ঈদ ও ইদ নিয়ে আমাদের দৌড়ঝাঁপ

আব্দুর রাজ্জাক
  প্রকাশিত : ২৯ মে ২০২০, ১৪:২৪
অ- অ+

একটি ইংরেজি শব্দের বাংলা প্রতিবর্ণীকরণ ও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। চাঁদ উঠুক আর নাই-বা উঠুক আগামীকাল অনিবার্যভাবে ঈদ। ঈদের এ প্রাক্কালে মনে পড়লো বছর কয়েক আগে ঈদের এক নতুন বানান নিয়ে চারিদিকে অনেক হৈচৈ হওয়ার কথা। আজ আবার বিচিত্র ফুল শোভিত ফেসবুকের নন্দনকাননে পথ চলতে গিয়ে কেউ একজনের এ বিষয়ে একটি লেখা চোখে পড়লো। ভাষাতাত্ত্বিকদের যতই যুক্তি থাকুক না কেন একটি শব্দ দীর্ঘদিনের ব্যবহারে সাধারণের কাছে একটি ভিজ্যুয়াল আবেদন তৈরি করে ফেলে।

তার উপর ঈদ শব্দটির মাঝে সাধারণ ব্যবহারকারীরা হয়তো তাদের ধর্মীয় অনুভূতির বিষয়টিও আবেগিকভাবে বিবেচনায় নিয়েছিলেন। কারণ ধর্ম বিষয়টি সবসময় অনড়। তাই ঈদ আর 'ইদ' হয়ে আমাদের মাঝে আসন গাড়তে পারেনি। এই যে আসন গাড়তে পারেনি তারই একটি সুবিধা আমি নিয়েছিলাম আনিসুজ্জামান স্যারের কাছ থেকে গত বছরের শেষ দিকের কোনো এক দিন। সে গল্পই তবে বলি এবার।

২০১৭ সালের নভেম্বরের শুরুতে অনেকটা আকস্মিক ও অচেষ্টিতভাবেই আরেকটি ব্যাংকে যোগদান করি আমি। নতুন কর্মস্থলে সুযোগ হয় স্বয়ং প্রধান নির্বাহীর সাথে কাজ করার। কাজ করার উৎসাহও বেড়ে গেল বেশ খানিকটা। নিজের ভাললাগার বিষয়গুলো খুঁজে নিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পূর্ণ সহযোগিতায় একটু একটু করে কাজ করতে পারার খানিকটা আত্মতুষ্টিও কাজ করে মনে মনে। প্রতিষ্ঠানটিতে যোগদানের কিছুদিনের মধ্যে সজাগ দৃষ্টি পড়লো প্রতিষ্ঠানটির ইংরেজি নামের প্রথম শব্দের বাংলা প্রতিবর্ণীকরণে।

আমার দীর্ঘদিনের চেনা শব্দটির এক ভিন্ন বানান চোখে পড়লো এখানে। প্রথমে নিজের মতো করে খুঁজতে চেষ্টা করলাম শব্দটির বিকল্প বানান রয়েছে কিনা। নিজের সংগ্রহে থাকা দুই বাংলার বেশকিছু অভিধান ও বাংলা বানানের প্রামাণ্য গ্রন্থের শরণাপন্ন হলাম। না কোথাও এরকম বানানের উল্লেখ নেই। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর কাছে সবিনয়ে বানানের প্রসঙ্গটি ব্যাখ্যা করলাম এবং বানানটিকে যেভাবে মুদ্রিত আকারে সচরাচর দেখা যায় সেভাবে প্রতিস্থাপন করা যায় কিনা সে বিষয়ে তাঁর মতামত জানানোর বিনীত অনুরোধ করলাম।

ভাষার এরকম দিকগুলো নিয়ে তিনি আমার উপর আস্থা রাখেন এ বিষয়টি বেশ বুঝতে পারতাম। এ যাত্রায়ও তিনি নিরাশ করেননি। আমার পর্যবেক্ষণের প্রতি সায় দিলেন। এদিকে আমি সমান্তরালে ব্যাবস্থাপনা পরিষদের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথেও এ নিয়ে কথা বলতে শুরু করলাম। সহকর্মীদের বেশীরভাগই আমার মতো একই মত প্রকাশ করলেন। তবে কেউ কেউ যে একে 'খই ভাজার' মতো ব্যাপার বলে গণ্য করেননি তাও নয়। বিশেষ করে কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাংলা ভাষার অবস্থান একেবারেই মার্জিনাল। পত্র যোগাযোগ ও বিজ্ঞাপনী প্রচার প্রসারে ইংরেজির-ই দৌরাত্ম।

কেবল আমাদের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লিখিত পত্রাবলীতে আবশ্যিকভাবে বাংলা তার ঠাঁইটুকু খুঁজে পায়। তাছাড়া ২৩ বছরের পুরনো একটি প্রতিষ্ঠান এ একই বানান নিয়ে এতগুলো বছর পথ চলতে তো কোনো সমস্যা হয়নি। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলার সময় এর সম্মানিত উদ্যোক্তারা যে বানানে লাইসেন্স চেয়েছিল সেভাবেই নামটির প্রথম অংশ এমন বানানে এসে দাঁড়ায়। কেউ কেউ বলেন "নামের বানানে কোন ভুল নেই"-এর মতো স্বেচ্ছাচারী কথা। কিন্তু আমি চাইছি একটি প্রতিষ্ঠানের সর্বজনগ্রাহ্য এবং সর্বত্রদৃষ্ট একটি বানানরীতি।

তো ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ যখন সানন্দে রাজি তখন একটি পর্যায়ে এ প্রস্তাবটি পেশ হলো পরিচালনা পর্ষদের এক সভায়। পর্ষদের স্মারকে আমি প্রস্তাবের পক্ষে কিছু সহায়ক দলিলও জুড়ে দিলাম। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান একজন প্রাজ্ঞব্যক্তি, একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য। তিনি বিনা বাক্য ব্যয়ে ব্যাবস্থাপনা পরিষদকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রস্তাবে সম্মত হলেন। আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগের হাতে আসে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তের কপি। এ হলো প্রাথমিক বিজয়। এরপর আরো অনেক কাজ। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন করতে হবে নতুন বানানটি ব্যবহারের অনুমতি চেয়ে।

কারণ আমাদের লাইসেন্সে বিদ্যমান বানানে সংশোধনী এনে নতুন একটি লাইসেন্স পেতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে। আমরা ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সিদ্ধান্তের অনুলিপিসহ পুরো ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে আবেদন পেশ করলাম। কিছুদিন পর বাংলাদেশ ব্যাংক তাঁদের উত্তরে জানালো যে বিদ্যমান বানানে কোনো সমস্যা হচ্ছেনা বিধায় তাঁরা আমাদের নতুন একটি বানান গ্রহণ করার প্রস্তাব নাকচ করে দিচ্ছেন। এভাবে নেমে এলো প্রথম বারের পরাজয়। এরপর আমরা ভাবলাম আমাদের বাংলা ভাষার অতন্দ্র প্রহরী বাংলা একাডেমী থেকে এ বিষয়ে আমাদের পক্ষে একটি মতামত এনে দিলে বোধ হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে নতুন বানান গ্রহণ করার অনুমতি পাওয়া সহজ হবে। বাংলা একাডেমীর মহা পরিচালক বরাবর লেখা আবেদনপত্রে আমরা জুড়ে দিলাম প্রয়োজনীয় সংযোজনীসমূহও। ইতোমধ্যে আমাদের পরিচিত এবং বাংলা একাডেমীতে কর্মরত নিসর্গবিদ মোকারম হোসেন ভাইয়ের সহযোগিতা নিয়ে আবেদনপত্রসহ আমরা দেখা করলাম স্বয়ং মহা পরিচালকের সাথে।

তিনি কিছুদিন পূর্বে মাত্র এ পদে আসীন হয়েছেন। অনেক দর্শনার্থীর ভীড় তাঁকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর জন্য। এরই মধ্যে আমরা সামান্য কিছু সময় নিয়ে আমাদের আর্জিসহ আবেদনপত্রটি রেখে আসলাম। বের হওয়ার আগে তাঁর দপ্তর থেকে জেনে আসলাম এ বিষয়ে মতামত যারা দিবেন তাঁদের দপ্তরের নাম। এরপর অপেক্ষার পালা। মাঝে মাঝে খবর নিই তাঁদের মতামত তৈরী হয়েছে কিনা। একদিন জানলাম মতামত তৈরি এবং আমরা চাইলে হাতে হাতে পত্রটি নিয়ে আসতে পারি। মতিঝিল থেকে বাংলা একাডেমী খুব দূরে নয়, তাই আমি নিজেই চললাম মতামতটি হাতে হাতে নিয়ে আসার জন্য।

আমাদের সবারই ধারণা ছিল সর্বত্রদৃষ্ট এবং আমাদের প্রস্তাবিত বানানোর ব্যাপারেই মতামত দিবেন বিজ্ঞজনরা। এ ভাবনা নিয়ে মতামতটি হাতে পাওয়ারই অপেক্ষায় ছিলাম মাত্র। এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার সংশ্লিষ্ট বিভাগ হলো বাংলা একাডেমীর অনুবাদ বিভাগ। বিভাগের দায়িত্বে আছেন জনাব ডঃ মিজানুর রহমান। সফেদ দাঁড়ি এবং সদা হাস্যময় চাকুরী জীবনের প্রায় শেষ প্রান্তে উপনীত হওয়া ভদ্রলোক কাজ করেন বয়সে তরুণ কিন্তু বিদ্যা বুদ্ধিতে চৌকস একদল সহকর্মী নিয়ে। আমি অনুবাদ বিভাগে পৌঁছে উনার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই উনি আমাকে সাদরে গ্রহণ করে বসতে বললেন।

মতামতের পত্রখানা খামভর্তি করে আমার হাতে দেয়ার আগে মতামতের বিষয়ে উনারা কি করেছেন সে বিষয়ে একটু বলতে শুরু করলেন। উনাদের মতামত জানতে পেরে আমি একেবারে চুপসে গেলাম। যে অপ্রচলিত বানান থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এতো আয়োজন তা থেকে মুক্তি মেলার আর কোনো সম্ভাবনা থাকলনা। তাঁদের মতামতে এসেছে অদৃষ্টপূর্ব এক নতুন বানান। আর এ বানান বিষয়ে তাঁরা বাংলা একাডেমীর বিদেশি শব্দের বাংলা বানান বিষয়ে প্রচলিত নিয়মাবলী, শব্দটির শ্রুতি, আইপিএ (IPA, International Phonetic Alphabet) সিম্বলসহ সবকটি উৎসের সহযোগিতা নিয়েছেন। আর এ কাজটির পুরোভাগে ছিলেন ইজফানদোর আয়রন ভাই, উক্ত বিভাগের সহকারী পরিচালক।

মিজানুর রহমান স্যার তাঁর সাথে আমার পরিচয় করে দিয়েছিলেন ইতোমধ্যে। পরিচয় হওয়ার পর জানলাম তিনি অনেকগুলো ভাষা জানেন। ঐ মুহুর্তে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর লেখা একটা বই আরবীতে অনুবাদ করছেন। তাঁর প্রতি আমার বেশ সমীহ জাগলো। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ভাষা ও সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম বলে তাঁদের সব যুক্তিই আমি খুব সহজে বুঝতে পারলাম। কিন্তু ব্যাবহারিক প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে মন খারাপ হয়ে থাকলো। তাঁরাও আমাদের ব্যবহারিক বিষয়টি সম্যক বুঝতে পারছেন এবং সাথে এও বলছেন যে তাঁদের দাপ্তরিকভাবে মতামত দিতে হলে এ নিয়মের বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।

তদুপরি ভাষা, শব্দ ও বানানের সঠিক রূপ প্রচলনের জন্য আমাদেরই দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসার কথা বললেন। কিন্তু একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সে সুযোগ কতটুকু রয়েছে সে ভাবনাটা আমার মনেই থেকে গেল। প্রকাশ করলামনা বিজ্ঞজন সম্মুখে। প্রসঙ্গক্রমে আমিও তাঁর মতো ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ছিলাম জানতে পেরে আমার প্রতি মিজান স্যার আরও সুপ্রসন্ন হলেন এবং তিনি সময়ে পেলেই এদিকটায় চলে আসতে বললেন। মতামতের পত্রখানি হাতে নিয়ে অফিসে চলে এলাম বিরস বদনে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আশাভঙ্গের কথাটি জানালাম। বাংলা একাডেমীর মতামত আর ব্যাবহার করতে পারলামনা বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রভাবিত করার জন্য। এরপর চলে গেল বেশ কিছু দিন।

ইতোমধ্যে আমার সুযোগ হয় কলকাতার দুই ভাষাবিজ্ঞানীর মুখোমুখি বসে তাঁদের গল্প শোনার। ভাষা বিজ্ঞানী দু'জন হলেন শ্রদ্ধেয় রাকিব চক্রবর্তী এবং উদয় নারায়ণ সিং। আর এ সুযোগটি এসেছিল আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শিক্ষক শ্রদ্ধেয় জি এইচ হাবীব স্যারের কল্যাণে। তাঁদের গল্পের এক ফাঁকে উদয়নারায়ণ সিংহ স্যারের কাছেও বানানটির ব্যাপারে তাঁর মতামত চেয়েছি। তাঁর মতামতও আমাদের মতকেই সমর্থন জানিয়েছে।

বাংলা একাডেমীর এরকম একটি মতামত দেয়ার বিষয়টি মন থেকে আমার সরাতে পারছিনা কিছুতেই। আবার নতুন করে ভাবতে শুরু করলাম। প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সাথে পরামর্শ করে এবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম বাংলাদেশ ব্যাংকে আবারও বিষয়টি পুর্নবিবেচনার জন্য আবেদন করার ব্যাপারে।

আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে সশরীরে আবেদন পত্র নিয়ে হাজির হলাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ বিষয়টিকে একেবারেই গুরুত্বহীন এবং সময় ও অর্থের অপচয় বলে গণ্য করতে চাইলো। কিম্তু আমরা সদয় বিবেচনার জন্য আবারও অনুরোধ করলাম। তাছাড়া এবার তাঁদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার জন্য তাঁদেরকে নির্দেশ দিলেন। এরপর আমাদের কি করতে হবে তাঁরা তা জানিয়ে দিবেন বলার পর আমরা চলে এলাম আমাদের কর্মস্থলে। এক সময় জানালেনও তা। বাংলা একাডেমীর মতামত আনতে হবে। আবারও তাঁরা নিশ্চয় একই মতামত দিবেন। কি করা যায় এ ব্যাপারে- মিজান স্যারের কাছে পরামর্শ চাইলাম।

তিনি জানালেন আনিসুজ্জামান স্যার বাংলা একাডেমীর সভাপতি, তিনি যদি তাঁদের ইতোমধ্যে দেওয়া মতামতের সাথে ব্যবহারিক প্রয়োজনের দিক বিবেচনায় নিয়ে আমরা প্রচলিত যে বানানটি চাইছি সেটা গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মতামত দেন তবেই কেবল তাঁরা ঐভাবে মতামত দিতে পারেন। আমাদের একজন উপ-ব্যাস্থাপনা পরিচালক লেখালেখি করেন আর সে কারণে তাঁর সাথে আনিসুজ্জামান স্যারের জানাশোনা আছে। একদিন স্যারের সাথে পূর্বনির্ধারিত সময় ও স্থান অনুযায়ী দেখা করতে গেলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে তাঁর কক্ষে। আমরা তিন জন- তৃতীয় জন আমাদের পূর্বতন সহকর্মী ও স্যারের প্রাক্তন ছাত্রী, শেলি সেলিনা আলম। সহকর্মীটি খুব বেশদিন হয়নি অন্য ব্যাংকে যোগ দিয়েছেন। উনি যতদিন আমাদের ব্যাংকে ছিলেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের হয়ে এ ব্যাপারে কাজ করেছেন, সবকিছু অবগত আছেন।

আর ছাত্রীর অনুরোধ স্যার নিশ্চয় বিবেচনা করবেন- এ ছিল আমার আশা। আলাচারিতার প্রাথমিক পর্যায় শেষে আমরা পাড়লাম আমাদের কাজের কথা। কিন্তু স্যারের মনোভাবও পেলাম বাংলা একাডেমীর সংশ্লিষ্ট বিভাগের মতো। ভাষার ক্ষেত্রে কোনো আপোষ নয়। নতুন ও সঠিক কিছু আমাদেরই শুরু করতে হবে। আমাদের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাঁর লেখা একটি বই স্যারকে উপহার দিলেন। স্যারের প্রাক্তন ছাত্রী ও আমাদের প্রাক্তন সহকর্মীসহ আমরা ফটোসেশনে অংশ নিলাম। দাঁড়িয়ে আছি আমরা। বেরিয়ে আসবো শীঘ্রই। আমি আবারও আমার যুক্তি উপস্থাপনের শেষ সুযোগটি নিলাম। বাংলা একাডেমীর 'ঈদ' বানানটি যে বহুল প্রচলনের কারণে 'ইদ' হিসেবে সাধারণ্যে গৃহীত হয়নি সে ব্যাপারটি স্যারকে বিনীতভাবে স্মরণ করিয়ে দিলাম। আর একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন কিছু শুরু করাও কতটুকু বাস্তবসম্মত আমাদের জন্য তাও জানালাম স্যারকে।

ব্যর্থ হবে আমাদের চেষ্টা। কখনো যদি সবাই বাংলা একাডেমীর প্রস্তাববিত বানানটি গ্রহণ করে তবে আমাদের প্রতিষ্ঠানও সেদিন সেটি সাদরে গ্রহণ করবে। এ মুহুর্তে আমরা যদি বাংলা একাডেমী প্রস্তাবিত নতুন বানানটি গ্রহণ করি তবে সবাই ভাববে আমরা এক ভুল থেকে আরেক ভুলে পদার্পণ করেছি। নতুন বানান আমাদের সব রকম যোগাযোগে নতুন করে ব্যাবহারের ক্ষেত্রে কিছু ব্যয় তো রয়েছেই। তাই আমাদের এই ব্যয় বহন করার ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত বানানটি ব্যবহার করাই হবে বাস্তব সম্মত। আর একটি চলমান ভাষার ব্যবহারিক দিকটাও নিশ্চয় অস্বীকার করা যায়না। স্যার খানিকক্ষণ চিন্তা করে ফোন করলেন বাংলা একাডেমীতে।

মিজান স্যারকে বললেন আমাদের পত্রের মতামত দেয়ার সময় তিনি যেন স্যারের সাথে কথা বলেন। আমাদেরকেও খানিকটা আশ্বস্ত করলেন। আমরা খুশি মনে যার যার বাসায় চলে এলাম। কিছুদিন পর বাংলা একাডেমীর মতামত এলো। তাঁদের পূর্বের মতামতা বহাল রেখে নতুন করে যোগ করেছেন যে ব্যবহারিক প্রয়োজনের কথা মাথায় রেখে বর্তমানের বহুল প্রচলিত রূপটিও গ্রহণ করা যেতে পারে।

তৎপরবর্তীতে এ মতামতের কপি আমরা বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠাই। তাঁরা নতুন নামে লাইসেন্স ইস্যু করা নিয়ে তাঁদের দাপ্তরিক কাজ করছেন এখনও। আমরা অপেক্ষা করছি। শেষে এসে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি এ তুচ্ছ কারণে শিরোনামে স্যারের নামটি ব্যাবহার করার জন্য। স্যারের নামটি ব্যাবহার করেছি কেবল এ হাবিজাবি কথাগুলো পড়তে আপনাদেরকে আগ্রহী করে তোলার জন্য।

লেখক: লেখক ও ব্যাংক কর্মকর্তা

ঢাকাটাইমস/২৯মে/এসকেএস

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
পুলিশের জলকামান ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের ওপর
ইউনিয়ন বিএনপির শীর্ষ পদে বিদেশফেরত ব্যক্তিরা, দলের নেতাদের মধ্যে ক্ষোভ
দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ: টঙ্গীর তিন বিএনপি নেতাসহ ৪ জন বহিষ্কার
পশ্চিমবঙ্গের একই এলাকা থেকে নিখোঁজ ৫০০ বিবাহিত তরুণী!
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা