ভ্রমণ

হিমালয় কন্যা দার্জিলিং

সৈয়দ রশিদ আলম
  প্রকাশিত : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১১:৫৯| আপডেট : ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯, ১২:০১
অ- অ+

বাংলাদেশ থেকে যারা ভ্রমণের উদ্দেশে ভারত যান, তাদের অন্যতম পছন্দের জায়গা দার্জিলিং। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ পর্বতমালার অনেকটা কোলেই এর অবস্থান। তাই দার্জিলিংকে বলা হয় হিমালয় কন্যা।

দার্জিলিং ভ্রমণের পর অনেকেরই মনে হয়েছে, এই নির্জনতায় যদি চিরদিন কাটিয়ে দিতে পারতাম! কলকাতা থেকে দার্জিলিংয়ের দূরত্ব ৬৬৩ কিলোমিটার। ২১৩৪ মিটার উচ্চতায় নীল আকাশের গায়ে সাদা সাদা মাথাওলা পাহাড় নিয়ে আপনার অপেক্ষায়। যাওয়ার পথে ঘুম পেরিয়ে পাবেন দার্জিলিং থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে বাতাসিয়া লুপ।

টয় ট্রেনে চেপে ওপর দিকে উঠতে উঠতে টের পাবেন পুলকিত মনে রোমাঞ্চের শিহরণ। এই দার্জিলিংয়ে দর্শনীয় স্থান হচ্ছে ঘুম মনাস্ট্রি, সেন্ট অ্যানড্রুস চার্চ, মিরিক লেক, সেন্ট পল্স স্কুল। এছাড়া সারা দার্জিলিংয়ে যেখানে যাবেন সেখানেই হীমশীতল পাহাড়ের ছোঁয়া পাবেন। সেখান থেকে প্রথমে কাঞ্চনজঙ্ঘা যাবেন, একপাশে খাড়াই পাহাড়, অন্যধারে অতলস্পর্শী খাদ। মাঝেমধ্যে চোখে পড়ে ঝরনা আর পাহাড়ি নদী, এখনও পর্যন্ত যাদের নামকরণ হয়নি। মেঘ ও রৌদ্রের ক্ষণিক খুনসুটির ফাঁকে দাঁড়িয়ে রয়েছে পাইন ও দেবদারু, ওদের গায়ে বহু যুগের জমে থাকা বরফ। দূরে উদ্ধত শাখার শিখরে রডোডেনড্রন গুচ্ছ।

এই সেই জায়গা যেখানে কাঞ্চনজঙ্ঘা নামের আস্ত পাহাড়টাই সত্যজিৎ রায়ের সিনেমার চরিত্র হয়ে যায়। কাছেই পাহাড়ের কোলে, গাছে ছাওয়া মিরিক হ্রদ। ঘুম মনাস্টারি, লয়েডস বোটানিক্যাল গার্ডেন, পদ্মজা নাইডু জুওলজিকাল পার্ক, ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়াবার বা নিছকই বসে থাকার ম্যাল ও ম্যাল-সংলগ্ন কেভেন্টার্সের দোকানে নানা স্বাদের খাদ্য ও পানীয় তো আছেই; তবে বোধহয় সব থেকে বেশি রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছে টাইগার হিলÑ কাকভোরে ঘুম থেকে উঠে সূর্যোদয়Ñ সারা জীবনের জন্য স্মৃতির সঞ্চয়ে এক উজ্জ্বল সংযোজন। দার্জিলিং যাওয়ার পথে আর যেসব জায়গায় পর্যটকরা গিয়ে থাকেন তার কয়েকটি হচ্ছেÑ কালিম্পং, প্রাচীন মনাস্ট্রির শহর কালিম্পং তার ইতিহাস আর বর্তমানÑদুইয়ের প্রতিই সমান যত্নবান।

ব্রিটিশ শাসনকালে তৈরি হওয়া বিখ্যাত স্কুলগুলো এখনো ভারতীয় শিক্ষাসূত্রে বিশেষ নাম। ঘুম স্টেশন থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার রাস্তা আসলে বেড়াতে যাওয়ার উপহার। তিস্তা আর রংগীত নদীর সংগম, লার্ভাস স্পটে একটু না দাঁড়ালে অনেক কিছু মিস করতে পারেন। দেখতে পারেন অরণ্যের আশ্রয়ে অপেক্ষমাণ মর্গ্যান হাউস, গলফ কোর্স, দেওলো ভিউ পয়েন্ট, ড. গ্রাহামস হোম, পেডং-থোংসা-থার্পা চোলিং মনাস্ট্রি, পশুপাখি আর অর্কিড।

লাভা-কালিম্পং থেকে মাত্র আড়াই ঘণ্টার পথ। উচ্চতা ৭,০১৬ ফুট। লাভার অন্যতম আকর্ষণ পাখি। পশ্চিমবঙ্গে যে গুটিকয় স্থানে শীতকালে বরফ দেখা যায় লাভা তার মধ্যে অন্যতম। শহুরে যন্ত্রণা থেকে অনেক দূরে তার অবস্থান প্রকৃতির কোলে।

লাভা মনাস্ট্রি আর বিভিন্ন লুপ্তপ্রায় প্রজাতির সংগ্রহশালা নেওরা ভ্যালি ন্যাশনাল পার্ক অবশ্য দ্রষ্টব্য, যেখানে দেখতে পাবেন রেড পান্ডা, ক্লাউডেড লেপার্ড, মাস্ক ডিয়ার, কালো ভল্লুক, গোল্ডেন ক্যাট, হিমালয়ান ফ্লাইং স্কুইরেলসহ আরো অনেক দুষ্প্রাপ্য প্রাণী। লোলেগাঁও-লাভা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে ৫,৫০০ ফুট উচ্চতায় লোলেগাঁও। শান্ত, স্তব্ধ, হীমশীতল রহস্যময়তার অন্য নাম। পার্থিব জীবনের কোলাহল থেকে অনেক দূরে প্রকৃতির কোলে এক নিস্তব্ধ শান্তির রূপকথা। আর এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার এক অসাধারণ রূপ আপনাকে মুগ্ধ করবেই।

দার্জিলিং যাওয়ার পথে একদিন কাটিয়ে যান কার্শিয়াংয়ে। ১৮৩৫ সালে ব্রিটিশ-ভারতে অন্তর্গত হয়ে ১৮৮০ নাগাদ এই ছোট শহরটি হয়ে ওঠে ভারতের অন্যতম ট্যুরিস্ট স্পট। ঘুরে অবশ্যই দেখবেন সেন্ট পল্স চার্চ, গিদ্দাপাহাড় দুর্গামাতা মন্দির, জগদীশ মন্দির, ডাউন হিলের বুদ্ধ গুম্ফা (বৌদ্ধ মন্দির), হাট-বাজারের জুমা মসজিদ, ডিয়ার পার্ক, ডাওহিল স্কুল আর ওয়াটার ফল্স। সান্দাকফু-১১,৯২৯ ফুট উচ্চতায় পশ্চিমবঙ্গের উচ্চতম শৃঙ্গ। দার্জিলিং জেলার সিংগালিলা ন্যাশনাল পার্কের ধারে পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের সীমান্তে সান্দাকফু ট্রেকিংয়ের মুক্তাঞ্চল। মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে মাউন্ট এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, মাকালু আর লোটসের বরফঢাকা অঞ্চল একই সাথে অভিজ্ঞতায় ধারণ করার এক চিরস্মরণীয় সুযোগ সান্দাকফু ছাড়া আর কে দেবে?

ঢাকার একাধিক বেসরকারি টুরঅপারেটর আপনাকে দার্জিলিংয়ের উল্লিখিত প্রতিটি প্রান্তর ঘুরে দেখাবেন। এছাড়া কলকাতা গিয়ে সেখানকার বেসরকারি পর্যটন সংস্থার সহযোগিতা নিতে পারেন। দার্জিলিংয়ে একাধিক হোটেল-মোটেল রয়েছে। থাকা- খাওয়ার অত্যন্ত ভালো ব্যবস্থা রয়েছে। দার্জিলিং যাওয়ার সেরা সময় শীতকাল। যারাই যাবেন তারা দলবদ্ধ হয়ে যাবেন। যারা হিমলায় পর্বতে যাননি তারা দার্জিলিং গিয়ে হিমালয় পর্বতের ছোঁয়া পেয়ে যাবেন। দার্জিলিং এমন একটি স্থান যেকোনো সময় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অথবা একা ঘুরে আসা যায়।

সৈয়দ রশিদ আলম: গবেষক ও পর্যটক

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
বিশ্ব গাধা দিবস যেভাবে এলো
মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দাঁড়িয়ে থাকা অ্যাম্বুলেন্সে বাসের ধাক্কা, নিহত ৪
টঙ্গীতে গলায় ফাঁস নিয়ে যুবকের আত্মহত্যা 
নৌপথে আইনশৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ, চোরাচালান দমনে কাজ করছে কোস্ট গার্ড
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা