শিশু নির্যাতন: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং র‌্যাগিং প্রতিরোধ নীতিমালা বাস্তবায়নের আহ্বান

ঢাকা টাইমস ডেস্ক
 | প্রকাশিত : ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ২০:২৪

ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গ, জাতি ইত্যাদি নির্বিশেষে সব ক্ষেত্রে সব শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। বলছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং র‌্যাগিং প্রতিরোধ নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে শিশু নির্যাতন কমানো সম্ভব হবে।

বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন নিরসনে শিক্ষকদের কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা বিষয়ক এক মতবিনিময় সভায় এসব বলেন আলোচকরা। শিশু অধিকার সপ্তাহ (২-৮ অক্টোবর) ও বিশ্ব শিক্ষক দিবস (৫ অক্টোবর) উপলক্ষে ‘শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি নিরসনে কোয়ালিশন’ এই আয়োজন করে।

কোয়ালিশনের সদস্য টইটম্বুর সংগঠনের কো-ফাউন্ডার হাসনাইন সবিহ্ নায়কের সঞ্চালনায় জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর অন্যতম প্রণেতা এবং এডুকেশন ওয়াচ বাংলাদেশের সদস্য অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ ‘বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিজগৃহে শিশুর নিরাপদ অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিতকরণ প্রতিপাদ্যে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এবং ‘শিশুর প্রতি শারীরিক মানসিক শাস্তি নিরসনে আইনগত সুরক্ষা এবং বাস্তবায়নে করনীয়’ বিষয়ক উপস্থাপনা দেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তাজুল ইসলাম।

আলোচক ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিরুল হক তুহিন, আইআইডির প্রধান নির্বাহী পরিচালক সাইদ আহমেদ, এশিয়া সাউথ প্যাসিফিক এসোসিয়েশন ফর ব্যাসিক এন্ড এডাল্ট এডুকেশন (এএসপিবিএই) ক্যাপাসিটি সাপোর্ট এন্ড এডভোকেসী এডভাইজার কে এম এনামুল হক ও দৈনিক সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান। স্বাগত বক্তব্য দেন ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম। সভার উদ্দেশ্য ও কোয়ালিশনের কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন ব্লাস্টের এডভোকেসি আ্যন্ড কমিউনিকেশন ডিরেক্টর মাহবুবা আক্তার।

অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ তার প্রবন্ধ উপস্থাপনায় বলেন জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ উদ্যেগ ও কর্মসূচির আওতায় শিক্ষকতা পেশার উন্নয়নে ১৮ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের প্যানেল থেকে গৃহীত পদক্ষেপগুলো বাংলাদেশে বাস্তবায়নের আহ্বান জানান। তিনি শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক গত ২৩ জানুয়ারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং ও র‌্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালার প্রশংসা করে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উক্ত নীতিমালা বাস্তবায়নের উপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে যা আছে তা নিয়ে কীভাবে পরিবর্তন আনতে পারি তা নিয়ে কাজ করতে হবে। সর্বোপরি তিনি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের ভালো পরিবেশ নিশ্চিতের জন্য নীতিমালার বাস্তবায়ন করার আশা ব্যক্ত করেন।

ব্লাস্টের আইন উপদেষ্টা এস এম রেজাউল করিম বলেন, বুলিং ও র‌্যাগিং সংক্রান্ত আইন নিয়ে অনেকের অজ্ঞতা রয়েছে। মাদ্রাসার ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি আরো জটিল।

ব্লাস্টের এডভোকেসি আ্যন্ড কমিউনিকেশন ডিরেক্টর মাহবুবা আক্তার বলেন, ৩০টি সংগঠন নিয়ে আমাদের কোয়ালিশনটি গঠিত হয়েছে। শিশু আইনের ৭০ ধারা নিয়ে আমরা সরকারকে কিছু পরামর্শ দিয়েছি। বুলিং ও র‌্যাগিং নিয়ে দেশে অনেকে সংশয় রয়েছে্। আমরা খুবই আনন্দিত যে এই বিষয়ে আমরা একটি পলিসি পেয়েছি, আমাদের ভবিষ্যতের কাজ হলো এই পলিসি বাস্তবায়নে কাজ করা্।

আইনজীবী তাজুল ইসলাম শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক শাস্তি বন্ধে ব্লাস্ট কর্তৃক প্রস্তাবিত শিশু আইন, ২০১৩ এর সংশোধন দ্রুত পাস করার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

আবু সাইদ খান বলেন, আমাদের শিক্ষকদের মানবিক চরিত্র থাকা দরকার। তাদের লিঙ্গ নিরপেক্ষ, ধর্ম নিরপেক্ষ এবং জাতি নিরপেক্ষ হতে হবে। শিক্ষাব্যবস্থা পরিবর্তন হওয়া দরকার এবং এখানে যে শ্রেণিবৈষম্য তা নিরসন করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এটি জাপান, চীনে করা সম্ভব হয়েছে। ভালো শিক্ষক এবং ভালো পরিবেশ দরকার যেখানে একে অপর থেকে শিখবে। এজন্য দরকার একটি সামগ্রিক আন্দোলন যা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক একসঙ্গে হলেই সম্ভব হবে।

সাইদ আহমেদ বলেন, আমাদের একটি জরিপে দেখা গেছে, শিশু মার খাওয়ার ব্যপারটিকে খুব স্বাভাবিকভাবে দেখে। শিক্ষকের কাছেই একটা শিশু সবচেয়ে বেশি সময় পার করে, অন্যান্য দেশে শিক্ষকরাই শিক্ষার্থীদের শিষ্টাচার শেখান। শিক্ষক যদি শিশুকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে সেক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাই আইনের প্রয়োগ খুব একটা হয় না। শিক্ষক নিয়োগে মান রক্ষার ব্যাপারেও আমরা অনেক পিছিয়ে আছি। কারণ শিক্ষাক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ কম। শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে একটি গবেষণায় দেখা গেল , শিশুর খারাপ ফলাফল হলে মৌখিক ও শারীরিক নির্যাতন করা হয়। এতে শিশুরা আরো মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং তার উদ্ভাবনী ক্ষমতা কমে যায়।

আইনজীবী আমিনুল হক বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বুলিং, র‍্যাগিং প্রতিরোধ সংক্রান্ত নীতিমালা-২০২২, এটি জনস্বার্থ মামলার ভিত্তিতে করা হলেও মামলাটির রেফারেন্স তাতে উল্লেখ নেই। আইনগত পরিবর্তনের মাধ্যমে কেবল শিশুর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বন্ধ হবে না। ভালো শিক্ষকেরা বেশিদিন তাদের পেশায় থাকতে চায় না। ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত দুটি রায় এসেছে। কিন্তু এরপরেও সুদুরপ্রসারী কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে সাংস্কৃতিকভাবে কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে ।

কে এম এনামুল হক বলেন, শিশুর প্রতি বুলিং ও র‌্যাগিং নীতিমালাটি আমাদের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করবে। শিশুর জন্য সরকারি হটলাইন নাম্বার আছে ১০৯৮, ৯৯৯। কিন্তু শিশুরা কতটা এই বিষয় সম্পর্কে জানে তা আমাদের জানা নেই। ইউনেস্কো শিক্ষক গাইডিং প্রিন্সিপাল রয়েছে, যা আমাদের দেশে অনুসরণ করা হয় না। শিশুদের প্রতি সহিংসতা নিরসন করতে আমাদের কোয়লিশনকে শক্তিশালী করা, পলিসি পর্যায়ে সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করা এবং তরুণ শিক্ষকদের সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। -বিজ্ঞপ্তি

(ঢাকাটাইমস/০৪অক্টোবর/কেএম)

সংবাদটি শেয়ার করুন

নির্বাচিত খবর বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাচিত খবর এর সর্বশেষ

ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করছেন মাদ্রাসায় পড়ুয়া মাজিদুল হক

মুন্সীগঞ্জে ১০ কোটি টাকার পানি শোধনাগার কাজেই আসছে না

বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডকে সৌর বিদ্যুৎ দিচ্ছে ‘সোলার ইলেক্ট্রো’

শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণাসহ ৯ দাবি বাস্তবায়ন চায় শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ

শহরের ব্যস্তজীবনে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ড. রাশেদা রওনকের আলোচনায় আমন্ত্রণ

২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের করোনা শনাক্ত

২৪ ঘণ্টায় ৯ জনের করোনা শনাক্ত

২৪ ঘণ্টায় ১৩ জনের করোনা শনাক্ত

দা‌ড়ি-গোঁফ গজাচ্ছে জান্না‌তির মুখে, প‌রিবর্তন হয়েছে কণ্ঠস্বর

জনপ্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালালে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব: এলজিআরডি মন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :