ব্রিটেনে বেশি মরছে কৃষ্ণাঙ্গ, বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, ঢাকা টাইমস
  প্রকাশিত : ০৮ মে ২০২০, ১৫:৪৮
অ- অ+

ব্রিটেনের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের নতুন প্রকাশ করা রিপোর্ট বলছে কৃষ্ণাঙ্গ নারী পুরুষের করোনাভাইরাসে মৃত্যুর ঝুঁকি শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় দ্বিগুণ। এরপরেই আছে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিরা। তাদেরও মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্য হারে বেশি।

পরিসংখ্যান দপ্তরের তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখানো হয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামাজিক বৈষম্য এর জন্য সম্ভবত দায়ী। বয়স, কোন এলাকায় কীভাবে তারা থাকেন, সুযোগের অভাব এবং আগে থেকে থাকা স্বাস্থ্যগত কিছু সমস্যা- এসব আমলে নিয়েই রিপোর্টটি তৈরি করা হয়েছে। খবর বিবিসির।

বিবিসির পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান রবার্ট কুফি বলেন, এতে পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা হয়নি কেন তাদের ঝুঁকির মাত্রা এত বেশি। তাদের বর্তমান স্বাস্থ্যগত অবস্থার কথা এখানে আমলে নেয়া হয়নি। তারা ছোট জায়গায় অনেকে ঠাসাঠাসি করে থাকে সেটা কারণ কি না, অথবা তাদের কাজের ধরন এমন কি না যেখানে মানুষের সংস্পর্শে তাদের আসতে হয় বেশি, এসব বিষয়ে আরও বেশি তথ্যানুসন্ধান করা দরকার।

ব্রিটেনের পরিসংখ্যান দপ্তর অবশ্য বলছে, তারা দেখেছে এইসব সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠির লোক এমন পেশায় কাজ করেন যেখানে মানুষের সংস্পর্শে তাদের বেশি আসতে হয়, ফলে কাজ থেকে তাদের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। তাদের পেশা ও ঝুঁকির সঙ্গে তার যোগসূত্র নিয়ে তাদের আরও গবেষণার পরিকল্পনা রয়েছে।

হেলথ ফাউন্ডেশন নামে একটি গবেষণা সংস্থা বলছে লন্ডনে মোট কর্মী জনগোষ্ঠির ৩৪% কৃষ্ণাঙ্গ এবং এশিয়। লন্ডনে কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয়রা খাদ্যশিল্পে কাজ করে ৫৪%, স্বাস্থ্য ও কেয়ার খাতে ৪৮% এবং পরিবহনে ৪৪%।

ব্রিটেনে করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের শিকার হয়ে যারা মারা গেছেন তাদের বেশিরভাগই লন্ডনের বাসিন্দা। আর লন্ডনের জনসংখ্যার ৪০% সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ।

ব্রিটেনের জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর (ওএনএস) এবং গবেষণা সংস্থা ইনস্টিটিউট অফ ফিসকাল স্টাডিস (আইএফএস) দুটি প্রতিষ্ঠানই তাদের আলাদা আলাদা গবেষণায় দেখেছে এই ভাইরাসের প্রকোপ আনুপাতিক হিসাবে সবচেয়ে বেশি পড়েছে সংখ্যালঘু বংশোদ্ভুতদের ওপরে।

তবে আইএফএস গবেষকরা বলছেন, এখানে ভৌগলিক অবস্থানের উল্টোদিকে রয়েছে বয়সের বিষয়টা। সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠির মানুষদের বেশিরভাগেরই বয়স শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের থেকে কম। আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বয়সের বিবেচনায় তাদের তুলনামূলকভাবে কম।

তাদের মতে এই দুটি ফ্যাক্টরকে বিবেচনায় নিলে দেখা যাবে শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা সার্বিকভাবে বেশি, কারণ মোট জনসংখ্যায় বয়স্ক মানুষ শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায়ের মধ্যেই বেশি। এবংআক্রান্তের একটা বড় অংশ বৃদ্ধ জনগোষ্ঠি।

ওএনএস তাদের গবেষণায় অন্য কিছু বিষয় নিয়ে এসেছে, যেমনটা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, যেমন স্বাস্থ্য, পেশা ও সুযোগ সুবিধার অভাবের বিষয়গুলো। আর এগুলো আমলে নিয়েই তাদের উপসংহার হল:

# কৃষ্ণাঙ্গদের মৃত্যুর ঝুঁকি শ্বেতাঙ্গদের থেকে ১.৯% বেশি।

# বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিদের মারা যাবার ঝুঁকি ১.৮% বেশি।

# ভারতীয়দের ঝুঁকি প্রায় ১.৫% বেশি।

পাঁচই মে পর্যন্ত পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে ইংল্যান্ডের হাসপাতালগুলোতে করোনাভাইরাসে কৃষ্ণাঙ্গ, এশিয় এবং অন্যান্য জাতিগোষ্ঠির মানুষ মারা গেছে অন্তত ৩,৩৭৮ জন।

যাদের জাতিগত পরিচয় ২০১১ সালের আদম শুমারিতে নথিভুক্ত করা হয়েছিল, সেই তথ্য আমলে নিয়ে দেখা গেছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত প্রতি এক লাখের হিসাবে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে মৃত্যুর হার শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় দ্বিগুণ বেশি। আর কৃষ্ণাঙ্গদের পরেই আছে এশিয়ানরা, যাদের মধ্যে সবার ওপরে আছে বাংলাদেশি ও পাকিস্তানিরা।

ইংল্যান্ড, ওয়েলস আর উত্তর আয়ারল্যান্ডে নিবিড় পরিচর্যায় থাকা রোগীদের ওপর এক জরিপে আরও দেখা গেছে কোভিড নাইনটিন আক্রান্তদের মধ্যে যাদের অবস্থা আশংকাজনক তাদের এক তৃতীয়াংশই এই জনগোষ্ঠির মানুষ। প্রায় ৭ হাজার রোগীর ওপর এই জরিপ চালানো হয়েছে।

দুটি গবেষণা সংস্থাই বলেছে স্বাস্থ্য, পেশা ও জীবনযাপনের মানের সঙ্গে মৃত্যু ঝুঁকির সম্পর্ক থাকতে পারে বলেই তাদের বিশ্বাস।

সাম্প্রতিক জরিপে যদিও এই জনগোষ্ঠির বর্তমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে আলাদাভাবে সমীক্ষা চালানো হয়নি, কিন্তু এই সংখ্যালঘু জাতিগোষ্ঠির সুনির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যা নিয়ে অতীতের গবেষণায় দেখা গেছে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে স্থূলতা একটা বড় সমস্যা। আর কৃষ্ণাঙ্গ এবং এশিয়ানদের মধ্যে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সমস্যা খুবই বেশি।

এই সব স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে করোনাভাইরাসে মারা যাওয়ার ঝুঁকির একটা যোগাযোগের কথা প্রায় প্রথমদিক থেকেই বলা হচ্ছে। এছাড়াও সাধারণভাবে অর্থাভাব ও সুযোগবঞ্চিত জনগোষ্ঠির ওপর এই করোনাভাইরাসের ধাক্কা বেশি মাত্রায় দেখা গেছে। এমনকী আক্রান্ত শ্বেতাঙ্গ ব্রিটিশদের মধ্যেও বেশিরভাগই মারা গেছে দরিদ্র মানুষ।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী প্রায় এক তৃতীয়াংশ বাংলাদেশি পরিবারে অনেক সদস্য একসঙ্গে একই বাড়িতে থাকেন। কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকানদের মধ্যে এই হার ১৫%। সেখানে শ্বেতাঙ্গ পরিবারগুলোতে এই হার মাত্র ২%। ওএনএস বলছে এর ফলে তাদের পক্ষে আইসোলেশনে থাকার ব্যাপারটা সবক্ষেত্রে ফলদায়ক হচ্ছে না।

ঢাকা টাইমস/০৮মে/একে

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
আনিসুল হকের বান্ধবী তৌফিকা করিমের যত অবৈধ সম্পদের সন্ধান
সংবাদ প্রকাশের জেরে প্রাণনাশের হুমকি, উত্তরা প্রেসক্লাবের মানববন্ধন
পুলিশ কিলার ফোর্স হতে পারে না: আইজিপি
ব্যাটারি চালিত রিকশার ওয়ার্কশপ ও চার্জিং পয়েন্ট বন্ধ করা হবে: ডিএনসিসি প্রশাসক 
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা