শিল্প সাহিত্য গরীব লোকের কাজ না

মমিনুল ইসলাম
 | প্রকাশিত : ২২ জুলাই ২০২০, ১৯:৪৮

স্যার, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ,আপনার সাথে একটু কথা বলতে চাই। হুমায়ূন আহমেদ দাঁড়ালেন। বেশ কৌতুহল নিয়ে তাকালেন। বল –কী বলবে? স্যার একটি উপন্যাস লিখেছি,আপনাকে দেখাতে চাই।

দেখি, তিনি আমার পান্ডুলিপি উল্টে পাল্টে দেখলেন । এক পৃষ্ঠা পড়লেন। খুব মনযোগী পাঠকের মতো করে বললেন, বাহ! ভাল লিখেছো তো!

আমি তখন সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র । হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক । তিনি আমার উপন্যাস প্রকাশের বিষয়ে সাহায্য করলেন। আমার প্রথম উপন্যাসের নাম ‘নেপথ্যে দুষ্টগ্রহ’। প্রকাশিত উপন্যাস নিয়ে হুমায়ূন স্যারের কাছে গেলাম। তিনি পাঁচশ টাকা দিয়ে আমার এক কপি বই কিনলেন। আমি জল ছলছলে চোখে তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।

মাস্টার্স পরীক্ষার পরে স্যারের সাথে দেখা করলাম। তখন স্যার চাকরি ছেড়ে দিয়ে নুহাশ চলচ্চিত্র নিয়ে ব্যস্ত। বললাম, স্যার আপনার সাথে কাজ করতে চাই। কাজ করবে? কাজের কী জান? কিছুই জানি না। তাহলে থাকো।

আমি স্যারের এসিস্টেন্ট হিসেবে নুহাশ চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করলাম। তারপর অনেক বছর। অনেক দিন অনেক রাত। জীবনে যত শিক্ষা পেয়েছি ,যত আনন্দ পেয়েছি , তার অর্ধেকের বেশিই হুমায়ূন আহমেদের সাহচর্যে। এমন বড় মনের -বিশাল হৃদয়ের মানুষ বাঙালিদের মধ্যে খুব কম জন্মেছেন।

প্রথম পরিচয়েই তিনি কিছু উপদেশ দিয়েছিলেন। নিজের সব কাজকেই বাণিজ্যিকমূল্যসম্পন্ন করার চেষ্টা করবে। সৎপথে ধনী হওয়ার চেষ্টা করবে। শিল্প সাহিত্য গরীব লোকের কাজ না। দুস্থ হয়ে মরার চিন্তা করো না। শিল্প সাহিত্য তারাই করবে যারা ধনের দিক দিয়ে-মনের দিক দিয়ে-রাজা বাদশা।

হুমায়ূন আহমেদ বলতে গেলে চব্বিশ ঘন্টাই কাজ করতেন। কখনো কখনো দু তিন রাত পর্যন্ত অনেকটা নির্ঘুম কাজ করে চলতেন । তাঁর কাছে শিখেছি , কিভাবে অলসতাকে ঝেড়ে ফেলে নিজেকে এনার্জেটিক করে নিতে হয়। অনেক কাজ একসাথে করারও শিক্ষা তাঁর কাছে পেয়েছি।

নুহাশপল্লী গড়ে তোলার জন্য প্রথম জমি কেনা এবং ধীরে ধীরে নুহাশ পল্লী গড়ে তোলার কাজে প্রথম থেকেই আমি ছিলাম। যে লিচু গাছটির নিচে এখন হুমায়ূন স্যারের কবর সে গাছের নিচেই ছিল আমাদের সারাবেলার আড্ডা। আল্লাহ হুমায়ূন স্যারের আত্মাকে ক্ষমা করে দিন।

হুমায়ূন আহমেদ স্ট্রেইটকাট স্বভাবের লোক ছিলেন। সত্য কথা কিভাবে সোজাসুজি বলতে হয়-চরিত্র থেকে ভন্ডামিকে কীভাবে ঝেড়ে ফেলতে হয় আর নিজেকে কীভাবে অক্লান্ত ধৈর্যশীল করে তোলা যায় এটা হুমায়ূন স্যারের কাছে শিখছি।

১৯ জুলাই হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুদিন ছিল। কিন্তু আমি তাঁর মৃত্যুদিনকে স্মরণ করতে চাই না। হুমায়ূন আহমেদ নেই এটা ভাবতে আমার ভাল লাগে না ।

এক স্ট্যাটাসে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে কিছুই বলা সম্ভব না। হুমায়ূন- হাসান সম্পর্কে যাদের জানার আগ্রহ আছে। আমার লেখা একটি বই, নাম ‘হুমায়ূন আহমেদ হাসান আজিজুল হক এবং অন্যরা’। প্রকাশ করেছে ‘অন্য প্রকাশ’ পড়ে নিতে পারেন।

লেখক, শিক্ষক ও নাট্য পরিচালক

ঢাকাটাইমস/২২জুলাই/এসকেএস

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :