দুঃসময়ে জনসেবায় কাটছে যাদের দিন-রাত

মনদীপ ঘরাই
 | প্রকাশিত : ৩০ মার্চ ২০২০, ২১:৫৭

কোনো এক সংকট এলেই সবার শুরুর প্রশ্নটা থাকে, ‘প্রশাসন করেটা কী?’ এই প্রশ্নটা করোনার এই অভাবনীয় দুঃসময়েও হয়তো ঘুরে ফিরে এসেছে কারো কারো মনে। সেটার দাপ্তরিক জবাব দেয়া আমার সীমার মধ্যে না হলেও নিজের পরিচিত কিছু সহকর্মীর অভিজ্ঞতায় সে জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছি গত কয়েকদিনে।

শুরুটা করবো যশোর জেলার মনিরামপুর উপজেলা দিয়েই। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান শরিফী স্যারের সাথে কথা হচ্ছিল ফোনে। এপার থেকেই কণ্ঠে ব্যস্ততাটা টের পেলাম। সকাল ৮টা থেকে কর্মঘণ্টা শুরু হয় তার। চলতে থাকে রাত ১০টা-১১টা পর্যন্ত। কী এমন করছেন তিনি যার জন্য এত এত ঘণ্টা কাজ করতে হচ্ছে?

এই কয় দিনে ১৫০০ এর উপর পরিবারে খাবার পৌঁছে দিয়েছেন, নিশ্চিত করে চলেছেন সামাজিক দূরত্ব। পাশের উপজেলায় একসময় এসিল্যান্ড ছিলাম। দৃশ্যটা যেন চোখের সামনে ভাসছে। সবচেয়ে মন খারাপ করে দিল, ১৩ তারিখ ভূমিষ্ট হওয়া সন্তানকে এ পর্যন্ত একবারের জন্যও কোলে নিতে পারেননি শুনে!

আসাদুজ্জামান। দেশের প্রথম লকডাউন হওয়া মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ইউএনও। ওর অভিজ্ঞতাটা আরও বেশি দাগ কেটেছে মনে। কাল যখন রাত ১১টার পরে ফোন দিয়েছি, তখনও ডিউটিতে। চার হাজারের উপর পরিবারে খাবার পৌঁছে দিয়েছে। লকডাউন নিশ্চিত করে চলেছে দিন-রাত। ওর ঘামে ভেজা শার্টটা দূর থেকেও যেন দেখতে পেলাম। এতকিছুর পরও যখন প্রশ্ন করলাম, কেমন আছ ভাই?

এক মুহূর্ত দেরি না করেই উত্তর দিয়েছে, ‘ভালো আছি দাদা’।

শিবলী সাদিক। গাজীপুরের কালীগঞ্জের ইউএনও। হাজারের উপর মাস্ক ও পিপিই বিতরণ করেছে বিভিন্ন পর্যায়ে। তালিকার মধ্যে আছেন চিকিৎসক, মাঠকর্মী, নার্সসহ উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ে মাঠে কাজ করা মানুষগুলো। ফোন করতেই বললো, ‘বন্ধু এখনো অনেক কাজ করা বাকি।’

পিরোজপুরের কাউখালির ইউএনও ব্যাচমেট রেখা খাতুন হেঁটেছেন গতানুগতিক পথের বেশ বাইরে। নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য জনগণের দোঁড়গোড়ায় পৌঁছে দিতে চালু করেছেন ভ্রাম্যমান দোকান। দুটো ট্রাক দিয়ে শুরু করা এ উদ্যোগ ছড়িয়ে গেছে অন্য অনেক পর্যায়ে।

ফরিদপুরের সদরপুরের এসিল্যান্ড সজল কুমারের সাথে ম্যাসেঞ্জারে আলাপ হয় নিয়মিত। কাল জানালো অভিনব এক উদ্যোগের কথা। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে স্যানিটাইজার। সেই স্যানিটাইজার বিক্রির টাকা দিয়ে খাবার কিনে দেয়া হচ্ছে উপজেলার দুস্থ মানুষদের।

বসে নেই পিরোজপুরের ইন্দুরকানি উপজেলার ইউএনও মুজাহিদ। বন্ধু আমার বাড়ি বাড়ি গিয়ে চাল বিতরণ করছে। একই চিত্র সাভারেও। এসিল্যান্ড মাহফুজ পুলক কাল রাত কয়টা পর্যন্ত দুর্গম ইউনিয়নগুলোতে খাবার পৌঁছে দিয়েছে তা হিসাব করা কঠিন।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা স্যারের উদ্যোগটাও না বলে পারছি না। সহকর্মীদের সবাইকে নিয়ে দুইদিনের বেতন একত্র করে পিপিই কিনে দিয়েছেন স্বাস্থ্যসেবা সংশ্লিষ্টদের। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জসীম স্যার তো নিজেই বাড়ি বাড়ি ছুটে চলেছেন খাদ্য সহায়তা নিয়ে।

এ তো মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা ঘটনা সামনে আনতে পেরেছি। পুরো মানচিত্র জুড়ে এমন আন্তরিক পরিশ্রমের গল্প ছড়িয়ে আছে মানবিক স্পন্দন নিয়ে।

ব্যক্তিগত এসব উদ্যোগের সাথে যোগ হয়েছে নতুন মাত্রা। বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ স্যারের উদ্যোগে সারাদেশের প্রশাসন পরিবারের সবাই নববর্ষ ভাতা অর্পণ করেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে।

এই মানুষগুলো আমার সহকর্মী, ভাবতেই অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করে, যারা সরকারের শুভ উদ্যোগের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সবকিছুর হিসেব-নিকেষ ভুলে কাজ করে চলেছেন ঘড়িকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে: দেশের জন্য; মানুষের জন্য।

এ প্রশাসন স্বাধীন বাংলার। এ প্রশাসন জনসেবার।

লেখক: সিনিয়র সহকারী সচিব, বাংলাদেশ সরকার।

সংবাদটি শেয়ার করুন

নির্বাচিত খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচিত খবর এর সর্বশেষ

ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছেন মাদ্রাসায় পড়ুয়া মাজিদুল হক

মুন্সীগঞ্জে ১০ কোটি টাকার পানি শোধনাগার কাজেই আসছে না

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে সৌর বিদ্যুৎ দিচ্ছে ‘সোলার ইলেক্ট্রো’

শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণাসহ ৯ দাবি বাস্তবায়ন চায় শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ

শিশু নির্যাতন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং র‌্যাগিং প্রতিরোধ নীতিমালা বাস্তবায়নের আহ্বান

শহরের ব্যস্তজীবনে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ড. রাশেদা রওনকের আলোচনায় আমন্ত্রণ

২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের করোনা শনাক্ত

২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের করোনা শনাক্ত

২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের করোনা শনাক্ত

দা‌ড়ি-গোঁফ গজাচ্ছে জান্না‌তির মুখে, প‌রিবর্তন হয়েছে কণ্ঠস্বর

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :