বন্ধ্যত্ব সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন যেভাবে

স্বাস্থ্য ডেস্ক, ঢাকাটাইমস
| আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২০, ১১:৫৫ | প্রকাশিত : ২৯ অক্টোবর ২০২০, ১১:৪৮

বন্ধ্যত্ব সমস্যা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে| স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বাড়ছে মনসিক ক্লান্তি‚ পরিবর্তন আসছে শরীরে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বন্ধ্যত্ব| সন্তান লাভের আশায় কোনো দম্পতি কোনো প্রকার গর্ভনিরোধক উপায় অবলম্বন না করে এক বছর স্বাভাবিক দাম্পত্য জীবন যাপনের পরও যখন স্ত্রীর গর্ভসঞ্চার না হয় তখন তাকে বন্ধ্যত্ব বলা হয়। সন্তান স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যকার এক মজবুত সেতুবন্ধন, দাম্পত্য জীবন তাতে পূর্ণতা পায়। দেখা গেছে যে ৬ মাস একাধারে সহবাসের পর শতকরা ৫০ ভাগ ক্ষেত্রে এবং এক বছর পর শতকরা ৯০ ভাগ মহিলা গর্ভধারণ করে থাকে।

সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হলে কিছু কিছু মানুষ নিজের পৌরুষ সম্পর্কে নিজেই সন্দিহান হয়ে অবসাদে ভোগেন। বাবা না হতে পারা আর পুরুষত্বহীনতা এক নয়। সন্তান উৎপাদনের জন্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে সুস্থ স্বাভাবিক ও গতিশীল শুক্রাণুর প্রয়োজন। শুক্রাণুর অভাবেই সন্তান হতে অসুবিধা হয়।

পুরুষত্বহীনতা হল স্বামী-স্ত্রীর যৌন সম্পর্ক স্থাপনে অক্ষমতা। এর ডাক্তারি নাম সেক্সুয়াল ডিজফাংশন। বাচ্চা ছেলেরা যখন যৌবনে পৌঁছায় তখন থেকেই টেস্টিস বা শুক্রথলি থেকে অবিরত শুক্রাণু তৈরি হতে শুরু করে।

প্রতিদিনই প্রায় ১২ কোটির বেশি শুক্রাণু তৈরি হয়। কোষের নিউক্লিয়াসের মধ্যে আছে ২৩টি ক্রোমোজোম। যার মধ্যে একটি হল সেক্স ক্রোমোজোম। এটিই স্থির করে দেয় সে ছেলে হবে নাকি মেয়ে হবে । শুক্রাণুর মধ্যাঞ্চলে শরীরের মধ্যে আছে মাইটোকনড্রিয়া,এটি হল সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস। আর এর লেজ শুক্রাণুকে সাঁতার কেটে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। শুক্রাণুর সমস্যা হলে চিকিৎসা শুরুর পর তা কার্যকর হতে প্রায় তিন মাস সময় লাগে।

পুরুষের বন্ধ্যত্বে অ্যাজোস্পার্মিয়া, অলিগোস্পার্মিয়া, অ্যাস্থেনোস্পার্মিয়া, টেরাটোস্পার্মিয়া বা স্পার্মের ইনফেকশন এই সবই চিকিৎসার সাহায্যে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হয়। এছাড়া ইরেকটাইল ডিজফাংশন বা ইজাকুলেশনের সমস্যা থাকলে তার চিকিৎসাও ইনফার্টিলিটি ফিজিশিয়ানরা করেন। প্রথমেই রোগের কারণ জানার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে তারপরই চিকিৎসা শুরু করা হয়।

শুক্রাণুর সংক্রমণ হলে তার নড়াচড়ার ক্ষমতা লোপ পায়। ফলে বন্ধ্যাত্ব অবধারিত। ওষুধের সাহায্যে শুক্রাণুর সংক্রমণ সারানো যায়। কিছু ক্ষেত্রে শুক্রাণুর কাউন্টও বাড়ানো সম্ভব হয়। তবে শুক্রথলি বা টেস্টিসের কার্যকারিতা সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেলে তার চিকিৎসা করা মুশকিল। ন্যূনতম ২ কোটি শুক্রাণু না থাকলে সন্তান উৎপাদনে সমস্যা হতে পারে।

