৫০ গজ দূরে এসটিএস, তবুও আবর্জনার ভাগাড় বেড়িবাঁধ

কাজী রফিক, ঢাকাটাইমস
  প্রকাশিত : ২৬ অক্টোবর ২০২০, ১০:৪৬| আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২০, ১০:৫৫
অ- অ+

দৈনন্দিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য সড়কের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস)। অথচ এই এসটিএস থেকে মাত্র ৫০ ফুট দূরেই আবর্জনার স্তুপ। সড়কের পাশের খোলা জায়গাটি যেন ময়লা-আবর্জনার ভাগাড়।

রাজধানীর হাজারীবাগের বউবাজার এলাকার বেড়িবাঁধে এই চিত্র দেখা গেছে।জায়গাটি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মতে, ‘বেড়িবাঁধ ময়লার স্টেশন’-এ পরিণত হয়েছে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসটিএসটি বছর দুই আগে গড়ে তোলা হয়েছে। এর আগে স্থানীয়রা খোলা জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলতেন। দীর্ঘ সময় ধরে একই জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে জায়গাটি একটি বিশাল আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে। যা এখন রাস্তার পাশ থেকে মূল বেড়িবাঁধ সড়ক পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। ফলে প্রায়ই এই ময়লা সড়কে যান চলাচলে সমস্যার সৃষ্টি করে।

বেড়িবাঁধ সড়কে নিয়মিত চলাচলকারী সজীব সরকার ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘বাইক নিয়ে যেতে ভয় লাগে। পলিথিন, ময়লা বৃষ্টিতে ধুয়ে রাস্তার মধ্যে চলে আসে। মাঝেমধ্যেই চাকা স্লিপ করে। একবার আমার স্ত্রীকে নিয়ে এই ময়লার কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি।’

শুধু সজীব নয়, স্থানীয় এবং বেড়িবাঁধ সড়কে চলাচলকারী অনেকেই এমন দুর্ঘটনার শিকার হন বলে জানালেন স্থানীয় রিকশাচালক মো. হাসান।

হাসান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘ময়লার বস্তাও অনেক সময় রাস্তায় উপরে আইসা থাকে। বৃষ্টি হইলে তো রাস্তার অর্ধেকটায় ময়লা থাকে। ময়লার কারণে রাস্তা পিছলা (পিচ্ছিল) হইয়া যায়। কত লোক একসিডিন (দুর্ঘটনা) করে!’

রবিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, দুই ব্যক্তি একটি ভ্যানগাড়িতে চার বস্তা আবর্জনা নিয়ে এসেছেন। বেড়িবাঁধ সড়কের উপর ভ্যানটি দাড় করিয়ে আবর্জনার বস্তা ফেলছেন রাস্তার পাশের খোলা জায়গায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাদের একজন বলেন, ‘সবাই তো ফালায়, আমরা ফালাইলে দোষ কী!’

অপর ব্যক্তি বলেন, ‘অনেক আগে থাইকাই এখানে ময়লা ফালাই। অভ্যাস হইয়া গেছে। কেউ মানা করে নাই কহনো। আপনি মানা করছেন আর ফালামু না।’

মাত্র ৫০ গজ দূরে এসটিএস থাকতে এখানে ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই জায়গায় (এসটিএস) ফেলতে গেলে টাকা লাগে। এই জায়গায় তো আর টাকা লাগে না। তাই সবাই এই জায়গায় ফালায়।’

আবর্জনার স্তুপটিতে ভাঙারি কুড়ান সোহরাব। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘এই জায়গাটা (যেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে) গর্ত আছিলো। এই ময়লা ফালাইয়াই ভরাট করছে। আশেপাশের সবাই আইসা এই জায়গায় ময়লা ফালাইয়া যায়। গাড়িতে দিতে চায় না। গাড়িতে ময়লা দিলে তো টাকা দেয়া লাগবো।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান ঢাকা টাইমসকে জানান, পুরো ওয়ার্ড থেকে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে আবর্জনা সংগ্রহের ব্যবস্থা রয়েছে।তবুও অনেক মানুষ এসে সড়কের পাশে ফেলে যাচ্ছে।

কাউন্সিলর বলেন, ‘এ সমস্যা নিয়ে আমি দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করে যাচ্ছি। রাতের অন্ধকারে অনেকে এসে ময়লা ফেলে যায়। তাদেরকে তো আমি ধরতে পারছি না।’

বর্জ্য অপসারণের দায়িত্বে থাকা কর্মীরা তার কথা শোনে না বলে জানিয়েছেন ইলিয়াসুর রহমান। বলেন, ‘তিন-চার বছর ধরে আবর্জনার স্তুপ হয়ে আছে। মাঝেমাঝে আমি যখন চাপ সৃষ্টি করি, তখন সিটি করপোরেশনের লোকেরা দুই-এক গাড়ি ময়লা নেয়। পরে আর নেয় না।’

এই ময়লা কারা ফেলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলাকায় যারা ভ্যানগাড়িতে করে ডাব বিক্রি করে, সবজি বিক্রি করে তারা এসে ময়লা ফেলে যায়। আমার পাশপাশের ওয়ার্ডে ময়লার এসটিএস নাই। তারাও এসে এখানে ময়লা ফেলে। এখন বেড়িবাঁধ হয়ে গেছে ময়লার স্টেশন।’

সমস্যা সমাধানে ময়লার ফেলার জায়গায় একটি পানির পাম্প করার কথা জানান এই জনপ্রতিনিধি। বলেন, ‘আমি সিটি করপোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। আমি তাকে জায়গাটা পরিষ্কার করে দেবার কথা বলেছি। জায়গাটা পরিষ্কার করে দিলে আমি সেখানে একটা পানির পাম্প বসাবো।’

শুধু বউবাজার নয়। বেড়িবাঁধ সড়কের শিকদার মেডিকেল এলাকা থেকে শুরু করে হাজারীবাগ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে খণ্ড খণ্ড ময়লার স্তুপ রয়েছে।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর ইলিয়াসুর রহমান বলেন, ‘যে এসটিএস আছে, তার থেকে ৭০ থেকে ৮০ গজ দূরে আরও একটি এসটিএস করার পরিকল্পনা চলছে।’

বেড়িবাঁধ সড়কের যেটুকু জায়গা তার ওয়ার্ডে পড়েছে, সে জায়গাটি পরিষ্কার করে সীমানা বেঁধে দিতে চান তিনি। বলেন, ‘আমি বেড়িবাঁধ পাড়টা পরিষ্কার করে, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে খুঁটি দিয়ে সীমানা বেঁধে দেব। যেন কেউ ময়লা ফেলতে না পারে।’

(ঢাকাটাইমস/২৬অক্টোবর/কারই/কেআর/জেবি)

google news ঢাকা টাইমস অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি ফলো করুন

মন্তব্য করুন

শীর্ষ খবর সর্বশেষ জনপ্রিয়
সব খবর
টয়োটার ব্যবসা হারাচ্ছে নাভানা?
সারজিস বনাম নওশাদ: ভোটে কার পাল্লা ভারি?
মনোহরদীতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে ছাত্রদল নেতা গণধোলাইয়ের শিকার
গণভবন জয় করেছি, এবার জাতীয় সংসদও জয় করব: নাহিদ
বিশেষ প্রতিবেদন তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা