হাঁটু ব্যথার কারণ ও প্রতিকার

অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম
  প্রকাশিত : ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ১৪:১০| আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০১৯, ১৫:২৯
অ- অ+
অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম

পরিবারে বাবা-মায়ের যদি কারো হাঁটু ব্যথা থাকে, ওজন বেশি থাকে, হাঁটুতে আঘাত পান সেক্ষেত্রে হাঁটু ব্যথা হতে পারে। তবে বাতের ব্যথা ভিন্ন। তাই সব ব্যথাকে আর্থারাইটিস বলা হলেও কিন্তু বাতের রোগের সঙ্গে যখন ব্যথা হবে সেটা একটা বিষয়। আর দৈনন্দিন চলাচল করার সময় কোনো কারণে ব্যথা হলে সেটা ভিন্ন বিষয়। এর বাইরেও চলন্ত বাস থেকে লাফ দিয়ে নামা, গাড়িতে দাঁড়ানো অবস্থায় বারবার ব্রেক কষার জন্যও হাঁটুতে ধাক্কা লাগে। আবার মানুষ অনেক বড় বোঝা মাথায় নিয়ে রাস্তা পার হয়। তার কিন্তু সব চাপটা পড়ে হাঁটুতে। এটাও ব্যথার একটা কারণ। বলা যায়, চলাফেরা এবং সুন্দর লাইফস্টাইলের অভাবে এসব ঘটনা ঘটে।

জুতাও একটি বড় কারণ। মানুষের পায়ের হিসাব করে জুতা তৈরি করার কথা। মেয়েরা শখ করে উঁচু জুতা পরে থাকে। এটা হাঁটুর জন্য ক্ষতিকর। আবার ছেলেরা যদি পায়ের সঙ্গে ম্যাচ না করে জুতা পরে সেটাও ক্ষতি।

রিকশায় চলাফেরা করার সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। কারণ রিকশায় ওঠার সময় পা দিয়ে উঠতে হয়। তখন পুরো হাঁটুতে ভর দিয়ে ওঠতে হয়। আবার নামার সময়ও তার পায়ে ভর দিয়ে নামতে হয়। প্রাইভেটকারেও সামনের থেকে পেছনের সিটে ওঠানামায় হাঁটুতে সমস্যা হয়।

মধ্যবয়স্ক ও বয়স্ক মানুষের অস্টিওআর্থারাইটিসই বেশি হয়। বয়স ৪০ থেকে যতই বাড়ে এই রোগও তত বাড়ে। ১০০ জনের মধ্যে ১০ জনের এই সমস্যা পাওয়া যায়। রোগটি গ্রামের মানুষ থেকে শহরের মানুষের মধ্যে বেশি দেখা যায়। পুরুষ থেকে নারীদের বেশি হয়। শহরের বাড়ির সিঁড়িগুলো খুব খাঁড়া থাকে। উঁচু থাপগুলোতে ওঠানামা করায় হাঁটু আর ভালো থাকে না। এই রোগের প্রতিকার হিসেবে ভালো জুতা পরতে হবে। সচেতন হতে হবে। চলন্ত গাড়ি থেকে ওঠানামা করা যাবে না। রিকশায় উঠলে উঁচু জায়গা থেকে ওঠবেন। উঁচু জায়গায় নামবেন। ওজন বহন করার সময় দুই হাতে সমান ওজন বহন করতে হবে। উঁচু ধাপের সিঁড়ি এড়িয়ে চলতে হবে। দীর্ঘসময় দাঁড়িয়ে কাজ করলেও মাঝেমধ্যে বিশ্রাম নিতে হবে।

শুরুতে প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেলে হয়তো কাজ করতে পারে। পরিস্থিতি ভালো না হলে লিভার-কিডনির অবস্থা দেখে চিকিৎসক ব্যথানাশক ওষুধ দেবেন। কিন্তু এটা যত কমদিন পর্যন্ত খাওয়া যায় ততই ভালো। এতেও কাজ না হলে হাঁটুর জয়েন্টে এক ধরনের স্টোরেয়েড ইনজেকশন দেওয়া হয়। এটা অবশ্যই বিশেষজ্ঞ এবং অভিজ্ঞ চিকিৎসককে দিয়ে নিতে হবে। এই প্রটোকল মেনে চলাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ অনেকেই একাধিকবার ইনজেকশন পুশ করে থাকে। কিন্তু বেশি করে পুশ করলে উপকারের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে। জয়েন্টের মধ্যে যে কার্টিলেস ভুলক্রমে সুই সঠিকভাবে যদি ব্যবহার করা না হয় তাহলে এটি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।

যেসব রোগীর হাঁটুতে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয় কিন্তু করা যায় না তাদের অনেক সময় স্টেম্পসেল থেরাপি দেয়। এটা অপ্রয়োজনে দেওয়া হয়, যা দুঃখজনক। কারণ এখন পর্যন্ত স্টেম্পসেল থেরাপি মানুষের শরীরে কার্যকারিতার কোনো প্রমাণ হয়নি। তাই ধাপে ধাপে চিকিৎসা হলো হাঁটু ব্যথা রোগের জন্য ভালো।

শেষ সময়ে না এসে হাঁটু ব্যথার জন্য শুরুতেই চিকিৎসকদের কাছে যেতে হবে। কারণ ফার্মেসি থেকে ব্যথানাশক ওষুধ খেতে খেতে কিডনির সমস্যাসহ আরো বেশ কিছু কঠিন রোগে আক্রান্ত হয় রোগীরা। ওষুধ খেয়ে অনেক সময় গ্যাস্ট্রিকে ভোগেন।

কিন্তু শুরু থেকে রোগীরা যদি সচেতন হোন তাহলে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। বিশেষ করে একনাগাড়ে যদি বেশ কিছুদিন হাঁটু ব্যথা থাকে তাহলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

হাঁটু ব্যথার সমস্যা চিহ্নিত করতে ও বাতের সমস্যা জানতে রক্তের একটি টেস্ট করা হয়। আর কিডনি এবং লিভারের একটি পরীক্ষা করা হয়। অনেকে মনে করে বেশি পানি খেলে কিডনি ভালো থাকবে সেটাও ভুল ধারণা। ওষুধ খেলেও কিডনি সমস্যা হতে পারে। তাই চিকিৎসার আগে এটা দেখে নেওয়া জরুরি।

লেখক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) রিউমেটোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
দোহার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নূরুল হক গ্রেপ্তার
‘প্যালেস্টাইন-২’ হাইপারসনিক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালাল ইয়েমেন
সুবর্ণচর এক্সপ্রেস দ্রুত চালুর দাবিতে নোয়াখালীতে দেড়ঘণ্টা রেলপথ অবরোধ 
জেফারের তীরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দর্শক-শ্রোতার
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা