নাসির এই জনমে আর কত কষ্ট বাকি তোমার?

রুহুল আমিন
| আপডেট : ০২ মার্চ ২০২৪, ১১:৫৮ | প্রকাশিত : ০২ মার্চ ২০২৪, ১১:৪৫

প্রায় বছর ছয়েক আগের কথা।

নাসির পাথরের মতো মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। বিএসএমএমইউ (পিজি) হাসপাতালের ডি ব্লক এর সামনে একটা ফ্রিজার ভ্যানে ওর স্ত্রীর মরদেহ রাখা।

বিয়ের আগে ওরা মামাতো ফুপাতো ভাই-বোন ছিল।

নাসিরের জিম্মায় ছোট্ট দু'টি মেয়ে রেখে ভাবী একা চলে গেলেন। একটু পরে তখনকার আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারি স্যার এলেন। এরপর দাফনের জন্যে নারায়ণগঞ্জে নিয়ে গেলো।

২২ তম বিসিএস ব্যাচের অফিসার অতিরিক্ত ডিআইজি নাসির পদার্থবিদ্যা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছে। আমার পাশের ফজলুল হক হলে থাকতো। এখনো আমরা একই কম্পাউন্ডে থাকি এবং একই অফিসে কাজ করি। কয়েক বছর আগের কথা। তখন বেনজির আহমেদ স্যার RAB এর মহাপরিচালক। পুলিশ সদরদপ্তরে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে নাসিরের একটা প্রেজেন্টেশন দেখে প্রকাশ্যে বলে ফেললেন, ইউ আর সো ইন্টেলিজেন্ট। কিন্তু আমি তোমাকে চিনি না কেন?

এরপর বেনজির স্যার আইজিপি হয়ে পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া সংস্কারে হাত দিলেন। এআইজি রিক্রুটমেন্ট হিসেবে মেধাবী নাসির একটা অসাধারণ নিয়োগ কাঠামো তৈরি করে দেয় যেখানে চাইলেও দূর্নীতি কিংবা পক্ষপাতিত্ব করা প্রায় অসম্ভব। বর্তমানে সেই কাঠামোতেই নিয়োগ চলছে।

দু'টো মেয়ে নিয়ে নাসিরের একার সংসার। একদিন শুধু বলেছিলাম, আর বিয়েশাদি করলে না? একটু হেসে মাথা নেড়ে ও বললো, না, স্যার।

ওর মেয়েরা খুবই মেধাবী। বড় মেয়ে সম্ভবত ভিকারুননিসা নূন স্কুলে ফার্স্ট গার্ল ছিল। কলেজ শেষ করে সে বুয়েটে ভর্তি হয়েছিল।

নাসিরের জীবনে ছয় বছর আগের সেই রাত আবার ফিরে এলো। গতরাতে আগুন লাগার সময় বেইলি রোডের সেই রেস্তোরাঁয় ওর বুয়েট পড়ুয়া মেয়েটা ছিল। সে আর ফেরেনি, চলে গেছে জীবনের ওপারে।

বছর ছয়েক আগে বউ মরে যাওয়ার রাতে নাসিরের সেই চেহারার কথা স্পষ্ট মনে আছে আমার। এবার অবশ্য ওর সাথে দেখা হয়নি। মেয়ের মরদেহ নিয়ে ফরিদপুরের পথে আছে সে।

ওকে ফোন দিতে মন চাইছে না। তাই হোয়াটসঅ্যাপ এ শুধু নীচের মেসেজটা দিয়েছিঃ

"নাসির, আমার অন্তরটা ছিড়ে যাচ্ছে। বাসায় বসে এখন কাঁদছি। এক জনমে আর কত কষ্ট বাকি তোমার?"

লেখক: পুলিশ কর্মকর্তা

সংবাদটি শেয়ার করুন

ফেসবুক কর্নার বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

শিরোনাম :