পুরুষের ক্ষেত্রে বন্ধ্যত্বের কারণ

পুরুষের বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণ বীর্যে উপযুক্ত পরিমাণে গতিশীল শুক্রাণুর (স্পার্ম) অভাব। পুরুষের ক্ষেত্রে বন্ধ্যত্বের আর একটি অন্যতম কারণ হলো ইনফেকশন। মাসপস, ইনফ্লুয়েঞ্জা, গনোরিয়া, যক্ষ্মা ইত্যাদি পুরুষের বন্ধ্যত্বের কারণ হতে পারে। এছাড়া অতিরিক্ত গরম পরিবেশে কাজ করা, গরম পানিতে গোসল করা অথবা নাইলনের তৈরি অন্তর্বাসের ব্যবহার শুক্রাণু তৈরির প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে, কারণ শুক্রাণু তৈরির উপযুক্ত তাপমাত্রা এতে বজায় থাকে না। অতিরিক্ত ধূমপান, অ্যালকোহল সেবন, মাদকদ্রব্য যেমন-কোকেইন সেবন, কোনো কোনো ব্লাড প্রেসারের ওষুধ যেমন নিফিডিপিন শুক্রাণুর ডিম্বাণু নিষিক্তকরণ ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেয় এবং বন্ধ্যত্বের কারণ হিসেবে দেখা দেয়। এছাড়া পুরুষের ক্ষেত্রে হরমোনজনিত সমস্যা এবং জেনেটিক সমস্যাও বন্ধ্যত্বের কারণ হতে পারে।

মহিলাদের ক্ষেত্রে বন্ধ্যত্বের কারণ

ডিম্বাশয়ের ডিম্বাণু তৈরির জটিলতা মেয়েদের বন্ধ্যত্বের অন্যতম কারণ। দেখা গেছে, ২০-২৫ শতাংশ ক্ষেত্রে এই সমস্যা মেয়েদের বন্ধ্যত্বের জন্য দায়ী। এছাড়া থাইরয়েড গ্রন্থির অসুখ, পলিসিস্টিক ওভারি বা ওভারির সিস্ট, ডায়াবেটিস ইত্যাদি বন্ধ্যত্বের কারণ হতে পারে ? মেয়েদের প্রজননতন্ত্রের জন্মগত ও গঠনগত ত্রুটি, ফ্যালোপিয়ন টিউবে বাধা, এন্ড্রোমেট্রিওসিস, অধিক পরিমাণে প্রলেকটিন হরমোন তৈরি, জরায়ুর ইনফেকশন, জরায়ুর টিউমার অনুর্বরতার কারণ হিসেবে চিহ্নিত।

অতিরিক্ত ওজন ও ভুঁড়ি থাকলেও শুক্রাণুর কাউন্ট কমে যেতে পারে। ধূমপান, মদ্যপানসহ অন্যান্য নেশা সন্তান উৎপাদনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এ ছাড়া চোট আঘাত ও কিছু ওষুধ ব্যবহারেও শুক্রাণুর কাউন্ট কমে যেতে পারে। বেশি গরমে শুক্রাণুর কাউন্ট কমে যায়। কোলে ল্যাপটপ নিয়ে দীর্ঘক্ষণ কাজ করলেও শুক্রাণুর কাউন্ট কমে যেতে পারে।

পুরুষের ক্ষেত্রে সিমেন (বীর্য) পরীক্ষা অত্যন্ত জরুরি। সিমেন পরীক্ষার রিপোর্ট যদি স্বাভাবিক থাকে তাহলে স্বামীর উল্লেখযোগ্য কোনো সমস্যা নেই বলা যেতে পারে। মূলত সিমেনে উপযুক্ত পরিমাণে গতিশীল স্পার্মের অভাবই পুরুষের ক্ষেত্রে বন্ধ্যত্বের প্রধান কারণ। যদি সিমেন পরীক্ষায় ইনফেকশনের লক্ষণ থাকে তাহলে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা দরকার হয়। এছাড়া ধূমপান, অ্যালকোহল হতে বিরত থাকা, ওজন কমানো, ডায়াবেটিস এবং হাইপারটেনশন নিয়ন্ত্রণ রাখা ইত্যাদি সন্তান উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। সর্বোপরি সুস্থ জীবনযাপন বন্ধ্যত্ব চিকিৎসার জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

বীর্যে শুক্রাণুর সংখ্যা কম থাকলে ওটিও একটি উপযুক্ত পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে ডিম্বাণু নিঃসরণের সময়ে জরায়ুর ভেতরে স্বামীর বীর্য বিশেষভাবে প্রসেসিংয়ের পর সূক্ষ্ম ক্যাথেটারের মাধ্যমে দিয়ে দেয়া হয়।

তবে শুক্রাণুর সংখ্যা ৫ মিলিয়নের নিচে বা শুক্রাণুর গঠনগত ত্রুটি থাকলে বা নড়াচড়া কম থাকলে ইকসি দরকার হয়। ইকসি পদ্ধতিতে একটি ডিম্বাণুর মধ্যে একটি সুস্থ শুক্রাণু ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করিয়ে ডিম্বাণু নিষিক্ত করা হয়। যেসব পুরুষের ক্ষেত্রে বীর্যবাহী নালিতে বাধা থাকে তাদের বেলায় সার্জিক্যাল পদ্ধতির মাধ্যমে শুক্রাণু সংগ্রহ করে ইকসি করা যায়। পুরুষের বন্ধ্যত্বের ক্ষেত্রে ইকসি অত্যন্ত উন্নত ধরনের চিকিৎসা এবং এই চিকিৎসাব্যবস্থা সব সেন্টারে থাকে না।

পুরুষের ক্ষেত্রে যেমন সিমেন পরীক্ষা জরুরি, তেমনি মেয়েদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন হরমোন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ডিম্বাশয়ের জটিলতা তথা প্রতি মাসে ডিম্বাশয় হতে ডিম্বাণু নিঃসরণ হচ্ছে কিনা তা নির্ণয় করা হয়।

অত্যাধুনিক চিকিৎসার সাহায্যে ইকসি বা ইন্ট্রা-সাইটোপ্লাজমিক স্পার্ম ইঞ্জেকশন করে অতি স্বল্প সংখ্যক শুক্রাণুর সাহায্যেও সন্তান পাওয়া সম্ভব। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, অবসাদ, অ্যাংজাইটি, আঁটোসাঁটো অন্তর্বাস, অতিরিক্ত গরম ইত্যাদি কারণে শুক্রাণুর কাউন্ট কমে যায়।

শুক্রাণু উৎপাদন সংক্রান্ত সমস্যা হলে প্রথমেই এর কারণ খুজে বের করতে হবে। যদি দেখা যায় যে স্পার্ম তৈরি হচ্ছে কিন্তু কোনও বাধা থাকার জন্যে তা বেরোতে পারছে না, সেক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করে ব্লকেজ সারানো হয়। ওষুধের সাহায্যে ওলিগোস্পার্মিয়া বা স্পার্মের সংক্রমণ দূর করা যায়। কিন্তু যদি ছোটবেলায় কোনও অসুখের কারণে টেস্টিকিউলার কোষ নষ্ট হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে দাতা শুক্রাণুর সাহায্য নেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।

শুক্রাণুর সমস্যার চিকিৎসার পাশাপাশি জীবনযাপনে বদল করা জরুরি। ধূমপান ও মদ্যপানের নেশা ছাড়তে হবে। নিয়মিত শরীরচর্চা করে ওজন স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার খাওয়া উচিত।

কাজের চাপে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্বাভাবিক যৌন সম্পর্ক তৈরি না হলে সমস্যা বাড়তে থাকে। আঁটোসাঁটো অন্তর্বাস পরলে ও টানা বসে কাজ করলেও শুক্রাণু তৈরিতে অসুবিধা হতে পারে। কাজের ফাঁকে কয়েকবার উঠে হেঁটে নিতে হবে। পর্যাপ্ত পানি পান ও ঠিক সময়ে শৌচাগার যাওয়া দরকার। প্রস্রাব চেপে রাখলে সংক্রমণ ও তার থেকে শুক্রাণুর সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। মনে রাখবেন, জ্বর-সর্দি বা কোভিড সংক্রমণের মতোই বন্ধ্যত্ব একটা অসুখ, তাই মন খারাপ না করে সঠিক চিকিৎসা প্রয়োজন।

বন্ধ্যত্বকে নীরবে মেনে নেওয়ার কোন অর্থ নেই| সুস্থ‚ স্বাভাবিক জীবন যাপন আপনাকে মুক্তি দিতে পারে বন্ধ্যত্ব থেকে| দেখুনই না যোগ করে এই খাদ্যগুলো আপনার প্রতিদিনের মেনুতে। একটু স্বাভাবিক এবং স্বাস্থ্যকর জীবন যাপন করলে কিন্তু বন্ধ্যত্ব সমস্যা থেকে অনেকটাই মুক্তি পাওয়া যায়| দেখুন তো আপনার খাদ্য তালিকায় এই গুলো যোগ করতে পারেন কিনা। বন্ধ্যত্ব কেটে গিয়ে কোল আলো করে সন্তান আসতে পারে শিগগিরই।

ঢাকাটাইমস/২৯ অক্টোবর/আরজেড/এজেড)

সংবাদটি শেয়ার করুন

স্বাস্থ্য বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

বিশেষ প্রতিবেদন বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি বিনোদন খেলাধুলা
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ

দেশে নতুন করে বাড়ছে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের সংখ্যা, ঢাকা কতটা ঝুঁকিতে?

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস: জানুন মশাবাহিত এ রোগ প্রতিরোধের উপায়

গরমে স্বাস্থ্যঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি

ঔষধি গাছ থেকে তিন শতাধিক ওষুধ তৈরি হচ্ছে ইরানে

কণ্ঠের সব চিকিৎসা দেশেই রয়েছে, বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য 

এপ্রিল থেকেই ইনফ্লুয়েঞ্জা মৌসুম শুরু, মার্চের মধ্যে টিকা নেওয়ার সুপারিশ গবেষকদের

স্বাস্থ্য খাতে নতুন অশনি সংকেত অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ভাতা বাড়লো ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

বিএসএমএমইউ বহির্বিভাগ ৪ দিন বন্ধ, খোলা থাকবে ইনডোর ও জরুরি বিভাগ

তৃণমূল পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজ করতে বললেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এই বিভাগের সব খবর

শিরোনাম :