২৯ এপ্রিলের ভয়াল স্মৃতি আজও কাঁদায় উপকূলবাসীকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৯ এপ্রিল ২০২০, ১২:০৫
অ- অ+

ভয়াল ২৯ এপ্রিল আজ। উপকূলের স্বজনহারা পরিবারে কান্নার দিন। ১৯৯১ সালের এই দিনে প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চলের প্রায় দেড় লাখের মতো মানুষ প্রাণ হারায়। সরকারি হিসেবে প্রাণহানির সংখ্যা এক লাখ ৩৮ হাজার বলা হলেও বাস্তবে সেই সংখ্যাটা ছিল দুই লাখেরও বেশি। নিহতের সংখ্যা বিচারে পৃথিবীর ভয়াবহতম ঘূর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল এটি। প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে বয়ে যাওয়া সেদিনের ঘূর্ণিঝড়ের থাবায় আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে কোটিরও বেশি মানুষ।

২৯ বছর আগে ঘটে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াল স্মৃতি এখনো তাড়া করে সেদিনের ঝড়ে বেঁচে যাওয়া মানুষদের। ওই দিনটের কথা মনে করলে এখনো অনেকে আঁতকে ওঠেন। ভয়াল ওই ঘটনা এখনও দুঃস্বপ্নের মতো তাড়িয়ে বেড়ায় উপকূলবাসীকে। জলোচ্ছ্বাস আর ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে হলে গভীর রাতে ঘুম ভেঙে যায় উপকূলবাসীর। ঘটনার এতো বছর পরও নিহতদের লাশ, স্বজন হারানোদের আর্তচিৎকার আর বিলাপের স্মৃতি মুছে ফেলতে পারছেন না তারা।

সেদিনের স্মৃতিচারণ করে আলফাজ আহমেদ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পরদিন উপকূলজুড়ে ছিল শুধু লাশ আর লাশ। শুধু মানুষ নয়, গরু-ছাগল-মহিষ আর মানুষের মৃতদেহে একাকার হয়ে গিয়েছিল সেদিন। কোনও রকম ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ছাড়া মানুষ ও পশু মাটি চাপা দেওয়া হয়েছিল।

শুধু আলফাজই নন, উপকূলের শত শত মানুষ তার মতো আপনজনকে হারিয়ে এখনো স্মৃতি হাতড়ে বেড়াচ্ছেন। প্রায় আড়াই যুগ সময় পিছনে ফেলে এসেছেন জলোচ্ছ্বাসে আক্রান্ত মানুষ। কিন্তু হারানোর বেদনা তাদের কখনো নিস্তার দেয়নি। উপকূলবাসীর স্বজন হারানোর সেই ভয়াল ২৯ এপ্রিল আজকের দিনে ভারাক্রান্ত মনে অনেকে নিজ উদ্যোগে দোয়া করে সান্ত্বনা খোঁজার চেষ্টা চালাবেন।

প্রতি বছরের এই দিনে বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করলেও এবার প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের কারণে কোনো কর্মসূচি পালন হবে না। সারাদেশের মতো কক্সবাজারেও করোনার প্রাদুর্ভাবে লকডাউন পরিস্থিতি থাকায় অন্য সময়ের মতো শোক র‌্যালি বা ঘটা করে মিলাদ ও মোনাজাত হবে না। তবে নিহত এবং নিখোঁজদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় স্বজনরা নিজেদের মতো করে দোয়া করবেন।

পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়টি ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে। এই ঘূর্ণিঝড়ের ফলে ৬ মিটার (২০ ফুট ) উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে উপকূলীয় এলাকা প্লাবিত হয় এবং এতে প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারায়। এদের বেশিরভাগই নিহত হয় চট্টগ্রাম জেলার উপকূল ও দ্বীপসমূহে।

সন্দ্বীপ, মহেশখালী, হাতিয়া দ্বীপে নিহতের সংখ্যা সর্বাধিক। শুধু সন্দ্বীপেই মারা যায় প্রায় ২৩ হাজার লোক। ধারণা করা হয়, এই ঘুর্ণিঝড়ের কারণে প্রায় ১ দশমিক পাঁচ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। সাগর ও নদীর উপকূল প্লাবিত হয়। কর্ণফুলি নদীর তীরে কংক্রিটের বাঁধ থাকলেও এটি জলোচ্ছ্বাসে ধ্বংস হয়। চট্টগ্রাম বন্দরের ১০০ টন ওজনের একটি ক্রেন ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে স্থানচ্যুত হয় এবং আঘাতের কারণে টুকরো টুকরো হয়ে যায়।

বন্দরে নোঙর করা বিভিন্ন ছোট বড় জাহাজ, লঞ্চ ও অন্যান্য জলযান নিখোঁজ ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যার মধ্যে নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর অনেক যানও ছিল।

এছাড়া প্রায় ১০ লাখ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ২৯ এপ্রিল রাতে এটি চট্টগ্রামের উপকূলবর্তী অঞ্চলে ২৫০ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে, যা ক্যাটাগরি-৪ ঘূর্ণিঝড়ের সমতুল্য।

ঢাকাটাইমস/২৯এপ্রিল/এমআর

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
নিজ স্বার্থে সীমান্তের ওপারে যোগাযোগ রাখবে বাংলাদেশ, কে কী বলল যায় আসে না: নিরাপত্তা উপদেষ্টা
বাংলাদেশের হয়ে খেলতে ফিফার অনুমতি পেলেন সামিত সোম
এপ্রিলে ৫৬৭ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৮৩, শীর্ষে মোটরসাইকেল
সাবেক মন্ত্রী তাজুলসহ ১৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা