‘বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রতি জিয়ার পুরো সমর্থন ছিল’

প্রায় চার মাস আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বরখাস্তকৃত ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ ফাঁসি কার্যকরের আগে এক ভিডিও বিবৃতিতে জানিয়েছেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট সেনা অভ্যুত্থানের ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতি সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের পূর্ণ সমর্থন ছিল।
ফাঁসির দণ্ড কার্যকরের অপেক্ষায় জেলখানায় থাকা মাজেদ এই ভিডিও বিবৃতিতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকারীদের সঙ্গে জিয়ার জড়িত থাকা প্রসঙ্গে জানান, ‘তিনি তাদের (হত্যাকারীদের) পুরোপুরি সমর্থন করেছিলেন। তাদের প্রতি তার প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ছিল।’
৪৫ বছর দেশের বাইরে পলাতক থাকার পর গত ৬ এপ্রিল গভীর রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকা থেকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন এই মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুল মাজেদ। কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ১২ এপ্রিল ১২টা এক মিনিটে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
গতকাল ১৫ আগস্ট গণমাধ্যমে প্রচারিত বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘জিয়া বঙ্গভবনে ঘাতকদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করতেন এবং হত্যাকারীরাও রাষ্ট্রপতি ভবনে সরাসরি তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন।’ ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ডের পর মাজেদ তার সহকর্মী অভ্যুত্থান নেতাদের সঙ্গে সেখানে অবস্থান করেন।
মাজেদ জিয়ার প্রতি স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত করে বলেন যে, ‘তিনি আগে থেকেই অভ্যুত্থান নেতাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।’
মাজেদ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সকালের ঘটনা স্মরণ করে জানান, ‘জিয়াউর রহমান সাহেব ১০-১১টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট অডিটরিয়ামে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের জোয়ান এবং অফিসারদের অ্যাড্রেস করেন। ওইখানে উনি (জিয়াউর রহমান) মোটিভেট করেন যে, এখন যে ঘটনা গত রাতে ঘটে গেছে তোমরা সে সমস্ত নিয়ে কোনো রকম মাথা ঘামাবে না। তোমরা সব চেইন অব কমান্ড এ ফিরে যাও। সবাই কাজকর্ম করো। এটা জাতির ব্যাপার এটা আমাদের ব্যাপার না।’
মাজেদ জানান, ‘উনি (জিয়াউর রহমান) বঙ্গভবনে খুনিদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করতেন এবং খুনিরাও তাকে ওইখান থেকে যোগাযোগ করতেন ডাইরেক্ট এবং আর্মির চেইন অব কমান্ড বলতে কিছু ছিল না। ওরাই চালাতো প্র্যাকটিক্যালি।’
জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার একটি সাক্ষাৎকারের স্মৃতিচারণ করে মাজেদ জানান, তখন উনার (জিয়াউর রহমান) সাথে যে আলোচনা হয়েছে তখন দেখা গেছে যে, তিনি (জিয়াউর রহমান) প্র্যাকটিক্যালি যে এই ক্যুর পক্ষপাতসুলভ কথাবার্তা বলছেন। ওদের পক্ষ হয়ে কথা বলছেন। এটা করেছেন কিন্তু উনার (জিয়াউর রহমান) কথাবার্তায় দেখা গেছে যে উনি (জিয়াউর রহমান) ক্যুর সমর্থক ওদের সাথেই উনার (জিয়াউর রহমান) সবকিছু যোগাযোগ।’
মাজেদ বলেন, ‘তিনি (জিয়াউর রহমান) তাদেরকে লিবিয়াতে আশ্রয়ের বন্দোবস্ত করেছেন। পরে আমরা সেখানে শুনলাম জেলখানায়ও তারা চারজন জাতীয় নেতাকে মেরে গেছে। এই রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ঐখানে ঘোষণা করতেছে, বলতেছে তার সাথে দুইটা সিপাইও ছিল।’
খুনিদের সবাইকে পুরস্কার হিসেবে একটা করে প্রমোশনসহ ফরেন সার্ভিসে যোগদানের ব্যবস্থা করতে জেনারেল জিয়া তার প্রতিনিধি জেনারেল নুরুল ইসলাম (শিশু)-কে লিবিয়ায় পাঠান উল্লেখ করে মাজেদ জানান, তাদের প্রতি জিয়াউর রহমানের সরাসরি মদদ ছিল।
মাজেদের মতে, জিয়া, ফরেইন সার্ভিসের জন্য এই অফিসাররা কোয়ালিফাইড না হওয়া সত্ত্বেও যাদের অধিকাংশ শর্ট সার্ভিস কমিশনড অফিসার। এমনকি তারা গ্র্যাজুয়েটও ছিল না। তাদেরকে ফরেইন সার্ভিস হিসেবে প্রাইজ পোস্টিং দিয়েছে। এতেই তো বোঝা যায় জিয়াউর রহমান পুরো ওদের সঙ্গে জড়িত ছিল।
(ঢাকাটাইমস/১৬আগস্ট/জেবি)

মন্তব্য করুন