণে দেয়া হয় ভুল চিকিৎসা। তার মানে হচ্ছে, এর ফলে রোগীকে হয় বেশিদিন ধরে চিকিৎসা নিতে হবে অথবা তার অবস্থা আরও বেশি খারাপ হয়ে পড়বে।

রোগ নিয়ন্ত্রণ প্র্যাকটিশনার ও ইউসিএল ক্লিনিক্যাল লেকচারার ডা. এলাইন ক্লাউটম্যান-গ্রিন বলেন, ‘যুক্তরাজ্যের বেশ কিছু হাসপাতালে এই ছত্রাকের সংক্রমণ মহামারি আকারে দেখা দেয়ায় পাবলিক হেলথ ইংল্যান্ডের কাছে সহায়তা চাওয়া হচ্ছে।

হাসপাতালের পরিবেশে বেঁচে থাকে সি.অরিস। তাই একে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। যেহেতু নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন তাই এর সংক্রমণ সনাক্ত হলে তা রোগী এবং হাসপাতাল উভয়ের জন্যই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে।’

ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য ও জাতীয় সংক্রমণ পরিসেবা বিভাগের মেডিক্যাল অণুজীববিজ্ঞানী ডা. কলিন ব্রাউন দাবি করেন, ‘জাতীয় স্বাস্থ্য পরিসেবা বিভাগের আওতায় যেসব হাসপাতালে সি.অরিসের সংক্রমণ অতিমাত্রায় দেখা দিয়েছে, সেসব হাসপাতালগুলোতে আসলে এই ছত্রাকে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যায়নি।’

তিনি বলেন, ‘সি.অরিসের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশেষজ্ঞ মতামত ও সংক্রমণ প্রতিরোধী নানা ব্যবস্থার বিষয়ে সহায়তা দিতে জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সঙ্গে জনস্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে।’

সংক্রমণ হয়েছে কিনা তা নিয়ে কি চিন্তিত হওয়া উচিত?

সাধারণত সি.অরিসের সংক্রমণ সচরাচর খুব একটা হয়না। তবে আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে হাসপাতাল কিংবা নার্সিং হোমে থাকেন এবং চিকিৎসার কারণে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করতে হয় তাহলে সি.অরিসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

কারণ অ্যান্টিবায়োটিক সি.অরিসের সংক্রমণরোধী ভাল ব্যাকটেরিয়াও মেরে ফেলে। ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে ৬০ জন রোগী সি.অরিসের সংক্রমণের শিকার হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ দপ্তর জানিয়েছে, ধীরে ধীরে বিশ্বের অনেক দেশেই সি.অরিসের সংক্রমণের খবর মিলছে।

ইউরোপের বেশিরভাগ দেশেই এই ছত্রাকের সংক্রমণের খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিলে গ্রিসে এই সংক্রমণের খবর মেলে।

সি.অরিস সাধারণ ওষুধ প্রতিরোধী কেন?

যেসব রোগীরা সি.অরিসে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের বেশিরভাগের মধ্যেই ফ্লুকোনজলের মতো সাধারণ ছত্রাক রোধী ওষুধ আর তেমন কাজ করছে না বলে প্রতিপন্ন হয়েছে। এর মানে হচ্ছে, এসব ওষুধ সি.অরিস নিয়ন্ত্রণেও কাজ করে না।

এ কারণে সি.অরিসের সংক্রমণের চিকিৎসায় অপেক্ষাকৃত কম প্রচলিত ছত্রাক রোধী ওষুধ ব্যবহার করা হয়। তবে এসব ওষুধের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধী ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে সি.অরিস। ডিএনএ পরীক্ষায় পাওয়া যায় যে, সি.অরিসের ছত্রাক রোধী ওষুধ প্রতিরোধক জিনের সঙ্গে সি. আলবেনিয়ান্সের জিনের বেশ মিল রয়েছে। তার মানে হচ্ছে, ওষুধ প্রতিরোধী জিনগুলো এক প্রজাতি থেকে আরেক প্রজাতিতে ছড়িয়ে পড়েছে।

সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধিকে জলবায়ু পরিবর্তন কিভাবে প্রভাবিত করেছে?

এক গবেষণায় পাওয়া গেছে যে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সি.অরিস ছত্রাক বেশি তাপমাত্রায় বেঁচে থাকতে বাধ্য হওয়ায় এর সংক্রমণের হার বেড়ে গেছে। বেশিরভাগ ছত্রাকই কম তাপমাত্রায় মাটিতে বসবাস করতে পছন্দ করে। কিন্তু বৈশ্বিক তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায়, উচ্চ তাপমাত্রার সঙ্গে খাপ-খাইয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে সি.অরিস।

আর এর কারণে, মানুষের দেহে তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস হওয়ায় তাদের জন্য মানব দেহে বেঁচে থাকা সহজ।

সংক্রমণের সংখ্যা কমাতে কী করা যেতে পারে?

সংক্রমণের সংখ্যা কমাতে হলে প্রথমেই সনাক্ত করতে হবে যে, এই ছত্রাকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে কারা রয়েছে। স্বাস্থ্যসেবা দানকারী কর্মীদের জানতে হবে যে, যারা চিকিৎসার জন্য দীর্ঘদিন হাসপাতাল কিংবা নার্সিংহোমে কাটান, তারাই এ ধরণের সুপার বাগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে সবচেয়ে বেশি থাকেন।

সব হাসপাতালে সি.অরিস একইভাবে সনাক্ত করা হয় না। অনেক সময় এর সংক্রমণকে মুখ ও গলায় ক্ষতের মতো সাধারণ ছত্রাকের সংক্রমণ বলে মনে করা হয় এবং ভুল চিকিৎসা দেয়া হয়।

উন্নত চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হলে প্রাথমিক পর্যায়েই সি.অরিসের সংক্রমণ সনাক্ত করা সম্ভব। আর এর ফলে সঠিক চিকিৎসা দেয়ার মাধ্যমে অন্য রোগীদের মধ্যে এর সংক্রমণ ঠেকানো সম্ভব। সি.অরিস বেশ শক্তিশালী এবং এটি খোলা পরিবেশে অনেক দিন ধরে বেঁচে থাকতে পারে। সাধারণ ডিটারজেন্ট এবং সংক্রমণরোধী রাসায়নিক দিয়ে একে মেরে ফেলা যায় না।

যেসব হাসপাতালে এই সুপার বাগের সংক্রমণ ধরা পড়েছে সেখানে উপযুক্ত পরিষ্কারক রাসায়নিক ব্যবহার করে এর সংক্রমণ রোধ করা যেতে পারে।

ঢাকা টাইমস/২৬আগস্ট/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পাংশায় আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার এজাহারনামীয় আসামি গ্রেপ্তার
শেখ হাসিনা পালানোর আগে স্বজনদেরকে খুদে বার্তা পাঠিয়েছিল: আলাল
মাহমুদুর রহমানের মায়ের ইন্তেকালে সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের শোক প্রকাশ
অনুমোদনহীন সংগঠন গঠনের বিষয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক করেছে বিএনপি
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা